এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১৯ আগষ্ট) :: চকরিয়ায় নিজেদের ভাড়া বাসার ভেতরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের অষ্ঠম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন সাহেল (১৫)।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে খবর পেয়ে স্বজন ও প্রতিবেশি লোকজন চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরীস্থ গ্রামীন ব্যাংক এলাকায় নানার বাড়ির অদুরে একটি ভাড়া বাসার দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেন।
নিহত মহিউদ্দিন সাহেল উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের হামিদউল্লাহ সিকদার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী জসিম উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী মহিউদ্দিনের বাবা জসিম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সৌদি প্রবাসী। গত ১০ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) তাঁর মা পারভীন আক্তারও হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে তাকে (মহিউদ্দিন) বাসায় একা রেখে সৌদি আরব গমন করেছেন। মা হজ্জে যাওয়ার পর থেকে মহিউদ্দিন নানার বাড়ির পাশে নিজেদের ভাড়া বাসায় একা থাকতো।
প্রতিবেশি লোকজন জানান, শনিবার ভোর ৬টার দিকে ফজরের নামাজের পর মহিউদ্দিনের নানা বাসায় এসে তাকে (মহিউদ্দিনকে) ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়। পরে বাসার একটি রুমে ফ্যানের সাথে মায়ের ওড়না গলায় দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে মহিউদ্দিন।
ঘটনাটি দেখে তাৎক্ষনিক বাসার মালিক নানার বাড়ির লোকজনকে খবর দেন। পরে নানার বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
প্রতিবেশি লোকজন জানান, মহিউদ্দিনের বাবা সৌদি আরবে থাকায় নানার বাড়ির অদুরে ভাড়া বাসায় মায়ের সাথে থাকতো মহিউদ্দিন। সেখান থেকে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলে লেখাপড়া করে আসছিলো।
প্রতিবেশিরা ধারণা করছেন, সপ্তাহ খানেক আগে (গত ১০ আগষ্ট) তাকে বাসায় একা রেখে মাতা পারভীন আক্তার হজ্বের উদ্দেশ্যে সৌদিআরব গমণ করেন। অপরদিকে দীর্ঘদিন থেকে জীবিকার তাগিদে সৌদিতে রয়েছেন বাবা জসীম উদ্দিন। সেই কারনে বাসায় কেউ না থাকায় কোন এক পূঞ্জিভুত ক্ষোভ থেকে কিংবা মায়ের সাথে তাকে হজ্জে না নেয়ায় অভিমান করে শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন সাহেল আত্মহত্যার ঘটনাটি সংগঠিত করেছে।
নিহত শিক্ষার্থী মহিউেিদ্দনের মামা ফয়সাল জানান, মহিউদ্দিন বাবা-মা’র প্রথম সন্তান। তার ছোটভাই কয়েকবছর আগে পানিতে ডুবে মারা যায়। মহিউদ্দিন চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষায় গণিতে ফেল করে।
সেই কারনে শুক্রবারও (১৮ আগষ্ট) সে স্কুলে প্রাকপ্রস্ততি মুলক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তবে এখনো ফলাফল ঘোষনা করা হয়নি।
চকরিয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে। তার গলায় ওড়না প্যাঁচানোর দাগ রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শনিবার সকালে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন সাহেলকে তাদের ভাড়া বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে স্বজনরা উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ধরণের সংবাদটি স্কুল ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সহপাটিসহ বিদ্যাপীঠের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জড়ো থাকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
ওইসময় থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশের ময়না তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করলে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ করতে থাকে সহপাঠিসহ শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, সহপাঠি সাহেলকে মর্গে নিয়ে গেলে কাটা-ছেঁড়া করে কষ্ট দিবে ময়না তদন্তকারীরা। তাই সাহেলের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। ওইসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিভৃত করার চেষ্টা করেন বিদ্যাপীঠের সাবেক অভিভাবক সদস্য উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ হায়দার আলী।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের বলেন, শিক্ষার্থীরা লাশের ময়না তদন্তের পক্ষে নয়। তারা মনে করছে, মর্গে নিয়ে ময়না তদন্তকালে কাটা-ছেড়ার হবে, ফলে সহপাটি (সাহেল) কষ্ট পাবে। তবে ময়নাতদন্ত করা হবেনা আশ^াস দিলে প্রায় চারঘন্টা পর বিকাল চারটার কিছু আগে শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত বাবা দেশে এসে ছেলের লাশ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই কারনে আপাতত লাশটি হিমাগারে রাখার প্রক্রিয়া চলছে।
Posted ২:৫২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২০ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta