বিশেষ প্রতিবেদক(২২ জুন) :: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঝাউগাছ নিধন থামছেই না। রাতের বেলা গাছ কাটার পর দিনে শেকড়সহ গোড়া উপড়ে ফেলা হয় যাতে গাছ কাটার কোনো চিহ্ন না থাকে। সমুদ্রসৈকতের সমিতিপাড়া এলাকার ঝাউবাগানে গাছ কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে। ঝাউবাগান উজাড়ের পর বিরানভুমিতে তৈরি হচ্ছে বসতবাড়ি। কিন্তু এ ব্যাপারে বনবিভাগের নজরদারি নেই।
সৈকতে সমিতিপাড়ার ঝাউবাগানে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজন বড় বড় ঝাউগাছের গোড়া বালু থেকে তুলে নিচ্ছেন। কারণ জানতে চাইলে রমজান আলী নামের একজন বললেন, বিক্রির জন্যই তিনি গাছটি শেকড়সহ উপড়ে ফেলছেন। আগের রাতেই লোকজন গাছটি কেটে নিয়েছে। ঘরবাড়ি তৈরির খুঁটি, মাছ ধরার নৌকা তৈরির জন্য প্রতিটা ঝাউগাছ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায়।
সৈকতের নাজিরারটেক, পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়া, মোস্তাইক্যাপাড়া, নাজিরারটেক, ডায়াবেটিক্স হাসপাতাল পয়েন্টের ঝাউবাগানেও গাছ কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় ঝাউবাগান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বনকর্মীদের দেখা মেলেনি। গাছ কাটার পর চিহ্ন মুছে ফেলতে গাছের গোড়াগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, গত পাঁচ দিনে অন্তত দুই শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ’ সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল দাশগুপ্ত বলেন, নাজিরারটেক থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সৈকতের বালিয়াড়িতে তিন বছর আগেও দশ লাখের মতো ঝাউগাছ ছিল। এখন দুই-তিন লাখ গাছও নেই। সমুদ্রের জোয়ারের ধাক্কায় কিছু গাছ বিলীন হলেও বাকি গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
সমিতিপাড়ার ঝাউবাগানে দেখা গেছে ২০ টির বেশি গাছের শুধু গোড়া রয়েছে। গাছগুলো রাতেই কাটা হয়েছিল। কয়েকজন নারী-পুরুষ গাছের মূল তুলে নিতে কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ছেন।
ঝাউবাগান তদারকির দায়িত্বে থাকা কস্তুরাঘাট বনবিট কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া বলেন, ঝাউগাছ কাটার দায়ে এ পর্যন্ত ১২৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক ২৫ টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গাছ কাটার সঙ্গে বনকর্মীদের যোগসাজশ প্রসঙ্গে মো. সেলিম মিয়া বলেন, কয়েক মাস আগে গাছ কাটার দায়ে বনবিভাগের পর্যেবেক্ষক মোস্তাক আহমদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন দায়িত্বরত সেলিমের বিরুদ্ধে গাছ কাটার প্রমাণ পেলে তাঁকেও অপসারণ করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, সাগর পাড়ের ঝাউগাছ না থাকলে ঘূর্ণিঝড়ের সময় ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাবে। তখন ঝুঁকিতে পড়বে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও। বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশেই কয়েক শ গজের মধ্যে ঝাউবাগানের অবস্থান।
Posted ৫:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta