কক্সবাংলা ডটকম(৩ জানুয়ারি) :: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও ভোট অনুষ্ঠানের সময়কাল সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সর্বশেষ তিনি বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অথবা আগামী বছরের প্রথমার্ধে ভোট হতে পারে।
সরকার ঘোষিত এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেই প্রস্তুতির প্রধান কাজ ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, নতুন ভোটার লিপিবদ্ধ করার কাজ অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কাজ শুরু হবে ২০ জানুয়ারি থেকে।
৩০ জুনের মধ্যেই এটি শেষ হবে। অর্থাৎ জুনের মধ্যেই হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল চাইছে, চলতি বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।
কিন্তু এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা বেশ জটিল হতে পারে।
আইন অনুযায়ী, ভোটের তিন মাস আগে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। অর্থাৎ, জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে এপ্রিলের মধ্যে তফসিল দিতে হবে।
যদিও নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য- সরকার যখন চাইবে, তখনই ভোটগ্রহণের জন্য তারা প্রস্তুত।
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি অনুযায়ী, জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হলে হালনাগাদ ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। তবে এটি অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে ভোটানুষ্ঠানের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বিবেচনায় রাখতে হয়। এমন নানা সমীকরণ সামনে রেখে প্রশ্ন জেগেছে- কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে?
ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ২ জানুয়ারি আগের বছরের তথ্য নিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে ইসি। তালিকা নিয়ে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি
শেষে ২ মার্চ প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা। এবারও তাই প্রকাশ করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হলে ভোটার তালিকার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বিবেচনায় রাখতে হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে, যা এখনও ঠিক হয়নি। তাই জুনের মধ্যে নির্বাচন করা সরকারের জন্য কঠিন ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের এই ঘোষণা দেখে অনেক রাজনৈতিক দলের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াস সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দিচ্ছে সরকার। বিএনপি এরই মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা করার বিপক্ষে মত দিয়েছে।
তবে নির্বাচন কমিশন তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেই এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মনে হচ্ছে, নির্বাচন বিলম্বিত করার পথে হাঁটছে সরকার।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, ১/১১ সরকারের সময় নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুসারে ৮ মাসের মধ্যে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে তৎকালীন সরকার বিশ^বাসীকে তাক লাগিয়েছিল। তখন কাজটি করা সম্ভব হয়েছিল সেনাবাহিনীর সহায়তায়।
এবারও যদি ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়; তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজটা করা সম্ভব।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করণের কাজটা নির্বাচনকে বিলম্বিত করার প্রয়াস বলে মনে করেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিশ্লেষক বলেন, যারা রাজনীতি করেন তারা এমন গন্ধ আবিষ্কার করবেন, সেটাই স্বাভাবিক।
সুতরাং জেনে-শুনে সেই অস্ত্র কেন তাদের হাতে তুলে দেবে অন্তর্বর্তী সরকার? তাদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন সুসম্পন্ন করা।
যে নির্বাচনের প্রত্যাশা গত ১৬ বছর ধরে করছে এ দেশের মানুষ। সরকারের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের কাজ শেষ করে বাড়ি চলে যাওয়া; সেটাই হবে তাদের জন্য সম্মানজনক। নয়তো যতদিন যাবে, মানুষ ততই অধৈর্য হয়ে পড়বে। পুরো পরিবেশ পরিস্থতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, যেটা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্য হবে।
হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আইন অনুযায়ী চলতি বছর হালনাগাদের যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তা অন্তর্ভুক্ত করে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি। আর চূড়ান্ত তালিকা হবে আগামী বছরের ২ মার্চ।
তিনি বলেন, যদি এর আগে জাতীয় নির্বাচন হয়, প্রয়োজন হলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ডিসেম্বরের শেষে যদি সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে আপনারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাদের ভোটার করছেন, তারা ভোট দিতে পারবেন কিনা এবং আইন সংশোধন করে তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নে ইসি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন যে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন উনি আশা করছেন।
আমাদের নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এর জন্য সবসময় প্রস্তুত। ভোটার তালিকা প্রণয়ন করাও এক ধরনের প্রস্তুতি। আমাদের এ ভোটার তালিকাকে সন্নিবেশ করতে আইনি কোনো জটিলতা নেই। তফসিল ঘোষণার আগে একটা তালিকা প্রকাশ হবে, সেই তালিকায় আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত করব।
আইনে হালনাগাদের বাইরে ইসিকে যে কোনো সময় ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষমতাও দেওয়া আছে। কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়কাল ছাড়া অন্য যে কোনো সময় প্রয়োজনে তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপি গঠিত নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সত্যিকার অর্থে একটি সঠিক ভোটার তালিকা চান তারা।
কিন্তু এ জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, অপ্রয়োজনীয় এবং তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকা আপগ্রেডের কাজটি করা হলে তা অবশ্যই নির্ভুল হবে।
Posted ২:০২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta