বিশেষ প্রতিবেদক,মহেশখালী(৩ জুলাই) :: কক্সবাজার উপকূলে গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানলে উত্তাল সমুদ্রে ডুবে যায় মহেশখালীর ছয়টি ট্রলার। নিখোঁজ হন ৫০ জেলে। এদের মধ্যে কারও বাবা, কারও স্বামী,কারও ছেলে নিখোঁজ।সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন তাঁদের স্বজনেরা।
গত বৃহস্পতিবার মহেশখালী পৌর এলাকার চরপাড়া গেলে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি না থাকায় আর্থিক টানাপোড়েনে দিন কাটছে পরিবারগুলোর। এবারের ঈদও কেটেছে কষ্টে।
ঘূর্ণিঝড় মোরায় সমুদ্রে নিখোঁজ ৫০ জেলের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি চরপাড়ায়। তাঁর হলেন জাবেদ উল্লাহ, মোহাম্মদ আজাদ, কলিম উল্লাহ, শামসুল আলম, শহীদুল্লাহ ও মোহাম্মদ মমতাজ। ছয়জনই কাজ করতেন পৌর কাউন্সিলর আবদু শুক্কুরের মালিকানাধীন ট্রলারে। এ ছাড়া পৌরসভার পুটিবিলার ২৪, ঘোনারপাড়ার ৫, কুতুবজোমের ৮, বড় মহেশখালীর ৩ ও ছোট মহেশখালীর ৪ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার পর্যন্ত তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ তথ্য নিশ্চিত করেন মহেশখালী ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক।
চরপাড়ায় জাবেদ উল্লাহর মা রশিদা বেগম বলেন, জাবেদের আয়ে কোনো রকমে সংসার চলত তাঁদের। এখন অভাবে দিন কাটছে। ঈদের নতুন কাপড় কেনা হয়নি। জাবেদের পরিবারের সদস্য ছয়জন—মা, স্ত্রী, দুই ভাই ও দুই বোন।
পাশের গৃহবধূ জোবায়েদা আকতারের স্বামী মোহাম্মদ আজাদ নিখোঁজ। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে জোবায়েদা পড়েছেন বিপাকে। তিনি বলেন, ‘একবার খেলে আরেক বেলা উপোস কাটছে। ছেলেমেয়েদের মুখে দিকে তাকাতে পারি না।’
পৌর কাউন্সিলর আবদু শুক্কুর বলেন, তাঁর তিনটি ট্রলারের ৪২ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে তাঁর দুই ভাইও রয়েছেন। এক মাস পার হতে চললেও কারও খোঁজ নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২৮ মে ৬৩ জন জেলে নিয়ে মহেশখালীর পৌর কাউন্সিলর আবদু শুক্কুরের মালিকানাধীন তিনটি এবং পৌরসভার পুটিবিলার মোহাম্মদ জামাল, মোশারফ আলী পাড়ার মোহাম্মদ বাশি ও ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের মুদিরছড়া এলাকার নুর কাদেরের মালিকানাধীন আরও তিনটি ট্রলার ১০০ জন জেলে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়।
৩০ মে সকালে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোরার কবলে পড়ে ছয়টি ট্রলার ডুবে যায়। পরে ভারতের নৌবাহিনী ও বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের সদস্যরা সাগরে ভাসমান অবস্থায় ৩৮ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেন। তিনজন জেলের লাশ কূলে ভেসে আসে। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে ৭২ জন জেলে বেঁচে ফিরে আসেন। এখনো নিখোঁজ ৫০ জন।
মহেশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ইতিমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৩ জেলে-পরিবারের মধ্যে অনুদান হিসেবে বিতরণ করা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
Posted ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta