কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩০ মে) :: ঘূর্ণিঝড় মোরা’র তাণ্ডবে র উপকূলীয় এলাকায় গাছচাপা পড়ে ও আতঙ্কে ৩ জনের মৃত্যু হওয়ার পাশাপাশি উপকূলে শত শত বাড়িঘর বিধ্বস্ত ও গাছপালা উপড়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এবং গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা।এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার শহর ও উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর লোকাজন সকাল থেকে যার যার মত করে বাড়ি ফিরতে গেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ভোর ৬টার দিকে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে মোরা। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাস নিয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় মোরা। তবে প্রচুর বৃষ্টিপাতে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এখানে বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে গেছে।কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমার্টিনসহ আশেপাশের এলাকায় প্রবলবেগে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে এলাকাগুলোতে ৩ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার কিছুক্ষণ পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মরিয়মের মৃত্যু হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চকরিয়া উপজেলায় ঝড়ে গাছচাপায় অপর দুইজনের মৃত্যু হয়।নিহতরা হলো, পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ৬নং জেডিঘাট এলাকায় বদিউল আলমের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৫৫), চকরিয়ার বড়ভেওয়া এলাকার মৃত নূর আলম সিকদারের স্ত্রী সায়েরা খাতুন (৬৫) ও একই উপজেলার পূর্ব জুমখালী এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে রহমত উল্লাহ (৫০)।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ বলেন, ‘এ ইউনিয়নে দেড়শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে। আশপাশে যতদূর দেখেছি তাতে কমপক্ষে ৭০ ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। অনেক গাছপালা ভেঙে গেছে। আমার নিজের সেমিপাকা বাড়িটিরও আংশিক ভেঙে গেছে। ‘
ভোর ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিনে আঘাত হানে জানিয়ে তিনি সকাল ৮টায় বলেন, এখানে এখন প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে ঝড়ের আগেই সবাই আশ্রয়কেন্দ্রসহ উঁচু ভবনগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে বলে তিনি জানান। সকাল ৮টা পর্যন্ত তিনি কোনো হতাহতের খবর পাননি বলেও জানান।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন এলাকায়ও বেশ কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে গেছে কিছু গাছপালা। এ ছাড়া কিছু লোক আহত হয়েছে বলে শুনেছেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন। তবে তিনি আহতদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, উপকুলীয় এলাকার অন্তত লক্ষাধিক মানুষকে রাতেই সাইকোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আশ্রিতদের প্রশাসনর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।চকরিয়ায় ঘুর্ণিঝড় মোরার প্রভাব শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হলেও প্রভাব পুরোপুরি কেটে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা সম্ভব হবে না।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুবউল করিমের জানান, এ উপজেলায় ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ২শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলায় ৭২টি আশ্রয় কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে। তাদের শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ৮টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত মাঠে কাজ করছে। উপজেলা প্রশাসনে কন্ট্রোল রুম থেকে সব কিছু মনিটরিংকরা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, এ জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। মোরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আঘাত হেনেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ও গাছপালার। তবে কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, উপকূলীয় এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে জেলার ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিক্যাল টিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় ৪১৪টি ইউনিটের ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের নিরাপত্তার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে খাদ্য সরবরাহেরও ব্যবস্থা।
Posted ৩:১৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta