কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জুন) :: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এসব তরুণদের কারো বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে বলে মনে করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
নিখোঁজের ঘটনায় দায়ের করা জিডিগুলোর তদন্ত কাজ থেমে রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা নিখোঁজদের ফেসবুক প্রোফাইল ও মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই-বাছাই করেছে। গত ৩ জুন বনানী থেকে একই দিনে চার যুবক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা তিনটি জিডির তদন্তের কোন কুল কিনারা হয়নি।
অন্যদিকে, গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একযোগে চার যুবক তরুণ নিখোঁজ হয়। তারা হলেন- সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ঘরামি ও মেহেদী হাওলাদার। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল মেহেদী হাওলাদার ও ২৮ মে সুজন ঘরামি ফিরে আসেন। তাদের ফিরে আসার বিষয়টিও রহস্যজনক।
তারা কিভাবে ফিরে এসেছেন, এতদিন কোথায় ছিলেন, কারা তাদের ধরে নিয়েছিল-এমন সব প্রশ্নের সদুত্তর পরিবারের কাছ থেকে মিলেনি। ঐ বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার মাটিকাটা এলাকা থেকে কেয়ার মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ইমরান ফরহাদ ও ৫ ডিসেম্বর বনানী এলাকা থেকে সাঈদ আনোয়ার খান নিখোঁজ হন। এদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও উদ্ধার করতে পারেনি।
গত বছরের ১৯ অক্টোবর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরী মেহেদী হাসান (১৮) নিখোঁজ হয়ে যান। মেহেদীর মা মনোয়ারা বেগম বলেন, মেহেদী নাটোরে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে সৈনিক পদে পরীক্ষা দেয়ার জন্য ঢাকা থেকে ছুটি নিয়ে রাজশাহী আসছিল। সর্বশেষ বিমানবন্দর রেলষ্টেশনে তার বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। এরপর থেকে মেহেদীর আর হদিস মিলেনি। এ ঘটনায় তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি জিডি করেন।
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মারগুর তৌহিদ শনিবার বলেন, জিডির তদন্ত আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে চেস্টা করেছি। রহস্যের বিষয় হলো যে ছেলেটি বিমানবন্দর রেলষ্টেশনে ট্রেনে ওঠার আগে বাবার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। ঐ দিন বিমানবন্দর এলাকায় বা বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত কোন অজ্ঞাত লাশও উদ্ধার হয়নি।
গত ১৯ মে মাদারীপুরের মাদারীপুরের কালকিনির রায়পুরা গ্রাম থেকে সোয়েব শেখ ওরফে সোয়ায়েব (৩২) নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক নিখোঁজ হয়ে যায়। সোয়েবের স্ত্রী রিনা বেগম অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ধরে নিয়ে যেতে পারে। সোয়েব শেখ গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার রেডিয়্যান্ট সোয়েটার নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় স্যুইং শাখার লিংক ইন পদে চাকরি করতেন। ঐ কারখানায় রিনা বেগমও চাকরি করেন।
র্যাব সূত্র জানায়, গত বছরের ৩১ মে র্যাব তেজগাঁও বেগুনবাড়ি পোস্ট অফিস এলাকা থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য ও জিহাদী বইসহ জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন মফিজুল ইসলাম ওরফে তুষার ওরফে তাওহীদ (২৯), রকিবুল ইসলাম ওরফে রকিবুল মোল্লা (২৫) ও ইলিয়াছ আহমেদ (১৯)। ঐ ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় র্যাবের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় সোয়েব শেখকে পলাতক আসামী হিসাবে দেখানো হয়েছে। র্যাবের ভাষ্য, সোয়েবকে তারা খুঁজছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার আগে ও পরে যারা নিখোঁজ হচ্ছেন তাদের সবাই জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয়। আবার নিখোঁজদের কারো কারো ব্যক্তিগত প্রোফাইল, ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে জঙ্গি সন্দেহ উড়িয়ে দেয়া যায় না। এর আগে দেখা গেছে, নিখোঁজদের মধ্যে কোন কোন যুবক র্যাব-পুলিশের জঙ্গি অভিযানে নিহতও হয়েছেন। আবার অনেকে আত্মগোপনে থেকে ‘নিখোঁজ’ নাটক সাজায়।’
গত ৩ জুন বনানীর সি-ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৬৭/এ, মোস্তফা ম্যানসনের ৫ম তলায় জিয়াউল হকে মালিনকানাধীন ইন্টারকম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও টেলেক্স লিমিটেড নামে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ইমাম হোসেন (২৭), তাওহীদুর রহমান (২৬), কামাল হোসেন (২৪) ও হাসান মাহমুদ (২৬)।
এদের মধ্যে ইমাম হোসেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ত্রিপল-ই বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। কামাল হোসেন নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করে ঐ প্রতিষ্ঠানে বিপনন কর্মকর্তা হিসাবে চাকরি করতেন। হাসান মাহমুদ ঐ প্রতিষ্ঠানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার পদে কর্মরত ছিলেন। আর ইমাম হোসেন ঐ প্রতিষ্ঠানের ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
নিখোঁজ তাওহীদুর রহমানের বাসা মহাখালীতে। তার বাবা মহাখালী এলাকার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। নিখোঁজ চার জনের মধ্যে তাওহীদুর রহমান বাদে বাকি তিন জন চট্টগ্রামে একই পরিবারে বিয়ে করেছেন। নিখোঁজের ঘটনায় বনানী থানায় হাসান মাহমুদের বাবা আব্দুর রহিম, কামাল হোসেনের মামা রশিদ আলম ও ইমাম হোসেনের বাবা বিল্লাল হোসেন বনানী থানায় ৩ টি জিডি করেন।
হাসান মাহমুদের বাবা আব্দুর রহিম ইত্তেফাককে বলেন, তিনি সিলেটে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা দেন। হাসান মাহমুদ একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশুনা করে বনানীর ঐ প্রতিষ্ঠানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে যোগ দেয়। হাসানের সঙ্গে আরো দুই জন নিখোঁজ হয়েছে। তার ছেলে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয়।
অপরদিকে, গত বছরের ১৪ জুলাই বনানী রেলস্টেশনের সামনে থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইয়াসিন আলী (৪৫) নিখোঁজ হয়ে যান। ইয়াসিনের বাসা মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায়। ইয়াসিনের মা ডা. সুরাইয়া পারভীন অভিযোগ করেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার আগে নিবরাস ইসলামের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় যে মামলা হয়েছিল সেই মামলায় ইয়াসিনের নামও রয়েছে।
