বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সিগাল পয়েন্টের ঝাউবাগানে এক পর্যটককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।নিহত ব্যক্তির নাম গোলাম রব্বানী (৫৫)। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এবং দৌলত পুরের দেয়ানা উত্তর পাড়ার বাসিন্দা মো. গোলাম আকবরের পুত্র।তিনি খুলনার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বলেও জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান। ওসি বলেন, ‘ঘটনার পর পরই পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান শুরু করেছে দুর্বৃত্তকে ধরতে।’এদিকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র্যাব-১৫ বৃহস্পতিবার রাতে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে ।আটককৃত ব্যক্তি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালু।
বৃহস্পতিবার রাতে সাগর পাড়ের হোটেল মোটেল জোনের গোল্ডেন হিল নামে একটি হোটেল থেকে তাকে আটকের কথা নিশ্চিত করে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন।তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত চলছে। তিনি জানান, ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন হিসেবে নাম আসে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালুর। খুব শীঘ্রই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
হোটেল গোল্ডেন হিলের ম্যানেজার মোহাম্মদ শফিক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে গোলাম রব্বানী টিপুসহ তিনজন মিলে হোটেলে আসেন। তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন নারী।হোটেল রেজিস্ট্রারে রব্বানী, ইফতেখার ও রুমি (২৭) নামের এক নারীর নাম এন্ট্রি করা হয়।হোটেলটির দুই কক্ষ বিশিষ্ট ৭০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে উঠেন গোলাম রব্বানী। ফ্ল্যাটটির একটি কক্ষে গোলাম রব্বানী এবং অপর কক্ষে দুইজন অবস্থান করছিলেন। সন্ধ্যার পর গোলাম রব্বানী টিপু হোটেল থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি।
র্যাব জানিয়েছে, রুমি নামের ওই নারী পালিয়ে গেছেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ড সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বড় প্রশ্ন তুলেছে। এলাকাবাসী ও পর্যটকদের মধ্যে এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতেই সৈকতে পর্যটক খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর পরই ভয়ে পর্যটকরা হোটেল ছেড়ে দিয়ে কক্সবাজার শহর ছাড়তে শুরু করেছেন।অনেক পর্যটক নিরাপত্তার অভাবে রাতেই হোটেলের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার সৈকতের অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝাউবিথী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত ছিনতাই, রাহজানি সৈকতে লেগে থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতার কারণে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
অপরদিকে এ হত্যাকান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
রাসেদুল ইসলাম লিখেছেন “একজন লেখেন কক্সবাজার শহরের প্রায় সর্বত্র চলছে ছিনতাই , খুন ও রাহাজানি।পৌরসভার স্ট্রীট লাইটগুলা কাজ করছে না ঠিকমতো অধিকাংশ জায়গায়। দেখার কেউ নেই, সন্ধ্যা হলেই অধিকাংশ এলাকায় নেমে আসে অন্ধকার।আর শহরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত অধিকাংশ জায়গায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অনেকটা প্রকাশ্যে।শহরের বায়তুশ শরফ এলাকায় অধিকাংশ সড়ক বাতি জ্বলে না। যোগাযোগ করেছিলাম পৌরসভার এক্সিকিউটিভ ইন্জিনিয়ারের সাথে, তিনি সরাসরি অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন। বললেন চেষ্টা করছি দ্রুত কিছু করার জন্য।আগের দিন রাতে ছিনতাই হয় আমার পাশের গলিতে,আজ একটি ভিডিও দেখলাম লালদিঘির পূর্ব পাশে শেখ রাসেল সড়কে ছিনতাই করতে। আজ সমুদ্র সৈকতে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হলো।দুদিন আগে লাশ পাওয়া গেল শিশু আহাদের তাহলে এই শহরে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কার, আমরা কার কাছে যাবো। নাকি আপাতত রাষ্ট্র সংস্কারের নামে এভাবেই চলবে।”
তারেক রহমান লিখেছেন “এই অঞ্চল কি তবে অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে? আইনশৃঙ্খলা কি শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আলো দেখাবে?”
অরেকজন লেখেন “কক্সবাজার জেলার প্রশাসন করে কি? দায়িত্ব পালন করতে না পারলে রিজাইন দিয়ে চলে যান।”
আসাদ বিন ইসলাম লিখেছেন “কক্সবাজার অনিরাপদ শহর হয়ে গেছে,এবার সমুদ্র সৈকত সিগাল পয়েন্টে এক ব্যক্তি কে গুলি করে হত্যা!”
ইসকান্দার মিজান লিখেছেন “ সমুদ্র সৈকত এলাকার মত একটি পর্যটন এরিয়াতে একজন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা পর্যটন শিল্পের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়বে ।”
অরুপ শর্মা লিখেছেন “জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি।”
মো: মনসুর আলম লেখেন “ কক্সবাজার জেলার প্রশাসন করে কি? দায়িত্ব পালন করতে না পারলে রিজাইন দিয়ে চলে যান ।”জাভেদ উল্লাহ মিঞা লিখেছেন “যৌথ বাহিনীর অভিযান ও ক্রস ফায়ার চালু দরকার।আমাদের শহর আজ অসহায়।”
আজীজ সিকদার লিখেছেন “কক্সবাজার সৈকতে খুলনার সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামিলীগ নেতা গোলাম রাব্বানী টিপু কে গু’লি করে হ’ত্যা। কক্সবাজার জেলা জুড়ে চরম আইনশৃঙ্খলার অবনতি ।”
এডভোকেট বিমল কান্তি দে লিখেছেন “ কক্সবাজার আগে এতো খারাপ পরিস্থিতি ছিল না। সংঘবদ্ধ গণধর্ষণ, শিশু হত্যা,সাগর পাড়ে পর্যটক হত্যা করে নরপশু বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? ”
জাহাঙ্গির আলম সিদ্দিকী লিখেছেন “বাংলাদেশের অপরাধ জগৎ এর ইয়াবা মাফিয়া ডন গুলো এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিরাপদ স্থান হিসেবে বেঁচে নিয়েছে, অপরাধ’র স্বর্গপুরী পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে!!”
Posted ২:২৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta