কক্সবাংলা ডটকম(২২ আগষ্ট) :: বাংলার প্রচলিত লোককাহিনী, মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান অবলম্বনে ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় জহির রায়হান পরিচালিত চলচ্চিত্র বেহুলা। এ ছবিতে অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। এ ছবি দিয়েই ঢাকাই চলচ্চিত্রে দীর্ঘ অভিনয় জীবনের যাত্রা করেন তিনি। নায়করাজ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এ কিংবদন্তি অভিনেতা গতকাল প্রয়াত হয়েছেন (ইন্নানিল্লাহি… রাজিউন)।
গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গতকাল বিকালে হূদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতালে নেয়া হয় রাজ্জাককে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অনেক চেষ্টার পর ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক। অভিনয়ের হাতেখড়ি হয় স্কুলজীবনে। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন অভিনয় করেন সরস্বতী পূজা উপলক্ষে আয়োজিত মঞ্চনাটকে। সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন কলেজজীবনে। ‘রতন লাল বাঙালি’ সিনেমায় অভিনয় করেন সে সময়। এছাড়া ‘পঙ্কতিলক’ ও ‘শিলালিপি’ নামে আরো দুটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে তার পরিবার ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় রাজ্জাক অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র জহির রায়হানের বেহুলা।
১৯৬৪ সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসার পর রাজ্জাক টেলিভিশনে ঘরোয়া নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। এ নাটকে তার চরিত্রটি দর্শকপ্রিয়তা পায়। আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগও পান তিনি। সালাউদ্দিন প্রডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রের ছোট একটি চরিত্রেও অভিনয়ে ছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে তিনি বিপুল সংখ্যক বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে পাঁচশর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক। কবরী, শাবানা, ববিতা, রোজিনার সঙ্গে একের পর এক সফল জুটি গড়ে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় ছবি। নায়ক হিসেবে তার শেষ ছবি ১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মালামতি। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বড় অবদান রাখেন রাজ্জাক। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।
রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে— এতটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, পিচঢালা পথ, আবির্ভাব, দ্বীপ নেভে নাই, টাকা আনা পাই, রংবাজ, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, চন্দ্রনাথ, শুভদা, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত। বিভিন্ন ছবির জন্য বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭৬ সালে কি যে করি, ১৯৭৮ সালে অশিক্ষিত, ১৯৮২ সালে বড় ভালো লোক ছিল, ১৯৮৪ সালে চন্দ্রনাথ, ১৯৮৮ সালে যোগাযোগ। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।
রাজ্জাকের বাবার নাম আকবর হোসেন ও মায়ের নাম নিসারুন্নেছা। পাঁচ সন্তানের জনক রাজ্জাকের স্ত্রীর নাম খাইরুন্নেছা। তার সন্তানরাও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলচ্চিত্র জগতে আসেন। সন্তানরা হলেন— বাপ্পারাজ বা রেজাউল করিম, নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসেন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না ও খালিদ হোসেইন সম্রাট।
Posted ১২:৪১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta