কক্সবাংলা ডটকম(৩ জানুয়ারী) :: ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে কাতারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর আমদানিকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে আগামী ২৫ এপ্রিল যুক্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকৃত এলএনজির প্রথম চালান দেশে আসবে আগামী এপ্রিলে। এ ধাপে ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনা হবে। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫০০ এমএমসিএফডি ধারণক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বা ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপন করা হচ্ছে।
এর একটি স্থাপন করবে এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড (ইইবিএল) ও অন্যটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি (প্রাইভেট)। টার্মিনাল স্থাপন ও ব্যবহার নিয়ে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আলাদা চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা। এছাড়া এলএনজি আমদানিতে কাতারের রাশগ্যাস কোম্পানি এবং সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, এলএনজি আমদানি ও টার্মিনাল স্থাপনে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে অর্থসংস্থানে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। টার্মিনাল স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে। আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে এলএনজির অর্থায়নে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে অনুরোধ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। পরবর্তীতে পেট্রোবাংলা কমিশনের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করে।
প্রতিষ্ঠানটির আবেদনে বলা হয়, এলএনজি ক্রয়, এফএসআরইউ পরিচালনা ও টার্মিনাল চার্জ বাবদ চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৮৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকা (১ ডলার=৮২ টাকা হিসেবে) প্রয়োজন হবে। রি-ভলভিং ফান্ড হিসেবে এ অর্থ সংস্থানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কমিশনের কাছে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ইইবিএলের টার্মিনাল থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করে রি-গ্যাসিফিকেশনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর সামিটের টার্মিনাল থেকে চলতি বছর শেষে ৩ দশমিক ৭৫ এমটিপিএ এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশন করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ আগামী বছর নাগাদ এ দুটি টার্মিনাল থেকে সাড়ে ৭ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করে তা রি-গ্যাসিফিকেশনের লক্ষ্য রয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এলএনজি আমদানি ও রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য রি-ভলভিং ফান্ড হিসেবে ৮৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে এলএনজির এলসিতে ৩ কোটি ডলার, ল্যাটেন্ট হিট ক্যাপচার সিস্টেমের (এলএইচসিএস) জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার এবং এলএনজি আমদানি ও পরিচালনার জন্য রি-ভলভিং ফান্ড হিসেবে এসবিএলসিসহ প্রয়োজন হবে আরো ৮০ কোটি ডলার।
ইইবিএলের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ৪২ কোটি ২১ লাখ ডলার চলতি অর্থবছরেই প্রয়োজন হবে। আর সামিটের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, ২ কোটি ২১ লাখ ডলার চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে ও বাকি ৪০ কোটি ডলার আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাইয়ে প্রয়োজন হবে।
বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তায় ২০১৫ সালে গঠন করা হয় জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল। এখন পর্যন্ত এ তহবিলে জমা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এটি একটি রি-ভলভিং ফান্ড হিসেবে পরিচালিত হবে। এ তহবিলের অর্থ থেকে অর্জিত সুদ ও সারচার্জ তহবিলে জমা হবে। তহবিল পরিচালনায় জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, এলএনজিতে মিথেনের পরিমাণ ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া ইথেন ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রপেন ২ দশমিক ১৬ শতাংশ ও বিউটেন ১ দশমিক ১২ শতাংশ। আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাসের মান নিশ্চিতকরণে তিনটি টিম কাজ করবে। এগুলো হলো— ক্রেতা পেট্রোবাংলার পক্ষে একটি, বিক্রেতা রাশ গ্যাসের পক্ষে একটি ও অন্যটি ক্রেতা-বিক্রেতার সমন্বয়ে একটি স্বাধীন কমিটি।
Posted ৩:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta