হুমায়ুন রশীদ,টেকনাফ(২ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং বিজিবি তল্লাশি চৌকি সংলগ্ন নাফ নদীতে ঈদের দিন আবারও নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে মা ও মেয়ে নিহত হন। এছাড়া এ নৌকা ডুবির ঘটনায় ৪ শিশু নিখোঁজ রয়েছে। নৌকা ডুবির ঘটনায় ১ জন মুমূর্ষু ও অজ্ঞান শিশুকে কুতুপালং এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি এবং নিহত মা-মেয়ের লাশ হোয়াইক্যংয়ে দাফন করা হয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ নিয়ে আজ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ও নদী থেকে মোট ৫২ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের লাশ উদ্ধার করা হলো। এর আগে গত বুধবার ৪ জন, বৃহস্পতিবার ১৯ জন ও শুক্রবার ২৬ জন রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঈদের দিন শনিবার সন্ধ্যায় হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীর পারে নৌকা ডুবির ঘটনায় নিহত স্ত্রী ও মেয়ের লাশসহ আসা মিয়ানমারের মংডু থানাধীন মাংগালার প’খালী গ্রামের সৈয়দ উল্লাহ (৬৩) জানান, সকাল ১০টার দিকে ২টি নৌকায় করে ২৮ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কুমিরখালী অতিক্রম করার পর ২১ জন রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি ডুবে যায়।
খোঁজাখুজির পর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৬০) এবং মেয়ে মিনারা আক্তারের (২২) মৃতদেহ পাওয়া গেলেও সাথে থাকা নিকট আত্মীয় অপর ৪ শিশুকে পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ ৪ শিশুর মধ্যে ৩ জন একই পরিবারের। এরা হলেন মৃত রমজান হাকিমের পুত্র মোঃ তুহাদ (৮), আসমত আরা (৬), জরিদা বেগম (৪)। নিখোঁজ অপর ১ জন হলেন নুরুল ইসলামের পুত্র নুর কাবা (৫)।
এ ঘটনায় মুমূর্ষু ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে সাথে নিয়ে আসা মৃত ফজল হাকিমের শিশু কন্যা সুফাইরা বেগমকে (৮) কুতুপালং এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ২টি মৃতদেহ এবং ১ জন মুমূর্ষু ও অজ্ঞান শিশু নিয়ে রোহিঙ্গার দলটি টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নাফ নদীর পারে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজন বিজিবি ও পুলিশকে খবর দেন।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি পৌঁছে এদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন।
হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মহির উদ্দিন খান উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে পুলিশ বিজিবি স্থানীয় মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মা-মেয়ের লাশ দাফন করা হয়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী রোহিঙ্গা বোঝাই করার কারণে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গারা জানান, ঈদের দিনও তাঁদের এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলা শুরু হলে তড়িঘড়ি করে নামাজ পড়ে নৌকাযোগে এপারে আসার জন্য রওয়ানা হন তারা। নাফ নদী হয়ে আসা কুমিরখালী স্থানে পৌঁছলে ডুবে যায় নৌকাটি।
এদিকে বাংলাদেশে গত আট দিনে মিয়ানমার থেকে প্রায় ৬০ হাজার শরণার্থী এসেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এসব শরণার্থীর মধ্যে প্রায় সবাই রোহিঙ্গা মুসলিম বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটি। মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে এসব মানুষ পালিয়ে এসেছে বলে জানায় ইউএনএইচসিআর।
Posted ১:৩১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta