কক্সবংলা ডটকম(২৮ মে) :: ১৯ জেলায় তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। তবে ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে কমবেশি সবখানে। এর আঘাতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১২ জন। দুর্গত এলাকায় ঝড়ে উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। টানা বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে প্রায় পৌনে তিন কোটি গ্রাহক।
আর ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও রিমালপরবর্তী সময়ে দেশে তিন হাজার ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ।
সোমবার (২৭ মে) রাতে এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে ২৩৫ মিলিমিটার।
ঢাকায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫১ মিলিমিটার, যা মৌসুমের সর্বোচ্চ বর্ষণ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে কুতুবদিয়ায় ১৮৭ মিলিমিটার।
এ ছাড়া সাতক্ষীরায় ১৭২ মিলিমিটার, খুলনায় ১৬৩ মিলিমিটার, গোপালগঞ্জে ১৫১ মিলিমিটার, বরিশালে ১৪৭ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে ১৪৬ মিলিমিটার, চাঁদপুর ও ফেনীতে ১৩৯ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ১১৩ মিলিমিটার, মাইজদীকোর্টে ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের বিভিন্ন স্টেশনে ২৪ ঘণ্টায় মোট তিন হাজার ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিন দিনের পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৮ মে) সব বিভাগে বজ্রসহ মাঝারি থেকে ভারি এবং কোথাও কোথাও অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বুধবার (২৯ মে) বৃষ্টিপাত আরেকটু কমে যাবে। কোথাও কোথাও হালকা, কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও রাতের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অন্য এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব/পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিমি বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় ছয় জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঝড়ে উপকূলের ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
Posted ৪:০১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta