কক্সবাংলা ডটকম(৭ জুন) :: টি-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব থেকে বড় অঘটনের সাক্ষী থাকল ক্রিকেট বিশ্ব।
বৃহস্পতিবার রাতে টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২৪-এর রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল আমেরিকা।
নির্ধারিত ২০ ওভারে ম্যাচ টাই হয়। সুপার ওভারে বাজিমাত করে আমেরিকা।
এই নিয়ে বিশ্বকাপের টানা ২টি ম্যাচে জয় তুলে নেয় টুর্নামেন্টের যুগ্ম আয়োজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও বাবর আজ়মের দল করে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান।
টস জিতে ফিল্ডিং নেন আমেরিকার অধিনায়ক মোনাঙ্ক পটেল।
জবাবে আমেরিকাও করে ৩ উইকেট ১৫৯ রান।
খেলার নিষ্পত্তি হল সুপার ওভারে। তাতেও এঁটে উঠতে পারলেন না বাবরেরা।
সুপার ওভারে আমেরিকা প্রথমে ব্যাট করে তোলে ১৮ রান।
মহম্মদ আমির তিনটি ওয়াইড বল করে আমেরিকাকে সুবিধা করেন দেন। অ্যারন জোন্স করলেন ১১ রান।
জয়ের জন্য পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯ রান।
পাকিস্তান নামায় ফখর জামান এবং ইফতিকার আহমেদকে।
সৌরভ নেত্রাভালকরের দ্বিতীয় বলে চার মারেন ইফতিকার।
কিন্তু তৃতীয় বলে আউট হয়ে যান।
দুরন্ত ক্যাচ ধরেন নীতীশ কুমার। নামেন শাদাব খান। তাতেও লাভ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত ১৩ রান করে ৫ রানে হেরে গেল পাকিস্তান।
সেই সাথে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিল বিশ্বকাপের সহ আয়োজকরা।
এর আগে ডালাসে এ-গ্রুপের ম্যাচে সম্মুখসমরে নামে পাকিস্তান ও আমেরিকা। টস জিতে পাকিস্তানকে শুরুতে ব্যাট করতে পাঠায় আমেরিকা। তাদের সিদ্ধান্ত যে নিতান্ত ভুল ছিল না, সেটা বোঝা যায় প্রথম ইনিংসের পাওয়ার প্লে-তেই। পাকিস্তান পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে মাত্র ৩০ রান তুলতেই ৩টি উইকেট হারিয়ে বসে।
পাকিস্তান শেষমেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১৫৯ রান তোলে। দলের হয়ে সব থেকে বেশি ৪৪ রান করেন ক্যাপ্টেন বাবর আজম। ৪৩ বলের সতর্ক ইনিংসে তিনি ৩টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। ২৫ বলে ৪০ রানের আগ্রাসী ইনিংস খেলেন শাদব খান। তিনি ১টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন।
১৬ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন শাহিন আফ্রিদি। তিনি ১টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। এছাড়া ইফতিখার আহমেদ ৩টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১৪ বলে ১৮ রান করেন। ফখর জামান ১টি ছক্কার সাহায্যে ৭ বলে ১১ রান করেন। ১টি ছক্কার সাহায্যে ৮ বলে ৯ রান করেন মহম্মদ রিজওয়ান।উসমান খান ৩ রান করে আউট হন। ৩ রানে অপরাজিত থাকেন হ্যারিস রউফ। খাতা খুলতে পারেননি আজম খান।
আমেরিকার হয়ে ৪ ওভারে ৩০ রান খরচ করে ৩টি উইকেট তুলে নেন কেনজিগে। ৪ ওভারে ১৮ রান খরচ করে ২টি উইকেট নেন সৌরভ নেত্রভালকর। ৪ ওভারে ৩০ রান খরচ করে ১টি উইকেট নেন আলি খান। ৩ ওভারে ৩৭ রান খরচ করে ১টি উইকেট পকেটে পোরেন জসদীপ সিং। ৪ ওভারে ৩৪ রান খরচ করেন হরমীত সিং। তিনি কোনও উইকেট পাননি। ১ ওভারে ৬ রান খরচ করেন কোরি অ্যান্ডারসন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে আমেরিকাও নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫৯ রান তোলে। তারা ৩টি উইকেট খোয়ায়। ম্যাচ টাই হওয়ায় ফলাফল নির্ধারণের জন্য খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। মোনাঙ্ক প্যাটেল ৭টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৩৮ বলে ৫০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ২৬ বলে ৩৫ রান করেন আন্দ্রিজ গাউস। তিনি ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন। ২৬ বলে ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন অ্যারন জোনস। তিনি ২টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৫ রান দরকার ছিল আমেরিকার। তারা ১টি ছক্কা ও ১টি চারের সাহায্যে ১৪ রান তোলে। পাকিস্তানের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন মহম্মদ আমির, নাসিম শাহ ও হ্যারিস রউফ। ৪ ওভারে ৩৩ রান খরচ করেও উইকেট পাননি শাহিন আফ্রিদি।
প্রথম ম্যাচে কানাডাকে হারিয়েছিল আমেরিকা। এর আগে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে বাংলাদেশকে ২-১ ম্যাচে হারিয়েছিল মার্কনীরা। বিশ্বকাপে পর পর দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ লিগের শীর্ষে এখন আমেরিকা। আগামী রবিবার ভারতের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচ খেলতে নামবে পাকিস্তান, তার আগে বড় ধাক্কা খেল বাবর আজমের দল।
২০২৪ টি-২০ বিশ্বকাপে এটাই পাকিস্তানের প্রথম ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচে তারা অপেক্ষাকৃত অনেকটাই দুর্বল দল আমেরিকার বিরুদ্ধে হেরে গেল। পাশাপাশি এই জয়ের পর এ গ্রুপের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে আমেরিকা। দুটো ম্যাচের মধ্যে দুটোতেই তারা জয়লাভ করেছে। ঝুলিতে রয়েছে ৪ পয়েন্ট। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রিকেট দল একটা ম্যাচ জিতে ২ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে এবং পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আগামী ৯ জুন ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে পাকিস্তান। অন্যদিকে আমেরিকা আগামী ১২ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে।
এই ম্যাচের শেষে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজম রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েন। ম্যাচের শেষে তিনি স্বীকার করেন, ‘আমরা ব্যাট করার সময় প্রথম ৬ ওভার কাজে লাগাতে পারিনি। পরপর উইকেট হারিয়ে আমরা বিপাকে পড়ে যাই। এরপর প্রথম ৬ ওভার আমরা ভালো বলও করতে পারিনি। শিকার করতে পারিনি একটাও উইকেট। স্পিনাররাও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেষেরদিকে আমরা কিছুটা হলেও কামব্যাক করতে পেরেছি। কিন্তু, ফিনিশ করতে পারলাম না। আশা করি, আগামী ম্যাচগুলোয় ভালো পারফরম্যান্স করতে পারব। এই পরাজয় হজম করা খুব কঠিন। তাও আমেরিকাকে শুভেচ্ছা জানাব যে ওরা ভালো পারফরম্যান্স করেছে। সেকারণে ম্যাচটা জিতেছে। উইকেটে যথেষ্ট আর্দ্রতা ছিল। এছা়ড়া ছিল দ্বিমুখী গতিও। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আগামী ম্যাচে আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে আরও ভালোভাবে মানিয়ে খেলার চেষ্টা করব।’
Posted ২:১৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta