শাহিদ মোস্তফা শাহিদ,সদর(৯ জানুয়ারি) :: কক্সবাজার সদরের আনাছে কানাছে গড়ে উঠেছে প্রায় ৭০টির অধিক ছোটবড় কেজি স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের উপর স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা কৌশলে চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত নিয়ম নীতিতে নুজ্য হয়ে পড়েছে।
এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যক্তি স্বঘোষিত স্কুল প্রধান অধ্যক্ষ বা প্রিন্সিপাল সেজে এসব প্রতিষ্ঠান খুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আবার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নেমে আসছে বর্বরোচিত নির্যাতন। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারের সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন।
এলাকার বিভিন্ন সূত্র জানা গেছে, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে সদরের ইসলামপুরে ৩টি, ইসলামাবাদে ৩টি, পোকখালীতে ২টি, জালালাবাদে ৩টি, চৌফলদন্ডীতে ৩টি, ঈদগাঁওতে ৩টি, খুরুশকুলে ২টি, পিএমখালীতে ২টি, ঝিলংজায় ৩টিসহ প্রায় ৭০টির অধিক কেজি স্কুল, কিন্ডার গার্টেন নামের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এসব কেজি স্কুল কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার কথা বলে গড়ে তোলা হয়েছে।
এক শ্রেণীর স্ব স্ব এলাকার শিক্ষিত বেকার ও অর্ধ শিক্ষিত যুবকরা অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। শিক্ষার কথা বললেও মূলত তারা এসবকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারী কোন নিয়মনীতি মেনে চলা হয়নি। নেই কোন স্কুল পরিচালনা পরিষদ ও ম্যানেজিং কমিটি।
যে কয়েকটিতে রয়েছে তারাও মুনাফালোভী বলে জানা গেছে। যে কোন স্থানে একটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চলছে এসব স্কুল নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এসব কেজি স্কুলে শিক্ষিত বেকার বা অধ্যয়নরত কলেজ, মাদ্রাসা পড়–য়া মেয়েদের নামে মাত্র বেতনে নিয়োগ দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয়।
প্রথমদিকে সদরসহ ঈদগাঁওতে হাতে গোনা দুয়েকটি কেজি স্কুল গড়ে উঠলেও বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আনাছে কানাছে ব্যাঙের ছাতার মত গজে উঠেছে এসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ কেজি স্কুলের মালিক নিজেই অধ্যক্ষ বা প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারণ করেন ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন। অধিকাংশ স্কুলের নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়।
এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পোষাক, টাই, জুতা, খাতা-কলম, বই কিনতে নিজ নিজ স্কুলের নির্দিষ্ট করা দোকান বা লাইব্রেরী থেকে। পরে ঐসব দোকান থেকে মোটা অংকের টাকা কমিশন হিসাবে দেওয়া হয় স্কুল মালিক বা প্রধানকে।
খরুলিয়া প্রি-ক্যাডেট স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগের সুরে জানান, এ যেন মগের মুল্লুক। গলা কেটে ফি নিয়ে ইচ্ছামত চালানো হচ্ছে।
নাপিতখালী এসকে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বাচ্চাদের কথা ভেবে ভয়ে নিরবে অনেকে অভিযোগ করেন না। করলেও কোন লাভ হয় না।
কিন্ডার গার্টেন কেজি স্কুলের বেতন নিয়ে কথা বলতে পোকখালী আইডিয়াল স্কুলের এক ছাত্রের মা রোকেয়া বেগম জানান, কলেজের বেতন যেখানে ১শ থেকে ২শ টাকা সেখানে প্লে নার্সারীর বেতন ৩শ থেকে ৫শ টাকা হয় কিভাবে? তাছাড়া বিভিন্ন খাতের কথা বলেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়।
পিএমখালী আইডিয়াল স্কুলের এক অভিভাবক সুলতানুল করিম জানান, শুধু প্রকাশনী সংস্থার কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশনের জন্য বাচ্চাদের উপর জটিল বই নির্ধারণ করা হয়। মূলত কিছু কিছু মুনাফালোভী ব্যক্তির কারণে এসব প্রতিষ্ঠান গলাকাটা বাণিজ্যে নেমেছে। এছাড়া সরকারী কোন নিয়মনীতি না থাকায় ইচ্ছেমত বেতন ফি আদায করছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ মমতাজুল ইসলাম বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক ও ¯œাতক শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিজেকে অধ্যক্ষ বা প্রিন্সিপাল লিখতে পারেন। এইচএসসি বা ডিগ্রী পাশ অনেক কেজি স্কুলের প্রধান নিজেকে প্রিন্সিপাল হিসেবে পরিচয় দেন। এটা তার বোধগম্য নয়। তার পদবী হবে প্রধান শিক্ষক।
তারা টাকার জন্য পদ-পদবী ও কৌশলে পরিবর্তন করেছেন। জানতে চাইলে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দীন জানান, সরকারী কোন নিয়মনীতি না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান অর্থ আদায় করছে।
বিষয়টি নিয়ে সরকারী নীতি নির্ধারকরা দিক নির্দেশনা দিলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
Posted ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta