এম শাহজাহান চৌধূরী শাহীন(৩০ আগস্ট) :: বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে আলাদা করেছে নাফনদী আর স্থল ভাগে কাটা তারের বেঁড়া। এপারে বিজিবির কড়া পাহারা। ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অমানবিক নির্যাতন।
আর সীমান্ত এলাকায় হাজার হাজার রোহিঙ্গার আর্তনাদ। নারী ও শিশুদের এদিক-ওদিক ছোটাছুটি। বাড়িঘর, সহায়-সম্বল সব হারিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসে তারা। স্বজন হারানো রোহিঙ্গাদের মাঝে শংকা।
সুযোগ বুঝে কক্সবাজার লোকালয়ে মুল জনস্রোতে মিশে যাচেছ রোহিঙ্গারা।সীমান্তে অন্তত পনেরটি অরক্ষিত পয়েন্টের সবখানেই একই চিত্র।
বুধবার সীমান্তের রেজু আমতলী গিয়ে দেখা যায়,শত শত রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে টমটম গাড়ী যোগে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে ঢুকে পড়ছে। ওই সীমান্ত এলাকা পরিদশর্ন কালে কোন বিজিবি সদস্যদের দেখা যায়নি। বাধা হীন ভাবে রোহিঙ্গারা তাদের গন্তব্য স্হলে চলে যাচ্ছে ।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এর কক্সবাজারের প্রোগাম অফিসার সৈকত বিশ্বাস জানান গত কয়েক দিনে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে ঢুকে পড়েছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লায়লা বেগম (৬০), মনিরা খাতুন (৪৫) সহ অনেকে জানান, শান্ত হয়নি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের মংডু ঢেকিবনিয়া সহ আশপাশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ হারিয়েছে বাবা মা, ভাই বোন।
রোহিঙ্গারা বিজিবি’র পাহারায় পলিথিনের ছাউনির নিচে জটলা বেঁধে বসে আছে, চোখে মুখে বিষন্নতা আর স্বজন হারানোর বেদনা। ছোট ছোট স্থাপনা তৈরী করেই তাদের বেচে থাকার যুদ্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন আগে বিজিবির মহাপরিচালক জেনারেল আবুল হোসেন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যরা কড়া নজরদারি করছে। এরপরেও অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ১০৯৭ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং ও উলুবনিয়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এদের ফেরত পাঠানো হয়। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগীতার অভিযোগে দুই দালালকে আটক করে পুলিশ। এক দালালকে ভ্রাম্যমান আদালত সাজাও দিয়েছেন। এরপরও অনুপ্রবেশ ও দালাল তৎপরতা থেমে নেই।
উখিয়া বালুখালী বস্তির লালু মাঝি জানান মঙ্গলবার পযর্ন্ত ১হাজার ৩ শ ৮৫ পরিবার ঢুকে পড়েছে।
উখিয়া কুতুপালং এলাকার জনপ্রতিনিধি বখতিয়ার আহমেদ বলেন, দিনে নাফনদীর পাড়ে অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গারা রাতে আধারে ডুকে পড়ছে বাংলাদেশে। সীমান্তের অরক্ষিত অংশকে বেচে নিচ্ছে দালালরা। দালাল চক্র টাকা হাতিয়ে নিয়ে অনুপ্রবেশে সহযোগীতা দিচ্ছে। তার পর সুযোগ বুঝে লোকালয়ে মুল জনস্রোতে মিশে যাচেছ। এ পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। কেউ কেউ ডুকে পড়েছে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে। আরো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে।
রোহিঙ্গা কিশোরী আনোয়ারা খাতুন বলেন, অনুপ্রবেশের পর তাদের একমাত্র দুশ্চিন্তা তারা জন্ম ভুমিতে ফিরে যেতে পারবেতু ? খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে তার মতো শতশত রোহিঙ্গারা ।
তিনি বলেন, আমি হয়তু জানিনা, আমাদেও মতো উদ্ধাস্তুদের শেষ গন্তব্য কোথায়। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতি সংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এসব মানুষগুলো।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মঞ্জুরুল হাসান খান জানান,সীমান্তের পরিস্তিতি শান্ত রয়েছে।তবে ‘সীমান্ত দিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জোরদার করা হয়েছে টহল।সীমান্তে সর্বদা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। গত দুই দিনে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ১ হাজার ৫৯৭ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
Posted ৫:৩৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta