মাঈনুদ্দিন খালেদ,নাইক্ষ্যংছড়ি(৪ জুলাই) :: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্রীজ-কালর্ভাট এবং প্রধান ও সংযোগ সড়ক মোরার আঘাতের চিহ্ন নিয়ে নিথত পড়ে আছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় মোরার হানায় নষ্ট হওয়ায় কৃষিতে বহুল আলোচিত এ ইউনিয়নের কলা,লেবু,পেঁেপ,জুমিয়াদের অন্যান্য সবজি ও গাছ বাগানের ক্ষতি পোষাতে সরকারী সহায়তা না পাওয়ায় কৃষকরা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। উপোসে মরছে অনেকে। আর সীমান্তের প্রযোজনীয় যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সীমান্ত রক্ষীদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যা নিয়ে শংকিত সীমান্তবাসী।
সরেজমিন গিয়ে আরো জানা যায়, সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূণিঝড় মুরার আঘাতে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৫ ইউনিয়নের সবকিছু। যার ক্ষতি ব্যাপক। বিশেষ করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দৌছড়ি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড়ের অবস্থা করুন। সীমান্তের অবস্থা আরো উদ্বেগজনক।
ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রামের বাসিন্দা মো: আয়াজ জানান,মোরা ঘূণিঝড় আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় সব মূল্যবান সম্পদ।
তুলাতলী,গুরুন্যাকাটা,শীলঘাটা,জারুলিয়াছড়ি ও আশপাশের প্রতিটি এলাকার রাসাতা-ঘাট এখন চলাচল অনুপযোগি। আর সমতল ও টিলাতে করা নানা ধরনের বাগানের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু কী আর করা। এ অবস্থায় সরকারী অনুদান খুবই অপ্রতুল।
ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার দেলওয়ার হোসেন জানান, মোরা ঘুর্ণিঝড় চলাকালে তিনি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেই ঘূণিঝড় বয়ে যাওয়ার সময় থেকে আজ অবধি প্রায় ১ মাস পার হয়ে গেল অথচ সরকারী কোন দৃশ্যমান সাহায্য
তার ইউনিয়নে পৌছে নি। এবং রাস্তা ঘাটের কোন পূণ: সংস্কার করে নি উপজেলা প্রকৌশল অফিস বা পিআইও অফিস। তিনি আরো বলেন,বর্তমানে এখানকার সকল সড়ক বা সংযোগ সড়ক অচল। গাড়ি চলাচল পুরো ইউনিয়নে বন্ধ ১ মাস।
ইউনিয়নের বাহিরমাঠ এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান,তার জীবন নির্বাহের প্রধান অবলম্বন নিজের রোপিত এবং গড়া একটি লেবু বাগান। যে বাগান থেকে সে প্রতি বছর এক লাখ বিশ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করতো। যা তার সারা বছরের হাট বাজারের বাজেট ছিল। সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূণিঝড় মোরা তার বুকে আঘাত দিয়ে সব কিছু নিয়ে যায়। লেবু বাগানটি এখন গো চারণভূমি।
এখন সারা বছর সে কী করবে এবং বর্তমানে কীভাবে চলবে ভেবে কূল পাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ ধরে সে ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত। টাকা পায়সা কিছুই নেই বলে এখন সে পথের ভিখারী।
এভাবে ইউনিয়নের হাবিবুর বহমান,আবদুল গফুর, নুর হোসেন,মো ইউনুছ ও অং শৈ মার্মা সহ শতশত বাসিন্দার ্আকুতি মোবারক হোসেনের মতোই।
দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবুল্লাহ জানান,মোরাবক,গফুর,হাবিবদের মতো অন্তত ৮/১০ হাজার লোক আজ মোরার ক্ষতিতে নি:স্ব। তাদের কে খয়রাতি সাহায্য দিয়ে তিনি কোন মতে বাচিয়ে রেখেছেন এ পর্যন্ত। এভাবে তো আর না। সরকারী সহায়তা ছাড়া এরা বাচঁবে না।
তিনি আরো বলেন, ককসবাজার,চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানে তার এলাকার লেবু,কলা,আম,পেয়ারা,বাশ,গাছ ও অন্যান্য উৎপান্ন দ্রব্য চাহিদা পূরণ করে থাকে। রাবার বাগান সহ আরো ভাল পণ্য এখানে উৎপন্ন হয়। কিন্ত তার এলাকার এসব পণ্য সামগ্রীর দর পানির মূল্যে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের সাথে দৌছড়ি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তা –ঘাট লন্ড-ভন্ড হয়ে পড়ায় এখন সরাসরি গাড়ি চলাচল বন্ধ। সড়কের দৌছড়ি নারিকেল বাগান এলাকা সহ অসংখ্য স্থানে ভাংগন।আবার অনেক স্থানে ব্রীজ বা কালভাটের ভাংগন। সব মিলে বেহাল দশা তার ইউনিয়নে।
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীর একটি সূত্র দাবী করেন,মোরার আঘাতে প্রধান সড়ক সহ অন্যান্য সংযোগ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর থেকে তারা ভারী বেকায়দায় পড়েছে। ১০/১২টি সীমান্ত চৌকিতে রশদ-পত্র নিতে এখান আদিম কৌশল তাদের এক মাত্র ভরসা। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তে কোন বিপদ হলে কীভাবে তারা মোভ করবে ভেবেও কূল পাচ্ছে না এখন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কেন নিরব বলাও মুশকিল।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান,আসলে মোরার আঘাতে রাস্তা-ঘাট ক্ষতির বিষয় দেখবাল করার দায়িত্ব তার। কিন্ত জেলার নির্বার্হী প্রকৌশলী এ এলাকার জন্যে বরাদ্ধ কম দেয়ায় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের জন্যে কিছুই করতে পারছেন না। কেননা তার ক্ষমতা সীমিত।
Posted ১০:৪৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta