মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া(১২ আগস্ট) :: কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিকদের চলাফেরা, আয়ের উৎস্যসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার উপর সরকারের কোন নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। বেপরোয়া জীবন যাপনে অব্যস্থ এই রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই জড়িয়ে পড়েছে চোরাচালান, মাদক ও মানবপাচারসহ অসামাজিক কর্মকান্ডে।
দেশের নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সামাজিক পরিচিতি বা অবস্থার কোন পার্থক্য না থাকায় জীবনযাপনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে দাবী করে রোহিঙ্গাদের বস্তি এলাকায় কাঁটাতার বা গন্ডির ভেতরে নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবী উঠেছে।
১৯৯১ সালে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। জেলা প্রশাসন এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য, মানবিক সেবা দিয়ে উখিয়া-টেকনাফ ও রামু বিভিন্ন স্থানে শরণার্থী মর্যাদা দিয়ে আশ্রয় দিয়ে আসছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশও মিয়ানমার কূটনীতিক তৎপরতায় মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলে শুরু হয় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। এসময় কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমারে চলে যাওয়ার এক পর্যায়ে ২০০৪ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এসময় উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে ১১ হাজার ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে ৩১ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে যায়। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের বর্তমানেও খাদ্য ও মানবিক সেবা দিচ্ছে।
২০১০ সালে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সীমান্তের নাফনদী অতিক্রম করে প্রায় অর্ধ লক্ষ রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং ও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফের লেদা ও মুছনিতে আশ্রয় নেয়। এসময় দায়িত্বশীল তৎকালীন জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী বিজিবি, পুলিশ ও বনকর্মীদের সহযোগীতায় অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হয়।
পরে জেলা প্রশাসক এসব রোহিঙ্গাদের কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করার জন্য স্থানীয় এনজিও গুলোর প্রতি নিদের্শ প্রদান করেন। জীবন জীবিকার তাগিদে এসব রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্ম ও অপরাধ প্রবণতায়।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরে এসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দেন কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প স্থানান্তর করার জন্য। ফলশ্রুতিতে হাতিয়ার ঠেঙ্গারচর, বদনার চর ও জাগলার চরে প্রায় ৫০০ একর জমি ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়। অজ্ঞাত কারণ বশত: রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় এসব রোহিঙ্গারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
ককসবাজার থেকে প্রকাশিত আলোকিত উখিয়ার সম্পাদক মিজান উর রশীদ বলেন, রোহিঙ্গা বস্তি থেকে মাদকের বিস্তৃত হচ্ছে। রোহিঙ্গা যুবতীদের অসামাজিক কর্মকান্ড গ্রামগঞ্জে প্রভাব পড়েছে, বেড়েছে অনৈতিকতা। সম্প্রসারিত হয়েছে হিংস্রতা।
তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন এসব রোহিঙ্গাদের চলাফেলার উপর কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা যেকোন অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়ন্ত্রণে রাখা হলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা স্বাভাবিক জীবন যাপনে সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে। তাই এদের কাটাঁতারের বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
কুতুপালং গ্রামের বাসিন্দা আ’লীগ নেতা নুরুল হক জানান, এসব রোহিঙ্গারা গ্রামের মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে পুরো উখিয়া উপজেলার নাগরিক জীবনে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এসব রোহিঙ্গাদের সীমাবদ্ধতার গন্ডিতে আবদ্ধ রেখে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারী রাখা প্রয়োজন বলে তিনি দাবী করেন।
উপজেলা বন রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, এসব রোহিঙ্গাদের সরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তাদের খেয়াল খুশি মত বনভূমি জবর দখল করে রাতারাতি স্থাপনা তৈরি করছে।
Posted ৭:২৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta