হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(৩০ মে) :: টেকনাফে দীর্ঘদিন পর ঘূর্ণিঝড়ের প্রায় ১০ঘন্টাব্যাপী তান্ডবে বসত-বাড়ি,ধর্মীয় উপাসনালয়, দাতব্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,গাছপালা,ফসল,মৎস্য ঘেঁর ও মওজুদকৃত লবণের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এসময় ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ৩০জন গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
প্রধান সড়ক ও আভ্যন্তরীণ সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ৪/৫ঘন্টা প্রচেষ্টার পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও বাহারছড়া-হোয়াইক্যং ঢালাপথ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও সার্ভিস লাইন উড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে গ্রাহকেরা। তবে বিদ্যুৎ কর্মীরা তা দ্রুত নিরসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন ৩০মে রাত প্রথম প্রহর হতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা উপকূল অতিক্রম করার পূর্ব ঘোষণায় স্থানীয় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ধমকা বাতাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে লোকালয়ে আঘাত হানলে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন,শাহপরীরদ্বীপ,সাবরাং, টেকনাফ পৌরসভা ও সদর,বাহারছড়া,হ্নীলা এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার কাঁচা, আধাপাকা বসত-বাড়ি,মসজিদ,মাদ্রাসা,ক্যাং,মন্দির,শিক্ষাঙ্গন,দাতব্য প্রতিষ্ঠানসহ অনেক সরকারী-বেসরকারী সংস্থার চালা এবং দেওয়াল ধ্বসে পড়ে।
গভীর রাতে ঘরের চালা মেরামতের সময় বাতাসের সঙ্গে উড়ে গিয়ে হ্নীলা উলুচামরীর মৃত ঈমান শরীফের পুত্র জুহুর আলম (২২) নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রায় দু‘ঘন্টা পর পরিজন তল্লাশী চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে তাকে মুমুর্ষাবস্থায় উদ্ধার করে কুতুপালং ক্যাম্পে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। এছাড়া হোয়াইক্যং মুলাপাড়ার বাদশা মিয়ার পুত্র সেলিম (১২),মিনা বাজারের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এছাড়া উপজেলা হাসপাতালে শামসুল আলম,মোঃ রফিক,মোঃ আরমান,হোসেন,নুর কলিমা,সনজিদা,রাবেয়া আক্তার,নুর জাহানসহ অজ্ঞাতনামা ৩০জনের মতো আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।এদিকে হ্নীলা নাটমোরা পাড়ার জালাল উদ্দিনের মৎস্য ঘেঁর,হানিফ এন্টার প্রাইজের মওজুদ করা ২৫লক্ষ টাকার লবণ গুদাম,পূর্ব সিকদার পাড়ার নুরুল আমিনের কবুতরের চাষ,লেচুয়াপ্রাংয়ের রফিক মুন্সীর কলা,আম ও লিচু বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানের মৎস্য ঘেঁর,পোল্ট্রি ফার্ম ও লবণের গোদাম ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষ লক্ষ গাছ,পানের বরজ,শত শত একর শসা,ছিছিংগা,কাকরোল,বেগুন,ঢ়েড়ঁশ,লাউ, বটবটিসহ নানা ফসলের চাষাবাদ উপড়ে গেছে। বাতাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা পাতা, আর্বজনা হতে দূর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। তা অপসারণে দ্রত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়াসহ নানা ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন।
বাতাসের তীব্রতায় হোয়াইক্যং কুতুবদিয়া পাড়ায় ৪টি,পূর্ব ফুলের ডেইল১টি,হ্নীলা পূর্ব-পশ্চিম সিকদার পাড়ায় ২টি,জাদিমোরায় ২টিসহ পুরো উপজেলায় প্রায় ৫৯টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্থ ও ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি হাজারো সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় সপ্তাহ খানেক ব্যাহত হতে পারে বলে টেকনাফ জোনাল অফিসের ডিজিএম মোঃ শহীদ উল্লাহ আশংকা করলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে লাইন চালুর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান মিয়া জানান,ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে প্রাণহানি বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও প্রায় ৩হাজারের মত কাঁচা ও আধা পাকা বসত-বাড়ি তীব্র বাতাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবী করেন।
হোয়াইক্যং মডেল ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান রাকিব আহমেদ বলেন,অত্র ইউনিয়নের অসংখ্য গাছপালার পাশাপাশি প্রায় দেড় হাজার পরিবার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারেনি। তবে সাবেক ইউপি সচিব হাকিম উদ্দিন পাহাড়ী বলেন,গাছপালা,শাক-সবজি ও বিভিন্ন ফসলাদি ছাড়াও প্রায় ১৬শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবী করেন।
এলাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানার জন্য ইউএওন,উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে এত বড় মহাদূর্যোগে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কোন মেম্বার,মহিলা মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছে না পাওয়ায় ভূক্তভোগীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
Posted ১০:৪২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta