কক্সবাংলা ডটকম(১৩ আগস্ট) :: ডোকলাম ইস্যুতে ভারত একজন প্রাপ্তবয়স্কর মতো আচরণ করছে। কিন্তু সিকিম সীমান্তে চিনের আচরণ একজন সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পা দিয়েছে এমন কিশোরের মতো। বেজিংয়ের বিরুদ্ধে এই ভাষাতেই তোপ দাগলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধানের বদলে গরমাগরম বক্তব্য পেশ করতেই বেশি উৎসাহী চিন।
গত ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ডোকলামে ভারত ও চিনের সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। বন্দুকের নল নিচের দিকে, প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকার এই ভঙ্গিকে বলে ‘নন কমব্যাট মোড’। ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনের সরকারি বাহিনী ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ-র অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ঘাঁটি গেড়েছেন ভারতীয় জওয়ানরা।
“১৯৬২-র যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী চিন সীমান্তে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুরোপুরি তৈরি। শত্রুরা কোনও ‘মিস অ্যাডভেঞ্চার’ করার দুঃসাহস দেখালেই তাদের কল্পনাতীত উপযুক্ত জবাব পাবে।”, বেজিংকে সতর্ক করে মন্তব্য করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মার্কিন নৌসেনার নেভাল ওয়ার কলেজের ‘স্ট্র্যাটেজিস্ট’ জেমস হোমস। তিনি বলছেন, ‘এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লির সবক’টি পদক্ষেপই একেবারে সঠিক। চিনের বিরুদ্ধে ভারত কখনই অতি-আগ্রাসন দেখায়নি। আবার বেজিং রণহুঙ্কার ছাড়লে মুখ বুজে মেনেও নেয়নি।’
কিন্তু বেজিংয়ের পদক্ষেপের সমালোচনা করে তিনি জানিয়েছেন, চিন যুদ্ধের আস্ফালন দেখালেও বিলক্ষণ জানে ভারতে হামলা চালানো সহজ হবে না। চিন নিজেই সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। চিনের আচরণ সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পা রাখা একজন কিশোরের মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে লোকসভায় এক বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছিলেন, “ডোকলাম মালভূমি ভুটানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে চিন বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ করেছে এবং নিজের অধিকার দাবি করছে। ডোকলামের কাছে চিনা সেনারা যে সড়ক নির্মাণ করছে তা ভারত ও ভুটানের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপদজনক। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সীমান্তের খুব কাছে চিনা সেনারা কোনও সড়ক বা সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ করতে পারে না। তা ছাড়া ভুটানের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষার জন্য ভারত দায়বদ্ধ। সেই তাগিদ থেকেই ডোকলামে চিনা সেনাদের অনুপ্রবেশে ভারত বাধা দেবেই।
চিনা বিদেশমন্ত্রক পালটা জানায়, ডোকলাম ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার কোনও যুক্তিই নেই। আলোচনায় গেলে চিনের মানুষ মনে করবেন চিন সরকার ভারতকে অযথা সমীহ করছে এবং সরকার দুর্বল বলে আপস করতে চাইছে। এই অবস্থায় নিঃশর্তভাবে ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, না হলে যে কোনও সময় সংঘর্ষ হতে পারে। সংঘর্ষ একবার শুরু হলে তা ডোকলামে থেকে ছড়িয়ে পড়বে কাশ্মীর থেকে অরুণাচল পর্যন্ত।
বিবৃতি-পালটা বিবৃতির এই দাবা খেলায় মোক্ষম চাল খেলেছে ভারতও। একদিকে জাপান ও মার্কিন সেনার সঙ্গে বৃহত্তম যৌথ নৌমহড়া সেরে রেখেছে নয়াদিল্লি, অন্যদিকে সিকিম সীমান্তেও সেনা মোতায়েনের বহর বেড়েছে। ভুটান সরকারও রীতিমতো প্রেস বিবৃতি জারি করে আন্তর্জাতিক মহলে অভিযোগ তুলেছে, ডোকলামের যে অংশে চিন সড়ক-রেলপথ তৈরি করতে চাইছে সেটা ভুটানের ভূখণ্ড।
যদিও চিনা সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস এই যুক্তি মানতে নারাজ। প্রায় নিত্যদিনই ওই সংবাদপত্রে ভারতকে আক্রমণ করে কোনও না কোনও বিস্ফোরক, ভুয়ো বিবৃতি প্রকাশিত হচ্ছে। মিথ্যা খবর প্রকাশ করে আদতে চিনের মানুষকেই অন্ধকারে রাখতে চাইছে সে দেশের কমিউনিস্ট সরকার, অভিযোগ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।
Posted ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta