বিশেষ প্রতিবেদক(১০ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে দেড় হাজার একর বনভূমিজুড়ে একটি রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন করা হচ্ছে। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালীতে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের জমিতে শিবিরটি গড়ে তুলে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের রাখা হবে।
রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত নলকূল স্থাপন থেকে শুরু করে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ-সুবিধাদি দেওয়া হবে। সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা পল্লী নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের কেউ কুড়াল, কেউ বাঁশ আবার কেউ বা ত্রিপল নিয়ে ব্যস্ত। আবার অনেকে দা, কুড়াল, খন্তা, কোদাল নিয়ে ব্যস্ত। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ঝুপড়িঘর তথা বস্তি নির্মাণে রোহিঙ্গাদের যেন সময় নষ্ট করার ফুরসত নেই। নতুন করে সংসার পাততে সেখানে যেন চলছে এক মহাকর্মযজ্ঞ।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, শিবিরে আশ্রিতদের একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে, যাতে বলা হবে, তারা রোহিঙ্গার নাগরিক। তারা যাতে শিবির ছেড়ে বাইরে এসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি প্রহরা থাকবে।
রোহিঙ্গাদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রাদির সংকট এবং পয়োনিষ্কাশনের তেমন কোনো সুযোগ না থাকায় যত্রতত্র মলত্যাগে পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরাও এদিন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসতে পারেন বলে তথ্য রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রশাসন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কাজ শুরু করেছে রবিবার সকাল থেকে। শনিবার রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভা করা হয়।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় জরুরি সরকারি সব দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সড়ক, পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নেওয়ার। বর্তমানে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে যে কেউ এসে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে, সেখানে হুলুস্থুল কাণ্ডসহ নানা ধরনের পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা।
এখন থেকে কেউ ব্যক্তিগত বা সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিতে চাইলে সরাসরি কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে জেলা প্রশাসনের খোলা তদারক (কন্ট্রোল) রুমে গিয়ে করে সংশ্লিষ্টদের কাছে ত্রাণ জমা দিতে হবে। পরে এসব ত্রাণ যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী এলাকায় সংরক্ষিত বনের এক হাজার ৫০০ একর জায়গায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি এই জায়গায় তাদের সংকুলান হয়ে যাবে। রাস্তাঘাটে যেভাবে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে, তাতে সব পক্ষের দুর্ভোগ বেশি বেড়েছে।
তাদের সরানোর কাজ সম্পন্ন হলে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কটিও উন্মুক্ত হয়ে যাবে এবং যানবাহন চলাচলে আর সমস্যা দেখা দেবে না। এই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা বর্তমানে উখিয়ায় অবস্থান করছেন। ’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নতুন এই রোহিঙ্গা শিবির তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে থাকবে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা।
Posted ৩:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta