মাঈনুদ্দিন খালেদ,নাইক্ষ্যংছড়ি(২১ জুন) :: নির্বিচারে পাহাড় কেটে সাবাড় করে ঝুঁকিতে রাখা নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ের আশপাশ এলাকা বসবাস করছে ৫ হাজার মানুষ। এছাড়া অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে পাহাড়ের গাছ-বাশঁ বনজ সম্পদ উজাড় করার কারণেও নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো অনেক পরিবার। অর্থাৎ নির্বিচারে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের গাছকাটা ও পাথর উত্তেলনের কারণেই যে কোন সময় রাঙ্গামাটির মতো বা এর চাইতে আরো বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এখানে।
এরা পড়তে পারে প্রকৃতিক দূর্যোগের কবলেও। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সর্বত্র অসংখ্য পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও উপজেলা প্রশাসনের সর্তকাবস্থানের কারণে প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটনা ঘঠেনি এখানে। তবে আশংকায় আছে লোকজন।
সরেজমিন ঘুরে আরো জানা যায়,উপজেলার বাইশারী ,ঘুমধুম,সদর ও সোনাইছড়ি এ চার ইউনিয়নে বর্তমানে এ ঝুিকঁতে বসবাস করছে হাজারো মানুষ। যে পাহাড় কাটার চিত্র উপজেলা র অনেক স্থানে দেখা যাচ্ছে প্রকাশ্যে । বিশেষ করে বাইশারীতে এসব চিত্র সবচাইতে বেশী। এখানে অসংখ্য পাহাড় ন্যাড়া ও আছে আর পাহাড় কাটা ও রয়েছে। যাতে জড়িত রয়েছে কয়েকজন বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতা ও ডজনাধিক রাবার বাগান মালিক। যারা নানা পন্থায় নানা এ সব পাহাড় কাটার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
আইন না মেনে পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে চাষের জমি ভরাট করতে তৎপর এসব রাঘব বোয়াল। তারা শুধূ পাহাড় কাটা নয়, সরকারের হাজার হাজার একর জমি সরকারকে না জানিয়ে নিজেরা সরকার বনে অন্যদের দখল বিক্রি করতেও সক্রিয়। আর এ দলে এক পক্ষ বিক্রেতা অপর পক্ষ ক্রেতার দালার সেজে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে। এভাবে তারা কোটি টাকার মালিক বনছে একদিকে আর অপর দিকে পাহাড় ধস সহ নানা ঝুকিঁতে ফেলছে বাইশারীকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাইশারীতে অনেক নেতা রাবার ব্যবসা, সার ব্যবসা বা কাঠ ব্যবসার আড়ালে এ সব কাজ করে এখন কোটি টাকার মালিক বনে ঢাকা –চট্টগ্রামে প্রাসাদ গড়েছেন। চট্টগ্রামে ও বাইশারীতে প্লাট-বাড়ি, অফিস-ব্যবসা খুলে বসেছেন যেন-তেনভাবে। আবার অনেকে বাইশারীতে অবস্থান করে ব্যাংক ভর্তি করছেন কাড়ি-কাড়ি টাকায়।
তারা আরো জানান, বাইশারী এখন পাহাড় কাটা সহ অপরাধমূলক কাজের নিরাপদ এলাকা। আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা গুলোর রহস্যজনক নিরবতায়, মূখোশ পরা অপরাধীরা জঙ্গি তৎপরতা,পাহাড় কাটা, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে গাছ কেটে পাহাড় ন্যাড়া করে পাহাড় ধসের ঝুঁিক বাড়ানো কাজকে স্বাভাবিক কাজে পরিনত করছে বর্তমানে। তারা আইন-কানুন বুঝেও অর্থের লোভে বাইশারীকে কারবালায় পরিনত করতে চায়।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আলম কোম্পানী জানান, তার ইউনিয়ন এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধের বিষয়ে তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন -পারেন নি। উপজেলা প্রশাসনেও বার বার অবহিত করেছিলেন তিনি । কিন্তু বন্ধ হয় নি। আর গাছ,বাশঁ সহ বনজ সহ সস্পদ অপরিকল্পিতভাবে বা অবৈধভাবে কাটলেও বসকর্মকর্তারা এখানে থাকেন না এখানে অবস্থান করে দু’একজন কর্মচারী।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান সহ পাবর্ত্য চট্গ্রামে দেড় শতাধিক লোক নিহত হয়। বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় এ দূর্ঘটনা ঘটলেও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামালের সর্বক্ষণিক তদারকি আর খোজঁখবর নিয়ে পরামর্শ দেয়ার কারণে সে দিন এখানে পাহাড় ধসে লোক মারা যায় নি। যদিও সে দিন অনেক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ছিল।
অপর দিকে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন এলাকায় বাংলাদেশ- মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের কাজে ঠিকাদাররা দালাল নিয়োগ দিয়ে অর্ধশতাধিক পাহাড় কেটে ঝুকিঁতে রেখে এলাকাকে পাহাড় ধসের ঝুকিঁতে ফেলে রেখেছেন। এ এলাকায় পাহাড় কাটার সময় ২ জন শ্রমিক মারাও গিয়েছিল ক’মাস আগে। ঘটনার কথা স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা স্বীকারও করেন এখানে পাহাড় ধসের ঝুকিঁর বিষয়টি।
এদিকে সদর ইউনিয়ন এবং সোনাইছড়িতে পাহাড় কাটা হচ্ছে নিরবে। যার খোজঁখবর নিচ্ছে না কেউ। এভাবে উপজেলার সবর্ত্র পাহাড় কাটা সহ পাহাড় ধসের অপরাধ গুলো প্রকাশ্যে করা হলেও পরিবেশবাদী সরকারী -বেসরকারী সংস্থা গুলো রহস্যজনক কারনে নিরব। লোকজন বলাবলি করছেন-
পরিবেশের লোকজন মাঝে মাঝে সিভিলে এসে পরিবেশ ধ্বংসকারী অপরাধীদের সাথে দেখা করে চালে যান। এ কারনে পাহাড় ধ্বসের ঝুকিঁর কাছ এখানে বন্ধ হচ্ছে না।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসার এসএস সরওয়ার কামাল এ প্রতিবেদককে জানান- পাহাড় কাটা সহ পরিবেশ নষ্টকারী কাজ করা বন্ধের বিষয়ে তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। বারবার ঘটনাস্থলে গিযে এদেরকে বার বার বারণও করেছেন। প্রত্যেক এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানদের এ বিষয়ে কঠোর হতে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। কিন্ত্র অপরাধীরা আইনের ফাকেঁ সব কিছু করে যাচ্ছেন নির্বিগ্নে। তাদের হাত অনেক লম্বা। আর এ কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকটি এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের জমি বাইশারী সহ কতেক দুষ্ট প্রকৃতির লোক কিভাবে বেচা বিক্রি করছে বা করার চেষ্টা করছে অথবা একাজে অন্যদের সহায়তা করছে তা তিনি খতিয়ে দেখে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেবেন। তাদের ছাড় দেয়া সুযোগ নেই।
Posted ৮:০৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২১ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy