কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৬ অক্টোবর) :: বাংলাদেশের অতিগুরুত্বপূর্ণেজেলা কক্সবাজারের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে কক্সবাজারে।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই নতুন করে জানানো হচ্ছে কক্সবাজার জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র— এ নিয়ে মনোরম কক্সবাজার। নীল জলরাশি আর শোঁ শোঁ গর্জনের মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। এটি বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত।
এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কুহেলিয়া ও নাফ নদী। পর্যটন, বনজ সম্পদ, মৎস্য, শুটকি মাছ, শামুক, ঝিনুক ও সিলিকা সমৃদ্ধ বালুর জন্য কক্সবাজার বরাবরই ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
কক্সবাজারের প্রাচীন নাম ‘পালংকী’। একসময় এটি ‘প্যানোয়া’ নামে পরিচিত ছিল। প্যানোয়া শব্দের অর্থ ‘হলুদ ফুল’। অতীতে কক্সবাজারের আশপাশের এলাকা হলুদ ফুলে ঝকমক করতো।
আধুনিক কক্সবাজারের নামকরণ হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারে। তিনি এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ‘কক্স সাহেবের বাজার’ নামে পরিচিতি পায়। সেখান থেকে ‘কক্সবাজার’ নামের উৎপত্তি।
কক্সবাজার এর নামকরনের ইতিহাস যেভাবে হলো
আরব ব্যবসয়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ ৮ম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিয়াব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে।
নবম শতাব্দীতে কক্সবাজার সহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হয়। ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ হয়।
১৭৮৪ সালে রার্মারাজ বোধাপায়া আরাকান দখল করে নেয়। ১৭৯৯ সালে বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় ১৩ হাজার আরাকনি কক্সবাজার থেকে পালিয়ে যায়। এদর পূনর্বাসন করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একজন হিরাম কক্সকে নিয়োগ করে।আর কক্সাবাজারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাষিদের মাঝে জমি বিতরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে চট্টগ্রাম ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চল হতে মানুষ এই এলাকায় আসতে শুরু করে।
পূনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই হিরাম কক্স মৃত্যু বরণ করেন। পূনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাঁর অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকে কক্সবাজার নামের উৎপত্তি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাঁর অবদানের জন্য কক্সবাজোর জেলার নামের উৎপত্তি।আয়তন : ২,৪৯২ বগ কিলোমিটার।
উপজেলা সমূহ : ১.কক্সবাজার সদর, ২. উখিয়া, ৩. কুতুবদিয়া, ৪. চকোরিয়া, ৫. টেকনাফ, ৬. মহেশখালী, ৭. রামু ও ৮. পেকুয়া।
চিত্তাকার্যক ও ঐতিহাসিক স্থান :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত,মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি, ইনানী সৈকত,সেন্টমার্টিন দ্বীপ,সোনাদিয়া দ্বীপ,বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, টেকনাফ জালিয়ার দ্বীপ,রামু সীমা বিহার ও একশ ফুট সিংহ গজ্জা, শাহ ওমরের সমাধি, আদিনাথ মন্দির, মাথিন কূপ, কুতুব আউলিয়ার, সমাধি, রামকোট হিন্দু মন্দির, রামকোট বুদ্ধ কেয়াং, লামার পাড়া বুদ্ধ কেয়াং, একগম্বুজ মসজিদ।
জনসংখ্যা : ২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পুরুষ : ১২,২৬,২০০ মহিলা: ১২, ৮৯,৫৯৭ জন। মোট ২৫, ৫৭,৭৯৭ জন।
জেলার উল্লেখযোগ্য নদ-নদী : মাতামুহুরী, নাফ, বাকখালী, রেজু, কোহালিয়া, কচা নদী,ধলেশ্বরী।
প্রধান প্রধান উৎপাদিত পন্য : সামুদ্রিক মাছ, ধান,শুটকি,পান,সুপারি,চিংড়ি পোনা,লবন।
Posted ১:৫১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta