কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩ জানুয়ারী) :: পর্যটন শিল্পের বিকাশে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০৯ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যমান রানওয়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সক্ষমতাও বাড়ানো হয়।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বড় পরিসরের উড়োজাহাজ দিয়ে বিমানবন্দরটিতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। কিন্তু টার্মিনাল ভবনের আধুনিকায়ন না হওয়ায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী হ্যান্ডলিংয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা থেকে দৈনিক নয়টি ফ্লাইট কক্সবাজারে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ দৈনিক দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এ তিন এয়ারলাইনস ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করছে ১৬৪ আসনের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ দিয়ে। এছাড়া নভোএয়ার ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে দৈনিক তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ৬৮ আসনের এটিআর-৭২ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করছে এয়ারলাইনসটি। প্রতিটি এয়ারলাইনসেরই আবার কক্সবাজার থেকে ঢাকায় সমানসংখ্যক ফিরতি ফ্লাইট রয়েছে।
সে হিসেবে দৈনিক ২ হাজার ১৭২ জন যাত্রী কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবহার করছে, যা বিমানবন্দরটির টার্মিনাল ভবনের সক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি। এতে প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহান্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, অভ্যন্তরীণ এ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করতে কাজ চলছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরটিতে বড় উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ করতে পারছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে।
তবে টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণ না হওয়ায় পিক আওয়ারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী হ্যান্ডলিং করতে হচ্ছে।
এতে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণসহ বিমানবন্দর উন্নয়নের বিভিন্ন কাজ চলছে। আশা করা যায়, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী ফ্লাইটগুলোর প্রতিটিই পূর্ণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। পর্যটনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা কক্সবাজার যাচ্ছেন।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার বেশকিছু বড় প্রকল্প কক্সবাজার জেলায় চলমান থাকায় এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও প্রতিনিয়ত কক্সবাজার সফর করছেন। সড়কপথে সময় বেশি লাগায় বিকল্প হিসেবে আকাশপথেই যাচ্ছেন তারা।
কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রসঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইনস সংস্থা নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের সক্ষমতা বাড়ানো হলেও সে অনুযায়ী বানানো হয়নি টারমার্ক।
এ কারণে বোয়িং ৭৩৭-এর মতো বড় উড়োজাহাজ অবতরণ করলে যাত্রী ও লাগেজ নামানো এবং ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রী ও লাগেজ ওঠানোর পর উড়োজাহাজটির উড্ডয়ন পর্যন্ত বিমানবন্দরের অন্য সব ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হয়, যা আসলে কাম্য নয়।
আবার টার্মিনালটির পরিসর এতই অল্প যে, দুটি কাছাকাছি ফ্লাইটের যাত্রীদের বোর্ডিং পাস দেয়ার স্থানসংকুলান হয় না। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পাস হয় ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পটি।
রানওয়ে সম্প্রসারণের পাশাপাশি কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দূরত্ব পরিমাপক সরঞ্জাম, ডপলার ওমনি ডিরেকশন রেঞ্জ, অগ্নিনির্বাপক যান ক্রয় ও রানওয়ের ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ অবতরণ ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় মেটিওরোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আধুনিক টার্মিনাল ভবন, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন, বোর্ডিং ব্রিজসহ লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে পিক আওয়ারে একসঙ্গে ৮-১০টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করতে পারবে।
Posted ৩:২৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta