কক্সবাংলা ডটকম(৭ আগস্ট) :: ঢাকা-মস্কো সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে। শিগগিরই যাত্রীবাহী ফ্লাইটও চালু হবে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বাড়াতে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট (এএসএ) হালনাগাদের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি ৩ থেকে ১৪টিতে উন্নীত করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সব রকম অনুমোদন ও সনদকে স্বীকৃতি দেবে রাশিয়া। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ যখন বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ করেছে, তখন রাশিয়ার আগ্রহেই এ চুক্তি হলো।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের পরিসর বাড়াতে ঢাকার সঙ্গে চুক্তি করেছে মস্কো। ঢাকা ও মস্কোর মধ্যকার ১৯৭৩ সালের এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্টটি (এএসএ) হালনাগাদ করা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই মস্কোতে দুই দেশের হালনাগাদ চুক্তিটি সই হয়।
এজন্য বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মস্কো সফর করে। ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করে রাশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ট্রান্সপোর্টেশন।
জানা গেছে, প্রথম অবস্থায় ঢাকা-মস্কো রুটে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে রাশিয়ার এয়ার ব্রিজ কার্গো এয়ারলাইনস (এবিসি)। পরবর্তীতে চালু হবে যাত্রীবাহী ফ্লাইট। যাত্রীবাহী বিমানের জন্য বর্তমান সমঝোতা স্মারকে ঢাকা-মস্কো সরাসরি অথবা তৃতীয় রাষ্ট্র ভারতের দিল্লি হয়ে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স) উইং কমান্ডার চৌধুরী এম জিয়াউল কবির বলেন, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় আগের এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্টকে আরো হালনাগাদ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হালনাগাদ চুক্তিতে দুই দেশের সাপ্তাহিক ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি তিন থেকে বাড়িয়ে ১৪টি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেবিচকের অনুমোদিত বৈমানিক লাইসেন্স, এয়ারওয়ার্দিনেস ইন্সপেক্টর, কেবিন ক্রুসহ আনুষঙ্গিক সব সনদকে স্বীকৃতি ও গ্রহণ করবে রাশিয়া। এতে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনে রাশিয়া গত বছর আগ্রহের কথা জানায়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরীকে লেখা এক চিঠিতে ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সজেন্ডার ইগনাতোভ এ আগ্রহের কথা জানান।
চিঠিতে রাষ্ট্রদূত বলেন, রাশিয়ার এয়ারব্রিজ কার্গো এয়ারলাইনস এলএলসি (এবিসি) বাংলাদেশে সরাসরি কার্গো পরিবহনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজে ঢাকা-মস্কো হয়ে সিঙ্গাপুর বা সাংহাই পর্যন্ত সপ্তাহে মোট তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়।
রুশ রাষ্ট্রদূতের চিঠিতে ঢাকা ও মস্কোর ১৯৭৩ সালের এএসএ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের কার্গো পরিবহনে সব ধরনের ব্যবসায়িক সুযোগ চাওয়া হয়। রাশিয়ার যেকোনো পণ্যবাহী উড়োজাহাজ যাতে ঢাকাসহ অন্যান্য বা মধ্যবর্তী যেকোনো গন্তব্যে যেতে পারে, সেজন্য অনুমতিও চাওয়া হয়। একই সঙ্গে সপ্তাহের সাতদিন ফ্লাইট পরিচালনার এবং থার্ড ও ফোর্থ ফ্রিডম (ফ্লাইট আগমন ও প্রস্থানের স্বাধীনতা) চাওয়া হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রধানত চারটি পণ্য আমদানি করে রাশিয়া। এগুলো হলো— তৈরি পোশাক, চিংড়ি, আলু, পাট ও পাটজাত পণ্য। বিপরীতে রাশিয়া বাংলাদেশে শিল্পের কাঁচামাল, গম ও পটাশ সার রফতানি করে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক, চামড়াসহ বিভিন্ন পণ্য অন্য দেশের ট্রানজিট হয়ে ঢাকা থেকে রাশিয়া পাঠানো হচ্ছে।
ইতিহাদ, কাতার, এমিরেটস ও টার্কিশ এয়ারলাইনস নিয়মিত এসব পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে মস্কোয়। সপ্তাহে প্রায় ৩০০ টন কার্গো যাচ্ছে রাশিয়ায়। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে পণ্য পরিবহনে ব্যয় ও সময় কমে আসার পাশাপাশি রফতানির পরিমাণও বাড়বে।
ঢাকা-মস্কো সরাসরি ফ্লাইট প্রসঙ্গে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, দুই দেশের মধ্যকার আকাশপথে চলাচল গতিশীল হলে কূটনৈতিক সম্পর্কও জোরদার হবে। ১৯৭৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি ফ্লাইট চলাচলের যে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট করা হয়েছিল, এবার সেটাই হালনাগাদ করে পুনরায় ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, একসময় রুশ এয়ারলাইনস অ্যারোফ্লোট ঢাকা থেকে নিয়মিত যাত্রী বহন করত। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ওই ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
Posted ৯:১০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta