শুক্রবার ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

খাদ্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে : কষ্টে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
33 ভিউ
খাদ্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে : কষ্টে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ

কক্সবাংলা ডটকম :: প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মিলল প্রত্যাশার পণ্য—দুই কেজি ডাল ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। ৩২০ টাকায় এই খাদ্যপণ্য দুটি পেয়ে রঞ্জিত দাসের (৫৫) শুকনো মুখে হাসি ফুটল। চলতি বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে টিসিবির তেল-ডাল পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট ভুলেছেন তিনি।

গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় রঞ্জিত দাসের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়।

জানা গেল, রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি পোশাক কারখানায় আয়রন সেকশনে কাজ করছেন রঞ্জিত দাস। ২০ হাজার টাকা বেতনে দুই সন্তান আর স্ত্রীকে কোনোমতে টেনেটুনে চলছে তাঁর সংসার। তিনি রামপুরার উলন এলাকায় টিনশেডের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।

খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে তাঁকে হিমশিম খেতে হয় বলে জানালেন।

রঞ্জিত দাস বলেন, ‘আমার আয়ের বড় একটি অংশ বাসাভাড়া এবং দুই সন্তানের পড়াশোনায় চলে যায়। গত কয়েক বছরে যে হারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, ইচ্ছা করলেও ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালোমন্দ কিছু খেতে পারি না। জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকম সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছি। প্রতি মাসেই কয়েক হাজার টাকা ঋণ করতে হয়।

এভাবে আর পারছি না। কিছু টাকা বাঁচানোর আশায় টিসিবির লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি।’ টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে এক বছরের বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রুনা লায়লা (২৫)।  তিনি বলেন, ‘দুই সন্তানসহ আমাদের ছয় সদস্যের পরিবার। স্বামী বনশ্রী গুদারাঘাটে ম্যাক অ্যাকসেসরিজ কম্পানিতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন।

আমি দুটি টিউশনি করে তিন-চার হাজার টাকা আয় করি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই আয় দিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলসহ বাসাভাড়ায় সাড়ে আট হাজার টাকা চলে যায়। বাচ্চাদের দুধ কিনে খাওয়াতে পারছি না। এখন মাসে দু-একবার পাঙ্গাশ ছাড়া অন্য মাছ খাওয়ার সুযোগ হয় না। ডিম, ডাল ও কম দামের সবজি খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। সামনের দিনগুলোতে যে কিভাবে চলব, বুঝতে পারছি না।’

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ১৩-১৪ বছর ধরে রিকশা চালান মো. জাহাঙ্গীর। তিনি ওই এলাকার একটি গ্যারেজে থাকেন। দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী নীলফামারীতে থাকেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আগে রিকশা চালাইয়া সংসারের খরচ সামাল দিয়া এলাকায় কৃষিজমিও কিনছি। এহন জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে আগের চেয়ে বেশি আয় করেও সংসার চালাইতে পারি না। সারা দিন রিকশা চালাইলে আট-নয় শ টেকা আহে। সব খরচ বাদে পাঁচ-ছয় শ টেকার মতো থাহে। এই দিয়া ছাওয়াল দুইডার পড়ার খরচ আর পরিবার চালানো খুব কঠিনই।’

রঞ্জিত, রুনা আর জাহাঙ্গীরের মতো এমন আরো অনেকে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তরাও ভালো নেই। তাদের সমস্যা হলো আত্মসম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে তারা বেশির ভাগই দাঁড়াতে পারে না।

বেশ কয়েক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া। গত চার বছরে পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, চাল, ডাল, রসুন, আলু, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম—এই আট পণ্যের দাম সর্বোচ্চ ১৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সে তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার এর মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে, আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু পণ্যের উচ্চমূল্য অনমনীয়, কিছুতেই নামছে না। ভোক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাজারে দ্রুত স্বস্তি ফেরানোর আহবান জানিয়ে আসছে বারবার।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বর্তমানে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি বিবিএসের তথ্যের চেয়ে বেশি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে টিসিবির বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চার বছরের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম প্রতি কেজিতে ৯ থেকে ১৭ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৫৬ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৫৪ থেকে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১৬৩ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।

দেশি রসুন কেজি প্রতি ১১৫ থেকে ১৫৫ টাকা বেড়ে মানভেদে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫৩ থেকে ৬২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ডিমের দাম হালিপ্রতি ৫১ থেকে ৬১ শতাংশ বেড়েছে। গত চার বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭১ শতাংশ।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়লে সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে নিম্ন বা স্বল্প আয়ের মানুষ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ কম খাদ্য গ্রহণ করে এবং এর চেয়ে বেশি মানুষ খাদ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে ব্যয় সাশ্রয় করছে। স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু তারা এখন খুব কষ্টে দিন পার করছে। মানুষের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’

জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘খাদ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ মূলত দেশে খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ভালো না হওয়া। বাজারের সরবরাহ সংকট কাটাতে পণ্য আমদানি করে যে নিয়ে আসবে, সেটাও পর্যাপ্ত ছিল না। কারণ ডলারের সংকটে ঠিকমতো এলসি খোলা যাচ্ছিল না এবং ডলারের সঙ্গে টাকার বড় অবমূল্যায়নে পণ্যের দাম আরো বেড়ে গেছে। এতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে আমাদের খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

একই সঙ্গে কৃষকদের সহায়তায় খাদ্য উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। যেসব খাদ্যের সংকট আছে, সেগুলো অতি গুরুত্ব দিয়ে আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। খাদ্যে উচ্চমূল্যস্ফীতির জন্য বাজারের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রও দায়ী। ব্যবসায়ী যে সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে, সেটা দূর করতে হবে।’

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে আছে। বাধ্য হয়ে তারা টিসিবি ও ওএমএস ট্রাকের পণ্য কিনছে। তবে ট্রাকের মধ্যে যে পরিমাণ পণ্য থাকে, লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের অর্ধেকও তা পাচ্ছে না। কাজেই পণ্যের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েও ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে পারছে না। সবজির দাম কিছুটা কমলেও অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিন্তু কমেনি। সয়াবিন তেল লিটারে আরো আট টাকা বাড়ার পরও বাজারে ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। টিসিবি ও ওএমএস ট্রাক সেল কার্যক্রম আরো বাড়ানো উচিত। তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও উপকার পাবে।’

33 ভিউ

Posted ৮:৩৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com