কক্সবাংলা ডটকম(৭ মে) :: আসছে ২৫শে বৈশাখ। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ রবি ঠাকুর।
আজ থেকে ঠিক ১৬০ বছর আগে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইংরাজি ক্যালেন্ডার মতে তাঁর জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ই মে, তবে বাংলা মতে তিনি ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ জন্মগ্রহণ করেন। কবিগুরু এমন এক মানুষ, যাঁর হাত ধরে তৈরি হয়েছে নতুন এক অধ্যায়ের।তিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং শিল্পকলাতে নবজাগরণ ঘটিয়ে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সৃষ্টি করা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস সমূহ মানুষকে আজও আকর্ষিত করে।
এককথায় বলা যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ আমাদের মনে ও চিন্তাভাবনায় বিরাজ করেন সর্বদা। রবি ঠাকুর বাংলা সাহিত্য, তৎকালীন সমাজ থেকে শুরু করে বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন সাহিত্যচর্চার জোরে।
সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তাঁর হাতের শৈল্পিক স্পর্শ পড়েনি। তাঁর অমর সৃষ্টিগুলি রচনা হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। তাঁর ছোঁয়ায় বাংলা সাহিত্য ভান্ডার হয়েছে পরিপূর্ণ। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ তিনি পরলোকে গমন করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাই, তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করা হয়। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলী’-এর জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি জগতের মানুষের মনে নতুন চেতনার উদ্ভব ঘটিয়েছিল। মানুষ শিক্ষালাভ করে তাঁর অমর সৃষ্টিগুলি থেকে। তাঁর বাণী বা উক্তিগুলি মানুষের বাস্তবিক জীবনকে আজও পরিচালিত করে।
কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে দেখে নেওয়া যাক তাঁর কালজয়ী ও হৃদয়স্পর্শী কিছু বাণী।
১) “মানুষের মধ্যে দ্বিজত্ব আছে; মানুষ একবার জন্মায় গর্ভের মধ্যে, আবার জন্মায় মুক্ত পৃথিবীতে…মানুষের এক জন্ম আপনাকে নিয়ে, আর এক জন্ম সকলকে নিয়ে।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২) “মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩) “যার সঙ্গে মানুষের লোভের সম্বন্ধ তার কাছ থেকে মানুষ প্রয়োজন উদ্ধার করে, কিন্তু কখনও তাকে সম্মান করে না।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত ‘নাইটহুড’ উপাধি ত্যাগ করেন? জেনে নিন এর নেপথ্য কাহিনী
৪) “আমার এই আমির মধ্যে যদি ব্যর্থতা থাকে তবে অন্য কোনও আমিত্ব লাভ করিয়া তাহা হইতে নিষ্কৃতি পাইব না।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৫) “অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মতো বিড়ম্বনা আর হয় না।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৬) “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৭) “সংসারে সাধু-অসাধুর মধ্যে প্রভেদ এই যে, সাধুরা কপট আর অসাধুরা অকপট।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৮) “অক্ষমের লোভ আলাদিনের প্রদীপের গুজব শুনলেই লাফিয়া ওঠে।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৯) “যে ধর্মের নামে বিদ্বেষ সঞ্চিত করে, ঈশ্বরের অর্ঘ্য হতে সে হয় বঞ্চিত।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১০) “প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১১) “নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১২) “আনন্দকে ভাগ করলে দুটি জিনিস পাওয়া যায় – একটি হচ্ছে জ্ঞান, অন্যটি হচ্ছে প্রেম।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৩) “ভুল করার সকল দরজা যদি বন্ধ করে দাও, তা হলে ঠিক করার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৪) “নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থ অনুবাদ করার জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কারে সন্মানিত হন।
আসুন জেনে নেওয়া যাক এ সম্পর্কে কিছু তথ্য –
১) ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর লেখা ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ, ইংরেজি তর্জমায় যার নাম ‘সংস অফারিংস’, এর দৌলতেই এ দেশ দেখেছিল প্রথম নোবেল পুরস্কারের মুখ। কোনও অ-ইউরোপীয় হিসেবে তিনিই প্রথম নোবেল প্রাপক।
২) মোট ১৫৭ টি গীতিকবিতা সংকলিত ‘গীতাঞ্জলি’ বিশ্বের দিকে দিকে প্রশংসিত হয়েছে। ১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয়৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই গীতাঞ্জলি-র কবিতা ও গানগুলি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করার কাজ শুরু করেছিলেন। মূল বাংলা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ৫৩টি গান সং অফারিংস সংকলনে প্রকাশিত হয়।
৩) কবিগুরুর এই সৃষ্টি শুরু হয়েছিল ১৯০৮ সালে৷ গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কবিতা ও গানগুলি শিলাইদহ, শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় রচিত হয়। Interesting facts about rabindranath tagores nobel prize
৪) জানা যায়, ব্রিটিশ লেখক এবং রয়্যাল সোসাইটির সদস্য স্টার্জ মুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন দেন।
৫) ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ, এই দিনটি বাংলা ও বাঙালীর কাছে একটি কালো দিন হিসেবে পরিচিত৷ এই দিন সকালে জানা যায়, বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা থেকে নোবেল পদক চুরি গিয়েছে। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বহু তদন্ত করেও তার কিনারা করা যায়নি।
Posted ৬:৪২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ মে ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta