আব্দুল হামিদ,সীমান্ত থেকে ফিরে(৩১ আগস্ট) :: সম্প্রতি শুরু হওয়া রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন যার কারণে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গ্যা। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী আদিবাসী রোহিঙ্গা মুসলমানরা কয়েক দশকধরে জাতিগত নিধনের শিকার হচ্ছে। তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার সরকার।
বার্মার মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানের কান্নায় পৃথিবীর আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠছে। মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুরা বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করছে। মায়ানমারের সরকার তাদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। হত্যা করছে অসংখ্য নিষ্পাপ শিশু, যুবক, বৃদ্ধাদের।
ধর্ষণ করে কলঙ্কিত করছে অসংখ্য মা-বোনদের। বিধবা করছে হাজারো নারীদের। সন্তানহারা করছে অসংখ্য মাকে। মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের আহাজারিতে পৃথিবীর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠছে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে মিয়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীর মাঝেও অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। সীমান্তের দুই দেশের মধ্যে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে সীমান্তে এখন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বুধবার ৩০আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়-বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা সীমান্তে (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) জিরো পয়েন্টের পাঁচটি পাহাড়ে অন্তত ২৩ হাজার রোহিঙ্গা গরু ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
তাঁরা সীমান্তের বড়ছনখোলা ভিতরের ছড়া, ছেড়াখালের আগা, আতিকের রাবার বাগান, সাপমারাঝিরি ও নুরুল আলম কোম্পানির রাবার বাগানেও এইসব রোহিঙ্গারা ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে গত শুক্রবার থেকে অনিশ্চিত জীবন পার করছেন।
মিয়ানমারের কাঁটাতার ভেদ করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকাও ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ হচ্ছে। তবে তাঁরা যেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছেন বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির সদস্যরা আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে রেখেছেন।
বাংলাদেশের স্থানীয়রা মানবতা দেখিয়ে তাদেরকে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন।
বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল সীমান্ত পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ৩১ বিজিবির উপঅধিনায়ক মেজর আশরাফ আলী এ ব্যাপারে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নজর দারি বাড়ানো হয়েছে। তারা জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে। পাশাপাশি সীমান্তে সব ধরনে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে-তাঁরা যেন আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ না করে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
সরজমিনে আরো দেখা যায়, বর্তমানে জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত হাজার হাজার রোহিঙ্গ্যা নারী-পুরুষ এখন অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত দুইদিন যাবত বৃষ্টি হওয়ার ফলে তারা খোলা আকাশে বৃষ্টিতে ভিজে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এইসব রোহিঙ্গ্যাদের এই পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা আসেনি। পাশাপাশি কোন সংস্থাও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসেনি।
বর্তমানে অবস্থানরত রোহিঙ্গ্যা নাগরিক সাকের আলম, মোজাহের আহাম্মদ, ফাতেমা বেগম ও খতিজা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে দেশের মিয়ানমার সরকারের বর্বর নির্যাতন সইতে না পেরে তারা সিমান্তে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। তারা জীবনযাপন করেছে খোলা আকাশের নিচে। পয়োঃনিস্কাশন, বিশুদ্ধ পানীয় জলসহ নানা সমস্যায় ভোগছেন।
Posted ৭:২১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta