
আব্দুল হামিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি(৯ সেপ্টেম্বর) :: পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী গহীণ অরণ্যে অবস্থিত এবং উন্নয়নশীল একটি গ্রামের নাম গয়ালমারা । প্রায় শতাধিক পাহাড়ী-বাঙ্গালী পরিবারের বসবাস এ গ্রামে । অনেক বছর ধরে বসবাস করছে লোকজন উক্ত গ্রামে ।
৮সেপ্টেম্বর সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ী আকাঁ বাঁকা পথ , উচু নিচু ,সমতল ও পাহাড় বেষ্টিত গ্রামটিতে রয়েছে প্রচুর চাষাবাদের জমি এবং কয়েক হাজার হেক্টর রাবার বাগান । চোখের পলক যে দিকে যাই শুধু চাষাবাদের জমি আর বাগান । প্রচুর সম্ভাবনাময়ী গ্রামটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। গ্রামটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড হলেও লামা এবং ফাঁসিয়াখালী থেকে অনেক দুরে গভীর জঙ্গলে অবস্থিত ।
এমনকি লামা ও ফাঁসিয়াখালী হতে গ্রামটিতে আসার কোন রাস্তা নেই । কক্সবাজার রামু উপজেলার ঈদগড় বাজার হয়ে উক্ত গ্রামে যেতে হয় সরকারী যে কোন বাহীনিকে । বলতে গেলে আলিকদম,লামা থেকে ঈদগড় এসে তারপর ঐ গ্রামে যেতে হয় ।
ঈদগড় বাজার থেকেও অনেক দুরে এ গ্রাম । পাহাড়ী দুর্গম পথ পেরিয়ে অনেক দুরের পথ কিছুটা গাড়ী এবং পায়ে হেটে খাল বিল অতিক্রম করে এ গ্রামে যাওয়া সম্ভব হয় । বর্ষাকালে যাওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে । ফলে গ্রামবাসীর চরম দুর্ভোগ দেখা দেয় । শত বছর ধরে এখানকার লোকজন প্রতি শুক্রবার ঈদগড় বাজারে আসে কেনা কাটা করতে।
এছাড়া ঈদগড় ও ঈদগাহ এলাকার প্রায় ৫০জনের মতন ব্যক্তি মালিকানাধীন ঐ গ্রামে কয়েকশত কোটি টাকা খরচ করে রাবার বাগান করে ।
গ্রামের লোকজন ও বাগান মালীকের সাথে আলাপ কালে জানা যায় , বিগত কয়েক বছর ধরে গ্রামটিতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতন ও চাঁদাবাজী করে আসছে। এমনকি তাদেরকে চাঁদাও দিতে বাধ্য করেছে ।
উক্ত গ্রামের বাসিন্দা সর্দার নুরুল আজিম জানান, ভারী অস্ত্রধারী এসব ২০/৩০জনের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে গ্রামবাসীসহ বাগান মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে । দিনের পর দিন তাদের নির্যাতনের হার বেড়েই চলছে। স্থানীয় উপজাতীয়দের তাদেরকে খাবার সহ যাবতীয় সহযোগিতা দিতে বাধ্য করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মান্নান, রশিদ আহমদ, মকবুল আহমদসহ অনেকেই তাদের অত্যাচারে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।
পিএইচপি রাবার বাগানের সিনিয়র সুপার ভাইজার সিরাজুল ইসলাম জানান, গত মে মাসের ১তারিখ তাদের বাগানের অফিসে উক্ত সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে তাকে চাঁদার জন্য চিঠি দেয় এবং চাঁদা না দিলে বাগানসহ সব কিছু উড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। চলে যাবার সময় সন্ত্রাসীরা একটি পালিত ছাগলও নিয়ে যায় বলে তিনি জানান।
উক্ত ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিগত সময়ে কয়েক দফা অভিযানও পরিচালনা করেন। ঐ সময় জোয়াকি ত্রিপুরা নামের এক সন্ত্রাসীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এরপর থেকে সন্ত্রাসীরা গয়াল মারা, চিনির ঝিরি, মুক্তারাম কারবারী পাড়া, রাচন্দী পাড়া, নতুন ত্রিপুরা পাড়া, আলীক্ষ্যং, সাপমারা ঝিরি, বাইশারী ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি সহ বিভিন্ন গ্রামে বেপরোয়াভাবে ঘুরাফিরা সহ চাঁদাদাবীর জন্য বাগান মালিক ও এলাকাবাসীর নিকট মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে ১নং ওয়ার্ড গয়াল মারা ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন জানান, গত ১ বছর যাবত ২০/৩০ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসী ও রাবার মালিকদের নিকট চাঁদা দাবী সহ নানা ধরনের নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তিনি বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, দুর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় সন্ত্রাসীরা গয়ালমারা সহ বিভিন্ন জায়গায় অবাদ বিচরণ করে আসছে। তাদের অত্যাচারে বাগান মালিক ও এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাই উক্ত এলাকায় একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বসবাসরত লোকজন, বাগান মালিক সকলেই সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরাপদে থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

Posted ৪:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta