কক্সবাংলা ডটকম(১ ফেব্রুয়ারি) :: নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি শেষ হওয়ার পরও সব শিক্ষার্থী সব বই পায়নি।বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পেয়েছে আংশিক বই।
৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে জানুয়ারির শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় ২১ কোটি বইয়ের কাজ শেষ হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এখনো প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ১৯ কোটি বইয়ের কাজ বাকি।সব বইয়ের কাজ শেষ হতে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বই পেয়েছে প্রথম থেকে তৃতীয় ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই চার শ্রেণির বইয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৫০ শতাংশ বইয়ের কাজ শেষ।
সবচেয়ে পিছিয়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি। তাদের মাত্র ৩৪ শতাংশ বইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ এই চার শ্রেণির ৬৬ শতাংশ বইয়ের কাজই বাকি।
তবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা আর্ট পেপার পাচ্ছিলাম না। কাগজের সংকটও ছিল। পরে ছাত্র প্রতিনিধি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের সহায়তায় সে সমস্যার সমাধান হয়েছে।’
বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রেসগুলোতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। আমরা গত বছরের শেষ দিকে একসঙ্গে সব ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছি।
আবার বাজারে কাগজের সংকট রয়েছে। ফলে এর চেয়ে গতি বাড়ানোর সুযোগ আমাদের ছিল না।
তবে মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি থেকে আমাদের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বইয়ের কাজ শেষ করতে বলেছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
এর পরও মনে হচ্ছে, সব বইয়ের কাজ শেষ হতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে।’
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই।
প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই।
মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই।
এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা ছাপা হচ্ছে।
জানা যায়, সবার আগে নভেম্বরের প্রথমার্ধেই শুরু হয়েছে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ। এরপর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের কার্যাদেশ ও চুক্তিপত্র শেষে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তা ছাপার কাজ শুরু হয়।
ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের ছাপা শুরু হয়েছে।ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নবম ও দশম শ্রেণির বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, এনসিটিবি ডিসেম্বরের শেষ দিকে বছরের শুরুতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীকে তিনটি করে বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন প্রেস মালিকরা।
কিন্তু আবার এনসিটিবির অনুধাবন হয়, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গত বছর নতুন শিক্ষাক্রমের বই পড়েছে। এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম না থাকায় তাদের জন্য এক বছরের উপযোগী বই করা হয়েছে।
তাই দশম শ্রেণির সব বইয়ের কাজ আগে শেষ করা দরকার।এ জন্য অন্য সব শ্রেণির বই কমিয়ে দিয়ে দশম শ্রেণির বইয়ের কাজ শুরু হয়।
তবে বইয়ের কাজ পুরোদমে শুরুর পরই কাগজের সংকট দেখা দেয়। আবার অনেক প্রেস মালিক তাদের সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত বইয়ের কাজ নেয়। ফলে কাজের গতি কমে যায়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এনসিটিবি সবচেয়ে বেশি অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে ছাপার কাগজ নিয়ে। চাহিদামতো ৪০ কোটি বই ছাপাতে কত হাজার টন কাগজ প্রয়োজন এবং দেশে কাগজের এই সক্ষমতা আছে কি না সেটা তারা বিবেচনায় নেয়নি।
ফলে ছাপাখানাগুলো একসঙ্গে কাজ শুরু করতে গেলে কাগজের সংকট দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রেও এনসিটিবি দায় চাপায় প্রেস মালিকসহ অন্যদের ওপর। আবার বই পরিমার্জন ও দরপত্র প্রক্রিয়ায়ও বেশি সময় নিয়েছে এনসিটিবি। ফলে নতুন বছরের প্রথম মাস শেষ হলেও এখনো অর্ধেক বইয়ের কাজই বাকি রয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, পাঠ্যবই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে, স্কুলে উপস্থিতিও কমেছে। স্কুলগুলোতে পুরোপুরি ক্লাস হচ্ছে না। আবার জানুয়ারি মাসে স্কুলগুলোতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চললেও সেটাও এখন শেষ। আগামী মার্চ মাস থেকে আবার রোজার ছুটি শুরু হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা সময়মতো বই না পাওয়ায় এ শিক্ষাবর্ষে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
অভিভাবকরা বলছেন, পাঠ্যবই না পেলেও যদি সহায়ক বই পাওয়া যেত, তাহলেও অন্তত পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়া যেত। রাজধানীতে একজন শিক্ষকের কাছে ব্যাচে পড়লেও দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়। সেই হিসাবে কমপক্ষে তিনজন শিক্ষকের কাছে পড়লে অনেক টাকার ব্যাপার। অথচ সহায়ক বই থাকলে চার-পাঁচ শ টাকায় কিনে পড়ালেখাটা চালিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু বাজারে সহায়ক বইও পাওয়া যাচ্ছে না।
মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি বই পেয়েছে। যখন বই আসবে, তখন স্কুলের শিক্ষকরা হয়তো তাড়াহুড়া করে সিলেবাস শেষ করে দেবেন।
তখন চাপ পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। মেধাবীরা কুলিয়ে উঠতে পারলেও অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের শিখন ঘাটতি নিয়েই বছরটা পার করতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, এটা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বড় ক্ষতি।’
Posted ১:৫৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta