কক্সবাংলা ডটকম(২৩ মে) :: বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক ৮ হাজার ৮০০ থেকে নয় হাজার মেগাওয়াট। এর সঙ্গে ২০ শতাংশ রিজার্ভ সক্ষমতা যোগ করলে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে মোট সক্ষমতার প্রয়োজন ১২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বাড়তি এ সক্ষমতার পরও রাজধানীতে দৈনিক দেড়-দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার বাইরে এ চিত্র আরো ভয়াবহ।
সক্ষমতার পরও লোডশেডিংয়ের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন হ্রাস, গ্যাস সংকট ও সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। পরিস্থিতি উন্নয়নে বিতরণ কোম্পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তার পরও পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
পিডিবির উৎপাদন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ মে সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৮ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। পিক আওয়ারে (সর্বোচ্চ চাহিদার সময়) ওইদিন সর্বোচ্চ উৎপাদনও একই পরিমাণ দেখানো হয়। অথচ ২২ দিন ধরে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামে যেভাবে লোডশেডিং হয়েছে, একই পরিমাণ লোডশেডিং ছিল ওইদিনও। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে লোডশেডিং নেই বলে দাবি করে আসছে পিডিবি। ১ ও ২ মে দেশের ৩৮টি জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলেও ওই সময়ও লোডশেডিং হয়নি বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পিডিবি।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গতকাল বৈঠক করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সম্প্রতি দুটি টাওয়ার ভেঙে যাওয়া ও ১০টি পাওয়ার প্লান্ট রক্ষণাবেক্ষণের অধীনে আছে। পাশাপাশি গ্যাসের স্বল্পতাও রয়েছে। এ কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। তবে চারদিনের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির তখন উন্নতি হবে।
পিডিবি সূত্রমতে, বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। কিছু কেন্দ্রে আবার কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রায়ই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ৫৬৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে অনেক কেন্দ্র বন্ধ কিংবা সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অন্তত ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায়ই কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) আবুল বাশার খান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রায় সব কয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপকদের নিয়ে সভা ডেকেছি। কীভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। চিকিত্সাসেবা ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয়। রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতালেই দিনের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ জেনারেটরের সাহায্যে আইসিইউ, সিসিইউসহ অন্যান্য জরুরি ইউনিট চালু রাখতে হচ্ছে।
তবে রাজধানীর বাইরের পরিস্থিতি আরো নাজুক। নরসিংদীতে ৫-৬ ঘণ্টা ও ঝিনাইদহে ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। একই পরিস্থিতি ছিল বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ প্রায় সব জেলায়ই।
উল্লেখ্য, ১ মে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় গ্রিডের একটি টাওয়ার ভেঙে পড়ে। এ সময় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস ইঞ্জিনসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, আশুগঞ্জসহ আশপাশের এলাকাগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরদিন দুপুরে দ্বিতীয় দফা টর্নেডোয় ঈশ্বরদী-ঘোড়াশাল ২৩০ কেভি জাতীয় গ্রিড বিকল হয়ে যায়। দুটি টাওয়ার ভেঙে পড়ায় উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৮টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এখন পর্যন্ত টাওয়ারগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
Posted ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy