হাবিবুর রহমান সোহেল,নাইক্ষ্যংছড়ি(২০ জানুয়ারী) :: সমপ্রতি আবারো অপহরন আর ডাকাতির স্বর্ঘরাজ্যে পরিনত হয়েছে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার জেলার রামুর গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া এবং ঈদগড়। এই সব এলেকায় প্রতিনিয়ত দিন দুপুরে ডাকাতি আর অপহরন যেন নিত্য দিনের রুটিন হয়ে গেছে। ফলে ওই এলেকার হাজারও মানুষ এখন অপহরন আর ডাকাত আতংকে ভোগছে।
যার কারনে এখন ওই এলেরকার মানুষের পাশা পাশি বাইরের জনসাধারন ও ওই নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী আর রামুর গর্জনিয়া ও ঈদগড়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। সচেতন মহলের দাবী এভাবে এলেকার আইন শৃংখলা অবনতি হলে ওই দু এলেকায় ব্যবসা বানিজ্য তো দুরের কথা মানুষ বসবাস করতে পারবে না।
সরজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, ঈদ গাঁও ঈদগড় সড়কে বেশ ৩/৪ কিঃমিঃ পথ বেশী দুর্গম আর গহিন অরন্য এলেকা হওয়ায় অপহরন কারী আর ডাকাত দলের নিরাপদ আশ্রয় স্তানে পরিনত হয়েছে ওই যায়গা। ঈদগাও বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দের দুরত্বের কারনে এ দু এলেকায় অপরাদ প্রবনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলেকার জন সাধারনের দাবী ওই ঈদগাও বাশারী সড়কের দুর্গম এলেকায় পুলিশের পাশাপাশি রেপিটএকশেন ব্যাটালিয়ান স্তাপন করা হউক।
সুত্রে জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের বাঁকখালী মৌজার লংগদু এলাকা থেকে ৪ যুবক অপহরণ করা হয়েছে।
অপহরূত ব্যক্তিরা হলেন গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বোমাংখিল গ্রামের মৃত্যু আলী মদনের পুত্র আবু ছৈয়দ (৪০),থোয়াঙ্গার কাটা গ্রামের নুরুল আলমের পুত্র আবদুল আজিজ( ১৬)মো: রহিম, পিতা: আবদু রহমান । থিমছড়ির রশিদ আহমদের পুত্র শাহ্ আলম (৪০), অপহরণকারীরা লংগদু নারিচবুনিয়া গ্রামের নুরুল আলমের তামাক ক্ষেতের খামার বাড়ি থেকে তাদের কে গতকাল ২০ জানুয়ারী ভোর রাতে অপহরণ করেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, তারা দীর্ঘ দিন ধরে লদুর মুখ এলাকায় চাষাবাদ করে আসছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে সেখানে পাহাড়ী স্বশস্ত্র গোষ্ঠী তৎপরতা চালাচ্ছে। নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দিলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এছাড়াও বাঙ্গালী ডাকাতদল ও সেখানে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা যায়।
অপহৃতদের উদ্ধারে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছে একালাবাসী। সেই সাথে ওই এলাকায় নিয়মিত সেনাবাহিনীর টহল জোরার করার দাবি জানায় তারা। অন্যথায় পাহাড়ি জনপদে আবারও আইন শৃংখলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এদিকে অপহরনের খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও বিজিবি অভিযানে নেমেছে বলে একটি সুত্রে জানা গেছে। প্রশাসন উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ওই আলোচিত ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের ঢালা এলাকা থেকে অপহরণকারীরা যাত্রীবাহী গাড়ির গতিরোধ করে আবারো ব্যবসায়ীসহ ২ জন যাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।
জানা যায়, ২৮ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে ঈদগাঁও থেকে কক্সবাজার থ ১১-১৭৩০ নং একটি যাত্রীবাহী সিএনজি ও অপর একটি ভাড়াটিয়া মোটর সাইকেল ঈদগাঁও থেকে ঈদগড় যাওয়ার পথে উল্লেখিত সড়কের গজালিয়া ঢালা এলাকায় পৌছলে আগে থেকে উৎ পেতে থাকা ৮/১০ সশস্ত্র মুখোশধারী ডাকাত দল তাদের গতিরোধ করে যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা এবং মোবাইলসহ সর্বস্ব লুট করার পর সিএনজি যাত্রী ঈদগড় বায়তুশ শরফ পাড়া এলাকার খুইল্যা মিয়ার পুত্র ঈদগড় বাজার কাঁচা তরকারী ব্যবসায়ী নুরুল আমিন (৩৫) ও মোটর সাইকেল চালক একই এলাকার মৃত আহসাব মিয়ার পুত্র হেলাল উদ্দীন (২০)কে টেনে হেচড়ে পাশর্^বর্তী পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়।
পরে অপহরণকারীরা অপহৃত ২ জনের অভিভাবকদের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। বিষয়টি তারা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করলে পুলিশ স্থানীয় লোকজন নিয়ে পাহাড়ী এলাকায় দ্রুত অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তাদের কোন হদিস বা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
অপহৃত নুরুল আমিনের সালা আবদুল্লাহর সাথে বিষয়টির ব্যাপারে কথা বললে তিনি অপহরণ ও মুক্তিপণের টাকা দাবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পাহাড়ে অভিযানে থাকা এএসআই মোর্শেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অপহৃত ২ জনকে উদ্ধারে সার্বক্ষনিক প্রচেষ্টা এবং পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি জানান, ঈদগাঁও ঈদগড় সড়কে নিরাপত্তার কারণে ৯টার পর থেকে গাড়ী চলাচল বন্ধ থাকলেও রাত ১০টার পর কিছু অসাধু ড্রাইভার তা না মানার কারণে এরকম দূর্ঘটনা ঘটছে। ঘটনার সাথে অনিয়মিত গাড়ি চলাচলকারী ড্রাইভারদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর রাতে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের পানের ছড়া ঢালা থেকে অপহরণকারীরা ঈদগড় ঠুটার বিল এলাকার আবুল হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ রুবেলকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়।
আলোচিত এ সড়কে ধারাবাহিকভাবে ইদানিং ডাকাতি, অপহরণ বেড়ে গেলেও অপহরণকারীরা প্রশাসনের হাত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় যাত্রী সাধারণ অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে যৌথ অভিযানের দাবী জানান। এর আগে, ওই এলেকা থেকে দু জন অপহরনের ঘটনায় এখনো পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।
এ নিয়ে কথা বলতে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ তৌহিদ কবিরের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমার এলেকায় আইন শৃখলা পরিস্তি স্বাভাবিক এবং আমরা অপরাদের কোন প্রকার ছাড় দিয় না।
এ দিকে ঈদগড়ের সার্বিক পরিস্তি জানতে রামু থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অপহৃতের উদ্বার ও অপহরন কারী কে ধরতে তাদের অভিযান চলছে এবং চলবে।