কক্সবাংলা ডটকম(৫ আগস্ট) :: কয়েক বছর বিলম্বের পর অবশেষে ভারতীয় নৌবাহিনী বিশ্বের চৌকস ও অন্যতম মারণঘাতী যুদ্ধ সরঞ্জাম বহরে যুক্ত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুদ্ধ সরঞ্জামটি হচ্ছে আইএনএস ক্যালভারি ডুবোজাহাজ, গভীর সমুদ্রের এক প্রজাতি টাইগার শার্কের নামে যার নামকরণ করা হয়েছে।
চীনের সঙ্গে বাড়তে থাকা বিরোধের জেরে শক্তি বৃদ্ধি করতে তত্পর হয়েছে ভারত। চলতি মাসের শেষ দিকে ছয়টি ডুবোজাহাজের প্রথমটি গ্রহণ করবে ভারত। এ পদক্ষেপকে দেশটির জলের নিচে যুদ্ধশক্তি পুনর্নির্মাণ প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারতের দুর্বল নৌবহর যেকোনো আক্রমণের মুখে দেশটিকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম নয়। অন্যদিকে আঞ্চলিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নিজের নৌবহর সম্প্রসারণ করে চলেছে চীন।
চীনের সামরিক নৌবহরে প্রায় ৬০টি ডুবোজাহাজ রয়েছে। এর বিপরীতে ভারতের রয়েছে
১৫টি। সম্প্রসারিত নৌবহর ভারত মহাসাগরে চীনের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলেছে, যাকে একটি জাতীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লির কৌশলীরা। চলতি বছরের মে মাসে একটি চীনা ইয়ান-শ্রেণীর ডিজেলচালিত ডুবোজাহাজ ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। ডুবোজাহাজটি এখনো চুপিসারে অবস্থান করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ভারত মহাসাগরে ডুবোজাহাজটির অনুপ্রবেশ চীনের দ্রুতবর্ধমান নৌশক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন ভারত ও চীনের সৈন্যরা সীমান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে গত মাসে ভারত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জিবুতিতে চীনের প্রথম নৌঘাঁটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, সম্প্রতি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কাছে ডুবোজাহাজ বিক্রি এবং গত বছর একটি চীনা পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ডুবোজাহাজের করাচি সফর; ভারতের নৌবাহিনী জলের নিচের যুদ্ধের জন্য কতটা অপ্রস্তুত তা তুলে ধরেছে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মসূচির গবেষক পুসান দাস বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ পরিকল্পনায় ক্রয় প্রতিশ্রুতির ঘাটতিকে ভারত সরকারের অবহেলা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে পিপলস লিবারেশন আর্মি নৌবাহিনীর (পিএলএ-এন) ক্রমবর্ধমান কার্যক্রমের পাল্টা প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন ভারতের। এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ বহরের পরিকল্পনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিতিন ওয়াকাঙ্কার।
অবসরে যাওয়া নৌজাহাজ প্রতিস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৯৬ সালের পর ভারতের নৌবহরে আক্রমণকারী ডুবোজাহাজের সংখ্যা ২১ থেকে কমে ১৩তে নেমে এসেছে। রাশিয়ার কিলো শ্রেণীর নৌজাহাজ ও জার্মান এইচডিডব্লিউ ডুবোজাহাজ দিয়ে ভারতীয় নৌবহর সাজানো। কিন্তু পুরো বহরই অন্তত ২০ বছরের পুরনো। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এগুলো কার্যক্ষম থাকবে।
এর বিপরীতে চীনের জলের নিচের নৌবহরে রয়েছে পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন পাঁচটি ও ডিজেলচালিত ৫৪টি আক্রমণকারী ডুবোজাহাজ। ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে ৬৯ ও ৭৮টি ডুবোজাহাজে দাঁড়াবে। সম্প্রতি চীনা সামরিক বাহিনীর ওপর পেন্টাগণের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত মহাসাগরে ভারতের জন্য চীনের উল্লেখযোগ্য হুমকি হয়ে উঠতে এখনো দেরি রয়েছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
Posted ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta