এম.নজরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া(১৫ মে) :: ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন সূচক (কেপিআই) অনুসারে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মূখ্য আঞ্চলিক কার্যালয় কক্সবাজারের আওতাধীন শাখা সমূহের মধ্যে প্রথম স্থান অজর্নকারী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কুতুবদিয়া শাখার কার্যক্রম চলছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছাড়াই। বর্তমান ডিজিটাল যুগেও শাখাটি চলছে এনালগ পদ্ধতিতে। কম্পিউটার থেকেও ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না বিদ্যুতের অভাবে।
ব্যাংকটির কুতুবদিয়া সদর শাখা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, দুপুরের প্রখর গরমের মধ্যেও হাসি মুখে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। তাঁদের কারো চেহারায় কোন ধরনের বিরক্তির চাপ নেই, হাসি মুখে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছেন যতœ সহকারে। অতি গরমের মধ্যেও কর্মকর্তাদের হাসি মুখের সুন্দর সেবা পেয়ে অত্যন্ত ভালো লেগেছে, বললেন মহিউদ্দিন নামের এক গ্রাহক।
ব্যবস্থাপকের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, এ শাখার ২৪ তম ব্যবস্থাপক দুলাল কান্তি বড়ুয়া সৌর বিদ্যুৎ চালিত একটি স্ট্যান্ড ফ্যান এক গ্রাহকের মুখোমুখি দিয়ে তার সাথে কথা বলছেন।
ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলে জানাযায়, তিনি ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর যোগদানের সময় ব্যাংকের এ শাখায় আমানত ছিল ৮০৮.৭০ লক্ষ টাকা,ঋণ বিতরণ ছিল ৪৩.৩১ লক্ষ টাকা, ঋণ আদায় ছিল ৮১.৭৬ লক্ষ টাকা, ঋণ অনাদায়ী ছিল ৫৯১.৬৬ লক্ষ টাকা এবং শ্রেণিকৃত ঋণ ছিল ৫৩১.১১ লক্ষ টাকা । যাহা মোট ঋণ স্থিতির ৯১ শতাংশ। ঐ অর্থ বছরে মুনাফা হয়েছিল ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা।
তিনি যোগদান করার পরে ব্যাংকটির এ শাখার প্রত্যেকটি সেক্টরের অগ্রগতি চোখে পড়ার মত। বর্তমানে ব্যাংকটির আমানত দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৪ কোটি টাকায়, ঋণ বিতরণ হয়েছে শাখার লক্ষ্যমাত্রার ৭৪ শতাংশ অর্থাৎ ১১৬ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা, ঋণ আদায় হয়েছে ১৩১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা এবং শ্রেণিকৃত ঋণ কমে হয়েছে ২৭৩.২৬ লক্ষ টাকা । যাহা মোট ঋণ স্থিতির ৪২ শতাংশ। গত অর্থ বছরে ব্যাংকের এ শাখায় মুনাফা হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।
ব্যবস্থাপক জানালেন, কক্সবাজার জেলার ১৯ টি শাখার মধ্যে এটি এমন একটি শাখা, যেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকার কারনে এখনো অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা সম্ভব হয়নি।
এ ধরনের অনেক সীমাবদ্ধতার পরেও ব্যবস্থাপকের চৌকস ব্যবস্থাপনায় গত অর্থ বছরে কেপিআই সূচকে জেলায় প্রথম হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগেও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে ব্যাংকের এ শাখা। ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে বললেন তিনি। তিনি আশা করছেন এবারও সাফল্যের প্রথম স্থান অব্যাহত থাকবে। যদিও জেনারেল ব্যাংকিং এর কর্মকর্তাসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ খালী রয়েছে এ শাখায়।
উপজেলার অন্য দুটি ব্যাংক সোনালী ও জনতা’’য় নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় চালু রয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং। কিন্তু কৃষি ব্যাংকের এ শাখায় কেন এখনো অনলাইন ব্যাংকিং চালু হয়নি তা জানতে চাইলে ব্যবস্থাপক দুলাল কান্তি বড়ুয়া বলেন, বর্তমান সময়টা বিদ্যুতের। বিদ্যুৎ ছাড়া কিছুই হয়না। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বারবার আবেদন করেছি একটি সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য। কিন্তু এখনো কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। তাছাড়া একটি সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য স্থানীয় সাংসদের কাছে আবেদন করেও কোন ফল পাইনি।
এ ছাড়াও তিনি বলেন, কুতুবদিয়ায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবি)’র মত একটি সরকারী কর্তৃপক্ষ থাকার পরেও অফিস আওয়ারে বিদ্যুৎ সুবিধা না পাওয়া দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন মহল বিষয়টি বিবেচনা করলে অফিস আওয়ারে (বিউবি)’র বিদ্যুৎ সরবরাহ অসম্ভব কিছু নয়।
গ্রাহকের কথা চিন্তা করে অবশেষে প্রখর গরমের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজের উদ্যোগে একটি সোলার প্যানেল স্থাপন করেছেন এ কর্মকর্তা। আর সেই সোলারের মাধ্যমে কক্ষে ঘুরছে সোলার ফ্যানগুলো। তাও নিজের জন্য নয় গ্রাহকের জন্য। এ বিষয়ে তিনি বললেন, গ্রাহকের অছিলায় বাতাস খাওয়া আরকি।
তিনি জানান, ১৯৭৯ সালের ২৫ জানুয়ারী উদ্বোধন হওয়া কুতুবদিয়া সদরের এ শাখায় বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজারে, ঋণ গ্রহীতা রয়েছে ৪ হাজার ৩০০ জন, চলতি অর্থ বছরে ঋণ বিতরণ হয়েছে এক কোটি চার লাখ ছিয়াত্তর হাজার টাকা। চলতি অর্থ বছরে ঋণ আদায় হয়েছে এক কোটি ৩১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
অবহেলিত এ দ্বীপের গরীব কৃষক, পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কুতুবদিয়া উপজেলা শাখা বদ্ধ পরিকর। আর এ জন্য প্রয়োজন সকলের সার্বিক সহযোগিতা।
Posted ১০:১৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta