বিশেষ প্রতিবেদক :: বিশ্বের বৃহত্তম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
বুধবার (১২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ সদস্যর প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পে আসে। এ সময় তারা ক্যাম্প-৯, ১১ ও ১৮ পরিদর্শন করেন এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার সেন্টারসহ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন।
আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় অন্তত ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বৈঠকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাঁদের ওপর চালানো গণহত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বর্ণনা দেন। পাশাপাশি নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১১) একটি কমিউনিটি সেন্টারে অন্তত ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সঙ্গে বৈঠক করেন উজরা জেয়া। উপস্থিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১২ জন আশ্রয়শিবিরের ভেতরে গড়ে তোলা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক। এ সময় রোহিঙ্গা নারী ছিলেন সাতজন।
বৈঠকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) একাংশের চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবাইর উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উজরা জেয়া রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করে বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য আর কিছুদিন ধৈর্য ধারণ করুন।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন উজরা জেয়া। পাশাপাশি তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
তার সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর।
বুধবার (১২ জুলাই) বেলা পৌনে ১১টার দিকে উখিয়ার ৯ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছায় জেয়া ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী গাড়িবহর।
সেখানে পৌঁছেই প্রথমে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন তারা।
পরবর্তীতে তাদের ক্যাম্প এলাকায় জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এছাড়া, কমিউনিটি নেতা, ইমাম, যুবকসহ রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন উজরা জেয়া ও তার সফরসঙ্গীরা।
ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শনের পর কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে একটি বৈঠক অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের এই প্রতিনিধি দল।
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সফরকারী মার্কিন প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণ এবং প্রত্যাবাসন নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণ সম্পর্কে আমরা বলেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য কমিয়ে দেয়ায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি রোহিঙ্গাদের খাবার সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে ক্ষুধার যন্ত্রণায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য অর্থ সহায়তা বাড়িয়ে দিতে বলেছি। পাশাপাশি প্রত্যাবাসন সম্পর্কে আগে যা বলেছি এখনও তাই বলছি। জবাবে মার্কিন প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
এই সফর ঘিরে ক্যাম্প এলাকাজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারিসহ জোরদার করা হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা।
প্রতিটি ক্যাম্পের প্রবেশমুখে চলে তল্লাশি, সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
কক্সবাজার সফরে তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
প্রসঙ্গত.চার দিনের সফরে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
Posted ৪:৫২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta