এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(২১ জুলাই) :: চকরিয়ায় মোটর সাইকেলের ভেতর ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রেজাউল করিমকে ফাসাঁনোর ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছেনা। তাঁরা এলাকায় বহাল তবিয়তে থেকে উল্টো ভিকটিম ইউপি মেম্বারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন এবং পথেঘাটে মারধর করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মেম্বার রেজাউল। এ অবস্থায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তিনি।
জানা গেছে, চলতিবছরের ১৪ এপ্রিল বিকালে থানা পুলিশের একটিদল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল থেকে ইয়াবাসহ উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু গ্রেফতারের পর ওইদিনই চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর বিচক্ষনতায় ঘটনার আসল রহস্য উৎঘাটন হয়।
গ্রেফতারকৃত মেম্বারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওসি উৎঘাটন করেন মেম্বারের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের ভেতর কৌশলে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে (মেম্বার) ফাঁসানোর পরিকল্পনা। এরপরই ওসি’র নির্দেশে পুলিশের একটিদল শুরু করেন ইউপি মেম্বারকে আটকের জন্য পুলিশকে খবর দেয়া ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া।
ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার চৌধুরীর নির্দেশে থানার এসআই কাওছার উদ্দিন চৌধুরী ও এসআই এনামুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটিদল কয়েকদফা অভিযান চালিয়ে অবশেষে উদ্ধার করেন ঘটনার নৈপথ্য। একই সাথে গ্রেফতার করেন ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ দুইজনকে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বরইতলী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ময়নার বাপের পাড়ার মৃত ছৈয়দ নূরের ছেলে মূল পরিকল্পনাকারী আলী হোসেন ড্রাইভার (৪০) ও একই এলাকার আমির হোছাইনের ছেলে মারুফুল ইসলাম (৩২)।
ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতারের পর ওইদিন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মেম্বার রেজাউলের মোটর সাইকেলের ভেতর ইয়াবা রয়েছে মর্মে পুলিশে খবর দেন ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আলী হোসেন ড্রাইভার।
খবরের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক থানার এসআই কাওছার উদ্দিন চৌধুরী ও এসআই এনামুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটিদল অভিযানে যায়। প্রথমে ইউপি মেম্বার ও পরে ঘটনার নাটের গুরুসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর দুইজন পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, আগের কিছু ঘটনায় বিরোধের জেরে তাঁরা মেম্বার রেজাউল করিমকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিতে পরিকল্পনার কথা।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আলী হোসেন, মারুফুল ইসলাম ছাড়াও একই ইউনিয়নের মৃত হোসেন কেরানীর ছেলে নুরুল আমিন, ফাইতং ইউনিয়নের আলমনগর এলাকার মোহাম্মদ বাবুল ও বরইতলী উপরপাড়ার শরাফত উল্লাহ’র ছেলে মো: আতিকসহ ৫জনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই এনামুল হক বাদি হয়ে। মামলাটিতে স্বাক্ষী করা হয়েছে ষড়যন্ত্রের শিকার ইউপি সদস্য রেজাউল করিমকে।
একইদিন বিকালে গ্রেফতারকৃত আলী হোসেন ও মারুফুল ইসলামকে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে তাঁরা আদালতের কাছে ঘটনার সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন আদালত।
ভিকটিম ইউপি মেম্বার রেজাউল করিম জানান, ইতোমধ্যে মামলার গ্রেফতারকৃত দুই আসামি জামিনে এসেছে। কিন্তু অভিযুক্ত তিন আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। এ সুযোগে মামলার আসামিরা তাকে (ভিকটিম) পথেঘাটে আটকিয়ে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।
এমনকি ইতোমধ্যে আসামি আতিক ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে তার উপর হামলা করেছে। মেম্বার রেজাউল জানান, হামলার ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত আসামি আতিক ও তাঁর ভাই এরশাদ উল্লাহ এবং মঝি উল্লাহকে আসামি করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানার ওসি বিষয়টি তদন্তের জন্য হারবাং পুলিশ ফাঁিড়র আইসিকে দায়িত্ব দেন। তদন্তে আইসি পুলিশ পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।
এ অবস্থায় অভিযুক্তরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে গত ২২জুন হারবাং পুলিশ ফাঁিড়র আইসি’র কাছে একটি মুছলেকাও দিয়েছেন। মুছলেকায় অভিযুক্তরা হলফ করেন, আগামীতে ভিকটিম ইউপি মেম্বারকে কোন ধরণের হুমকি দেবেনা, পথেঘাটে হামলা করবেনা।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চকরিয়া থানার এসআই কাওছার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মামলার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাদেরকে গ্রেফতারে ইতোমধ্যে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। #
Posted ১১:৫৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta