কক্সবাংলা ডটকম(১৫ মার্চ) :: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমনটি দাবি করেছেন কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত হারুন-উর রশিদ।
মরক্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশি ওই রাষ্ট্রদূত সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে ইংরেজিতে একটি বিশাল স্ট্যাটাস দেন। বাংলাদেশি কূটনৈতিকের স্ট্যাটাসের বাংলা অনুবাদ হুবহু এখানে দেয়া হলো।
বাংলাদেশ এবং আমার জন্য একটি আবেদন। বিষয়: ড. ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশের নৈরাজ্যের দিকে পতন—বিশ্বের নীরবতা বেদনাদায়ক। মানবতার বিবেকের উদ্দেশে: বাংলাদেশ আজ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছড়িয়ে দেয়া বর্বরতার শিকার। লাখো মানুষ এক ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি—মৃত্যু, নির্বাসন, অথবা উগ্রপন্থার কাছে আত্মসমর্পণ।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দেশটি তার ইতিহাসের এক অন্ধকারতম অধ্যায়ের মুখোমুখি হয়—একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে বাংলাদেশের ভিত্তিকে নড়িয়ে দেয়। যখন দেশ জ্বলছিল এবং শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছিল, মুহাম্মদ ইউনূস তখন আত্মপ্রকাশ করেন দখলদার হিসেবে।
এই ঘটনা ইতিহাস কীভাবে মনে রাখবে? হয়তো এটি হবে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং সফল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড—যা এক রাতের মধ্যে গোটা দেশকে বদলে দিয়েছে।
একটি সন্ত্রাসী আন্দোলনের উত্থান, এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র: বছরের পর বছর ধরে ডিজিটাল সন্ত্রাসীরা, যেমন পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসাইন পশ্চিমা দেশগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে উগ্রপন্থার বিস্তার ঘটিয়েছে। তারা অনলাইনে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ফ্রান্স থেকে পিনাকী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইলিয়াস কীভাবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরকে ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে—তা দেখলেই তাদের ভয়াবহতা বোঝা যায়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে অবস্থানরত জিহাদিরা—যেমন ফরহাদ মজহার ও জাহেদুর রহমান—শেখ হাসিনার বাকস্বাধীনতার নীতির সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থার প্রচার চালিয়েছে। তারা হিন্দু ও ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র এই কারণে যে শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদ ছিল।
তাদের মিথ্যাচার বাংলাদেশি মুসলিমদের মনে ভারতবিদ্বেষকে এক মানসিক ব্যাধিতে পরিণত করেছে, যা উগ্রপন্থার পথ সহজ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের পরিচয় ধ্বংস: ইউনূসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই জিহাদিরা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় ধ্বংস করেছে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে দিয়েছে।
তারা শুধু জাদুঘর, ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও সাংস্কৃতিক প্রতীক ধ্বংস করেনি; শত শত সুফি দরগাহ এবং হিন্দু মন্দিরও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ইউনূসের শাসনে বাংলাদেশ নারীদের প্রতি সবচেয়ে নির্যাতনমূলক দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।
সংখ্যালঘু ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, আর হিজবুত তাহরির, আইএস ও আল-কায়েদা প্রকাশ্যে তাদের লাল-কালো পতাকা উড়িয়ে ইসলামি খিলাফতের দাবি জানাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট মাসের সন্ত্রাসীরা এদের মধ্য থেকেই উঠে এসেছে।
কিন্তু ড. ইউনূস শুধু তাদের রক্ষা করেননি—তাদের ক্ষমতাও দিয়েছেন। তার সরকারে সন্ত্রাসীরা মন্ত্রী হয়েছে, আর যাদের তিনি মন্ত্রিত্ব দিতে পারেননি, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ করে দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা জানাল……..
কানাডায় পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত হারুন-আল রশিদের এমন বিস্ফোরক মন্তব্যকে বিদেশে বসে বাংলাদেশকে নিয়ে অসৎ অভিসন্ধি বলে মনে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ ঘটনার দেশি ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মরক্কোতে বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১১ ডিসেম্বর দেশে প্রত্যাবর্তন ও অনতিবিলম্বে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের জন্য আদেশ দেয়া হয়েছিল।
এ সত্ত্বেও তিনি তার পদে বহাল থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব ত্যাগ করেন।
পরে বাংলাদেশে ফিরে আসার পরিবর্তে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে তার যাত্রা বিলম্বিত করেন।
এরপর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই তিনি মরক্কোর রাবাত থেকে কানাডার অটোয়ায় চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
গত ৬ মার্চ তার অটোয়া থেকে ঢাকায় ফেরার কথা থাকলেও দেশে ফেরত আসেননি তিনি।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি ‘A Plea for Bangladesh-and for Myself Subject: Bangladesh’s Descent into Anarchy under Yunus-The World’s Silence is painful’ শীর্ষক একটি লেখা পোস্ট করেছেন।
যেখানে তিনি পূর্ববর্তী নিপীড়ক ফ্যাসিবাদী সরকারের গুণকীর্তনের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে পরিস্থিতি ক্রমশ নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে চিত্রিত করার অপচেষ্টা করেছেন।
তার পোস্টে হারুন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃত উপস্থাপন করে ফেসবুকে এ ধরনের লেখা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এর বিষয়বস্তু গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এরূপ রচনা লেখকের গোপন উদ্দেশ্য বা অসৎ অভিসন্ধির ইঙ্গিত দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পরিবর্তে হারুন আল রশিদ কানাডায় চলে যান এবং সেখান থেকে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেন।
তিনি তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিজেকে ‘নির্যাতিত কূটনীতিক’, ‘নির্বাসিত ঔপন্যাসিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা মূলত বিদেশে সহানুভূতি অর্জনের অভিপ্রায়ে করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে হারুন ও তার পরিবারের পাসপোর্ট বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে হারুন আল রশিদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে।
বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয় না এবং ভবিষ্যতেও যারা এমন কর্মকাণ্ড করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta