কক্সবাংলা ডটকম(১৯ আগস্ট) :: ১৬৭২ সালের নেদারল্যান্ডস। ৪৫২ বছর আগের কথা। ২১ জুন বিদ্রোহী এক ঘাতক ডাচ প্রধানমন্ত্রী ইউহান ডি উইটকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ছুরি বসিয়ে দেন। মরেননি, গুরুতর আহত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। ধরে নেওয়া হয়েছিল এতেই পরিস্থিতি শান্ত হবে; ডি উইটবিরোধী জনতার দাবি ছিল তার অপসারণ। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তখন ডাচ এলিট ও ব্যবসায়ীরা। আর বিদ্রোহীরা তাদের প্রিয় প্রিন্স অব অরেঞ্জ তৃতীয় ভিলেমকে নেতৃত্ব দিতে চায়। বলা বাহুল্য, সংখ্যাগরিষ্ঠই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। একালের বিবেচনায় ডি উইট হচ্ছেন রিপাবলিকান।
কিন্তু সময়টা ছিল তার প্রতিক’লে, দুই বড় প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স বিশ্ববাণিজ্য থেকে ডাচদের উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর। ডি উইট ১৬৫৩ থেকে ঘাতকের হাতে মারাত্মক আহত হওয়া পর্যন্ত প্রায় কুড়ি বছর শাসন করেছেন। এলিটিস্ট একটি দল ছাড়া রাজরক্তের বাইরে থেকে আসা শাসন জনগণ মেনে নিতে চায়নি, অধিকন্তু তারা মনে করেছে, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মোকাবিলা তৃতীয় ভিলেম ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
ডি উইটকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি আহত ও ক্ষমতা হারানোর পথে; এ সময় তার ভাই কর্নেলিসকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। অভিযোগ প্রিন্স ভিলেমকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে কর্নেলিস যুক্ত। কারাবন্দী ভাইকে দেখতে ডি উইট জেলগেটে গেলেন। সেদিন ১৬৭২-এর ২০ আগস্ট জেলখানার চারপাশে উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়। কারাগার তখন চারদিক থেকে অবরুদ্ধ, কারারক্ষীরাও জানে জনতার বিরুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। সুতরাং, তারাই কারাফটক খুলে দিয়ে জনতার সঙ্গে মিশে গেল। জনতা প্রধানমন্ত্রী ও তার ভাইকে হত্যা করল। তাদের ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখল, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর দেহ ছিঁড়ে কেটে ছিন্নভিন্ন করে ফেলল।
একজন তার কলজে বের করে এনে কামড় বসিয়ে দিল, শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে কামড়ে খেয়ে ফেলল, চোখ দুটো তুলে স্যুভেনির হিসেবে রেখে দিল, পকেটের রুমাল তাদের রক্তে ভিজিয়ে সগর্বে দেখিয়ে বেড়াল। নির্মম এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে রাজা ভিলেমের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে বিতর্ক আছে। নীরব সমর্থন সম্ভবত ছিলই। ২৭ আগস্ট তিনি সর্বময় ক্ষমতাধর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিদ্রোহীরা যাদের কথিত প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে চিহ্নিত করেন, তাদের তালিকাটি অনেক বড়, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে থাকল, রাজা ভিলেমের পক্ষেও তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ল।
ডি উইট যে নির্মম পরিণতির শিকার হলেন, তিনিই পরবর্তীকালের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ইতিহাসপ্রণেতাদের অঢেল প্রশংসা পেয়েছেন; ইউরোপে সর্বত্র যখন রাজতন্ত্রের জয়জয়কার, সে সময় ডি উইট প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছেন; ইউরোপীয় বৃহৎ শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দেশকে সক্ষম করে তুলেছেন। কিন্তু তার ভাই যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন, তার সমর্থকেরাও ক্ষুব্ধ হলেন। রাজতন্ত্রে পুত্র-কন্যাসহ সব আত্মীয়স্বজনের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সাধারণত প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। কিন্তু প্রজাতন্ত্রে আত্মীয় উপস্থিতি (এমনকি যোগ্যতা থাকলেও) তা নিজ দলে ও বিরোধী দলে তীব্র মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
২.
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সত্যিই ভাগ্যবান। তিনি এবং রাজাপাকসে পরিবারের একজন সদস্যও ক্ষুব্ধ জনতার হাতে নিহত হননি। মারও খাননি। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার একদা অসীম ক্ষমতাধর পুত্র ঘোষণা দিয়েছেন বাবা দেশ ছেড়ে পালাবেন না। এ পরিবারের নিরুপমা দীপিকা রাজাপাকসে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, প্যান্ডোরা পেপারসে বর্ণিত অজ্ঞাত পরিমাণ সম্পদ পাচারকারী ৫ এপ্রিল একেবারে সাধারণ যাত্রী সেজে দেশ থেকে পালিয়েছেন, সিসিটিভির ফুটেজ সে দৃশ্য ভালোই ধারণ করেছে এবং একালের ভাষায় ভাইরাল করে দিয়েছে।
এই পরিবারের হাতেই শ্রীলঙ্কার ললাট লিখন: দেউলিয়া হয়ে গেছে দেশটি। মাহিন্দার ছোট ভাই গোতাবায়া তখনো প্রেসিডেন্ট পদ ধরে রেখেছেন। সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমেছে। সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপি, দালাল-আমলা ক্ষুব্ধ জনতার হাতে মার খেয়ে যাচ্ছেন।
গোতাবায়া যদি আপাতত সর্বময় ক্ষমতার প্রেসিডেন্ট পদটি ধরে রাখতে পারেন, তাহলে হয়তো রাজাপাকসে পরিবারের ক্ষমতাধর সদস্যদের দেশ থেকে পালানোর পথ করে দিতে পারতেন, তবে বিদ্রোহীরা এয়ারপোর্টেও অবস্থান নিয়েছে, পালাতে দেবে না। রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়ে এসেছে, রাজাপাকসেদের বিরুদ্ধে ক্রোধ বহালই আছে।
মাহিন্দা রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণা লীয় জেলা হাম্বানটোটার রাজাপাকসেরা এমনিতে প্রভাবশালী জমিদার। মাহিন্দাকে ঘিরে যে সরকার, তার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর সবই চলে গিয়েছিল রাজাপাকসে পরিবার ও তাদের আত্মীয়দের কাছে। সন্দেহ নেই, তাদের কেউ কেউ যোগ্যও ছিলেন। ক্ষমতার বলয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে আত্মীয় সংযোজন জনগণের সাথে মনস্তাত্তি¡ক শত্রæতার সৃষ্টি করে। এটি শুধু শ্রীলঙ্কায় নয়, উপমহাদেশের তিন দেশসহ পৃথিবীর সব দেশের একই অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের তো বটেই। সঙ্গে যোগ হয় মেগা প্রকল্পের কর্তৃত্ব ও কমিশন এবং দুর্নীতি ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার।
রাজাপাকসে পরিবারের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ডন ডেভিড রাজাপাকসে রাষ্ট্রের একটি সামন্ত পদ অধিকার করেছিলেন। তবে পরিবারটি রাজনীতি-সম্পৃক্ত হয় ১৯৩৬ সালে স্টেট কাউন্সিলে হাম্বানটোটা জেলার প্রতিনিধি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ডন ডেভিডের পুত্র ডন ম্যাথু রাজাপাকসে ১৯৩৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন। ১৯৪৫-এ তার মৃত্যু হলে ছোট ভাই ডন আলভিন উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। হাম্বানটোটা জেলায় দুটো নির্বাচনী এলাকা।
১৯৪৭-এর সংসদীয় নির্বাচনে দুই এলাকা থেকে চাচা ডন আলভিন এবং ডন ম্যাথুর ছেলে লক্ষণ রাজাপাকসে বিজয়ী হন। পরবর্তী ৩০ বছর হাম্বানটোটায় রাজাপাকসে পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্য চলতে থাকে, এরই মধ্যে মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার ভাই চমল রাজাপাকসে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আ লিক নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই ধরে রাখেন। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির ভূমিধস বিজয় রাজাপাকসে পরিবারকে সংসদ থেকে হটিয়ে দেয়। এটি সেনানায়েক পরিবার-সমর্থিত ও নিয়ন্ত্রিত পার্টি।
১৯৮৯ সংসদে আবার ফিরে আসেন চমল রাজাপাকসে। এতে আরও কজন নির্বাচিত হন: নিরুপমা রাজাপকসে, বাসিল রাজাপাকসে এবং নমল রাজাপাকসে। চমল স্পিকারও হয়েছেন। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মাভো বন্দনায়েকের বডিগার্ড। সেনানায়ক, বন্দরনায়েক আর রাজাপাকসেদের লড়াইয়ের মধ্যে ২০০৫ সালের নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। নির্বাচিত হয়েই তিনি তার ভাই গোতাবায়া রাজপাকসেকে জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা সচিবের পদে নিয়োগ দিলেন, অপর ভাই বাসিল রাজপাকসেকে করলেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা। ২০১০-এর নির্বাচনে মাহিন্দা পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। আর সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলেন চমল, নমল ও বাসিল রাজপাকসে।
চমলকে করা হলো স্পিকার আর বাসিলকে দেওয়া হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নমন্ত্রীর পদ। তিন ভাইয়ের হাতে থাকল ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়: প্রতিরক্ষা ও নগর উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অর্থ ও পরিকল্পনা এবং বন্দর ও মহাসড়ক। একসময় ভাইদের হাতে চলে গেল জাতীয় বাজেটের ৭০ ভাগ অর্থ। এ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে তুমুল প্রতিবাদ। ২০১৪ সালের বাজেটে কাগজে-কলমে আবর্তক বাজেট ৪০ ভাগ আর মূলধন বাজেটের ৫৭ ভাগ তাদের হাতে। বাস্তবে সব মন্ত্রণালয়ের ওপরই তাদের আধিপত্য। অন্য কোনো মন্ত্রী রাজাপাকসে ভাইদের বিরাগভাজন হতে চান না, তাতে পদ হারানোর আশঙ্কা থাকবে। ক্ষমতা ও অর্থ কুক্ষিগত হওয়ার পর গোটা পরিবারই স্বৈরাচার হিসেবে আবির্ভূত হলো। যেকোনো ধরনের বৈদেশিক চুক্তিতে রাজাপাকসেদের ‘স্টেক’ নির্ধারিত না হলে চুক্তি বানচাল হয়ে যায়; সব মেগা প্রজেক্টের ঠিকাদার রাজপাকসে পরিবারের পছন্দে নির্বাচিত।
জনরোষে মাহিন্দা রাজাপাকসের পতনের পর রাজাদের পলায়ন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। ২০১৫-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপাকসে পরিবার বিপুল অঙ্কের রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের মাধ্যমে মাহিন্দা ৫.৩১ বিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কার বাইরে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০০৫ থেকে ২০১৫ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট; ২০০৪, ২০১৮ এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে গোতাবায়া রাজাপাকসেকে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাইয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। তিনি এখনো সংকটকালে দায়িত্ব ধরে রেখেছেন। এই পরিবারের জর্জ রাজাপাকসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন; নিরুপমা রাজাপাকসে মন্ত্রী হয়ে কুখ্যাত অর্থ পাচারকারীদের একজন হিসেবে চিহ্নিত হলেন।
শশীন্দ্র রাজপাকসে ছিলেন প্রাদেশিক চিফ মিনিস্টার; প্রসন্ন রাজাপাকসে ছিলেন এয়ারপোর্ট ও এভিয়েশন ডিরেক্টর; শমীন্দ্র রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের ডিরেক্টর; আত্মীয় হিমাল ললিন্দ্র হলেন স্কাই নেটওয়ার্কের সিইও; চন্দ্রা রাজাপাকসেকে অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব; চামিন্দা রাজাপাকসে হাম্বানটোটা বন্দরের প্রেসিডেনশিয়াল অ্যাডভাইজার, প্রীতি রাজাপাকসে ও ললিত রাজাপাকসে সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশনের সদস্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
রাজাপাকসে পরিবার স্বল্পকালের জন্য ক্ষমতাচ্যুত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা গিরিসেনা স্বয়ং জানিয়েছেন, মাহিন্দা রাজাপাকসে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার করেছেন। শুধু দুবাইতে পাওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব থেকে জানা যায়, পরিবারের শীর্ষস্থানীয় একজনের অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১.০৬৪ বিলিয়ন ডলার, একজন সংসদ সদস্যের অ্যাকাউন্টে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। রাজাপাকসে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ আরেকজনের প্রাইভেট সেক্রেটারি ও অপর একজনের যৌথ অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার।
প্যান্ডোরা পেপারস ফাঁস করে দিয়েছে নিরুপমা রাজাপাকসে এবং তার স্বামী খিরুকুমার টাকা পাচার ছাড়াও দুর্লভ পেইন্টিং পাচার ও কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। অফশোর ব্যাংকে পাঠানো নিরুপমার টাকা ১৮ মিলিয়ন ডলার আর তার স্বামীর সি তি ১৮০ মিলিয়ন ডলার। পলাতক নিরুপমা সাবেক এমপি ও মন্ত্রী। নিরুপমাকে পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমে ‘ঐশ্বর্যের ঈশ্বরী’ নাম দিয়েছে। নিরুপমার কলম্বো এয়ারপোর্ট ছাড়ার ভিডিওটি অনেকেই দেখেছেন। তামিল বিদ্রোহ দমন এবং তামিল নেতা ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মাহিন্দা রাজাপাকসের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু রাজাপাকসেদের ক্ষমতান্ধত্ব ও দুর্নীতি শ্রীলঙ্কার মতো এগিয়ে থাকা একটি রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। রাজাপাকসে ভাইয়েরা কে কত ‘পার্সেন্ট’ ঘুষ নিয়ে থাকতেন, তা সবারই জানা ছিল। তাকে সে নামেই ডাকা হতো: মিস্টার টেন পার্সেন্ট কি মিস্টার টোয়েন্টি পার্সেন্ট। শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতিবাজ এমপি, মন্ত্রী জনরোষের শিকার হয়ে যেভাবে বিবস্ত্র হয়েছেন, মার খেয়েছেন, এমনকি প্রাণও দিয়েছেন, এটা বহু দেশের জন্য সতর্কঘণ্টা বাজিয়ে গেছে।
শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার পর এটাই বলাবলি হচ্ছে— বানর যদি দেশ শাসন করত, তাহলে শুধু কলা পাচার করত, দেশের টাকায় হাত দিত না। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হনুমানের সম্পর্কটি রামায়ণ সৃষ্টিরও আগে থেকেই।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছে— এই সতর্কবার্তা বারবার দেওয়া হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী ও তার স্বজনেরা এভাবেই পালাবেন— সে কথাও বারবার বলা হয়েছে। ছাত্রজনতার আন্দোলনের আকার ও তীব্রতা পরিমাপ করতে পারেননি শেখ হাসিনা। ক্ষমতান্ধ প্রধানমন্ত্রী তামাশার স্বরে বলেছেন, শেখ হাসিনা পালায় না। পালাবার জন্য তার জন্ম হয়নি। তেমনি বলেছেন তার পরিষদের সদস্যরাও।
অবশেষে তিনি পালিয়ে বেঁচেছেন। বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন।
নীতিশিক্ষা: ছাত্র আন্দোলনকে উপেক্ষা করতে নেই।
Posted ১১:৫৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta