কক্সবাংলা ডটকম(১১ সেপ্টেম্বর) :: নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। একই সঙ্গে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে একচেটিয়া ঋণ দিতে নিষেধ করেছেন তিনি।
১০ সেপ্টেম্বর বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ব্যাংকার্স সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। এছাড়া ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এসকে সুর চৌধুরী, এসএম মনিরুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহিম, শুভঙ্কর সাহা, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খানসহ দেশের সবক’টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও দিকনির্দেশনা ঠিক করতে তিন মাস পরপর এমডিদের নিয়ে ব্যাংকার্স সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকালের ব্যাংকার্স সভার আলোচনা সম্পর্কে এবিবির চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, খেলাপি ঋণ শক্ত হাতে দমনের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। এছাড়া ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে বারণ করা হয়েছে। তাই এখন থেকে যেকোনো বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। সরকারি ব্যাংকের নিয়মেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে ব্যাংকগুলো।
তিনি বলেন, বৈঠকে দেশের উত্তর ও হাওড় অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের বেশি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
আনিস এ খান বলেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়ে এমডিদের পক্ষ থেকেই উদ্বেগ জানানো হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আমাদের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ ব্যাংকার্স সভায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সভা শেষে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিকেন্দ্রীকরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে একচেটিয়া ঋণ দিলে তা খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এছাড়া ভোক্তাঋণে আরো সাবধানতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, উন্নত প্রযুক্তির ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারেক্টার রিকগনিশন (এমআইসিআর) চেক প্রচলনের পরও ব্যাংকে চেক জালিয়াতির ঘটনা বাড়ছে। প্রতি মাসেই ২০-৩০টি চেক জালিয়াতির অভিযোগ আসছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র চেক জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা তুলে নিচ্ছে।
এটি বন্ধে চেক ছাপানোর সময় নির্ধারিত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিরক্ষর গ্রাহকরা যাতে চেকের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ পান, সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, এমআইসিআর চেক ইস্যু করা ব্যাংকগুলোর জন্য অনেক আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্যতামূলক করেছে। এর পরও কিছু ব্যাংক এখনো নন-এমআইসিআর চেক ইস্যু করছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোয় বেশকিছু চেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সভায় চেক জালিয়াতি রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন সার্কুলার জারির কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া নিরক্ষর গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাতের ছাপে লেনদেনের প্রস্তাব এসেছে। এক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিংকে মডেল ধরা হবে।
এছাড়া ব্যাংকার্স সভায় ইরানের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আংশিক নিষেধাজ্ঞা এখনো রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান সরকার বা ইরানের কোনো ব্যাংককে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সুবিধা প্রদান করে, এ ধরনের কোনো লেনদেন (ইউএস ডলারে) করা সম্ভব নয়। এজন্য ইরানের সঙ্গে ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, আজ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনা করা হবে। এ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে তিন মাস পরপর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, তিন মাস অন্তর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সভা করে। রুটিন কাজের অংশ হিসেবেই ব্যাংকার্স সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিগত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর পাশাপাশি নতুন করে কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
Posted ৪:০১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta