কক্সবাংলা ডটকম(৫ জুন) :: কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোরসমেন্ট-আইস। নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে তারা গ্রেফতার অভিযান জোরদার করেছে। আইস ইতোমধ্যে ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের ধরতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় আইস। এতে কয়েকজন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে কমিউনিটিতে আতংক বিরাজ করছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাপ্তাহিক প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের নিউইয়র্ক প্রতিনিধির বরাতে জানিয়েছে, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ গ্রেফতার হয়েছেন। খবরে বলা হয়, “মোহাম্মদ সাঈদ (৪৯) সপরিবারে কুইন্সের ইস্ট এমহার্স্ট এলাকায় বসবাস করছিলেন। তাকে নিউ জার্সির হাডসন কাউন্টি কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাচায়েল ইয়ং জানিয়েছেন।
রাচায়েল ইয়ং বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক মোহাম্মদ সাঈদ যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে প্রবেশ করেছেন। অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২৪ মে নিউইয়র্ক সিটির ফ্লাশিং এলাকা থেকে আইসিইর এজেন্টরা তাকে গ্রেপ্তার করে।’ তবে কখন তাকে অভিবাসন আদালতের সামনে হাজির করা হবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।”
এ ব্যাপারে জানতে মোহাম্মদ সাঈদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে কাউকে পাওয়া যায়নি। এদিকে, প্রবাস সম্পাদককে গ্রেফতারের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিউনিটি নেতারা। তারা আজকাল’কে বলেছেন, যেকোনো উপায়ই হোক মোহাম্মদ সাঈদকে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে বের করে আনতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন তারা। কমিউনিটি নেতারা জানান, দলমত নির্বিশেষে সবাই মোহাম্মদ সাঈদের মুক্তির দাবিতে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। তারা বলেন, সাংবাদিক সাঈদ কমিউনিটিতে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কখনো কারো ক্ষতির কারণ হননি তিনি। তার মতো নিরপরাধ ব্যক্তিকে অভিবাসন সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার নিন্দনীয়।
মোহাম্মদ সাঈদের আটকের খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিউনিটি বোর্ড-এর সদস্য আইনজীবী মোহাম্মদ এন. মজুমদার বলেন, তাকে আইনগত সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত। এ ধরনের ক্ষেত্রে আমরা সর্বদাই আইনী সহায়তা করে আসছি। ডিপোর্ট করার আগ মুহূর্তে বিমানবন্দর থেকেও কোন কোন ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি।
তিনি বলেন, মোহাম্মদ সাঈদ তো কোন অপরাধী নন। তিনি তো কোন ক্রাইম করেননি। তার পক্ষে দাঁড়াবার অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। কাউন্সিলম্যান-এসেম্বলিম্যান যাদের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, যারা আমাদের কমউিনিটির কল্যাণে নিবেদিত, তাদেরও সাহায্য এ ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোহাম্মদ সাঈদের মুক্তির জন্য কমিউনিটি যে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবে এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুর রহিম হাওলাদার বলেছেন, মোহাম্মদ সাঈদের আটকের খবর খুবই উদ্বেগের কথা। তিনি আজই খবরটি অনলাইনে দেখেছেন এ কথা জানিয়ে বলেন, আগামী রোববার সোসাইটির যে সভা আছে সেখানে বিষয়টি তিনি তুলবেন। তিনি জানান, প্রয়োজনে মানবাধিকার সংস্থা ‘ড্রাম’ ও অন্যান্য সংগঠনের সাথে আলোচনা করে মিলিতভাবে কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
মানবাধিকার কর্মী ও ‘ড্রাম’ নেত্রী কাজী ফওজিয়া জানান, মোহাম্মদ সাঈদকে ছাড়িয়ে আনার জন্য তারা তাদের সংগঠন ‘ড্রাম’-এর পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। তারা তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছেন। মিছিল-বিক্ষোভ, গণ-দরখাস্ত ও আইস কর্মকর্তাদের ঘন ঘন টেলিফোন করে বুঝিয়ে দেয়া যে মোহাম্মদ সাঈদ একজন নিরপরাধ সাংবাদিক, আমরা সবাই তার মুক্তি চাই। তিনি বলেন, মোহাম্মদ সাঈদের বিরুদ্ধে কোন ক্রিমিনাল অভিযোগ নেই। বিনা অপরাধে আমরা তাকে শাস্তি পেতে দেব না।
জানা গেছে, সম্প্রতি আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের এক অংশের সভাপতি মনোনীত হন মোহাম্মদ সাঈদ। কিন্তু অপর একটি অংশের পক্ষ থেকে তাকে অভিবাসন সংক্রান্ত হুমকি দেয়া হলে তিনি সেই পদ গ্রহণে রাজী হননি। পরে সভাপতি পদে দর্পণ কবীরকে মনোনীত করা হয়। সংগঠনের অপর অংশের প্রেসিডেন্ট লাবলু আনসার। জনাব লাবলু প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদের গ্রেফতারের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিক বলেন, মোহাম্মদ সাঈদ আদৌ গ্রেফতার হয়েছেন কি-না তা পরিস্কার নয়। তার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। কেউ বলছেন তিনি হাসপাতালে, কেউ বলছেন তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ কোনো ধরনের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। মোহাম্মদ সাঈদ যদি গ্রেফতারই হয়ে থাকেন তাহলে তাঁর দ্রুত মুক্তি দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে ৪০০ অভিবাসী গ্রেফতার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) দপ্তর জানিয়েছে, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে ৪১ হাজার ৩১৮ জন অভিবাসীকে। যদিও এদের বেশির ভাগেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। এমন কাগজপত্রহীন সন্দেহভাজন অভিবাসী গ্রেফতার বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন ধরপাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ারস এসোসিয়েশন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক থমাস হোম্যান জানান, এ বছর ২২ জানুয়ারি থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সন্দেহভাজন অভিবাসী গ্রেফতার করা হয়েছে ৪১ হাজার ৩১৮ জনকে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৩০ হাজার ২৮ অভিবাসীকে। আইস-এর পক্ষ থেকে মে মাসের গ্রেফতারের পরিসংখ্যান জানানো না হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
আইস জানায়, এবার যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি অভিযোগ। তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে মাদক চোরাকারবার, নারী পাচারসহ অন্যান্য অপরাধের অভিযোগও রয়েছে। তবে গ্রেফতার হওয়া অনেকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এ বছরের প্রথম চার মাসে অভিযোগ নেই এমন অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছেন ১০ হাজার ৮০০ জন।
গত বছর একই সময়ে গ্রেফতারের এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২০০। অর্থাৎ ট্রাম্পের শাসনামলে অভিযোগ নেই এমন অভিবাসী গ্রেফতার বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ১৫০ ভাগেরও বেশি।
ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এসব হাজার হাজার ‘অবৈধ’ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটককৃতরা কোন কোন দেশের নাগরিক, তা কিছুই জানানো হয়নি।
গ্রেফতার প্রসঙ্গে থমাস হোম্যান বলেন, যেসব মানুষ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে তারা এখানকার আইন ভঙ্গ করেছেন। এটা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
এদিকে, এমন ধরপাকড়ের সমালোচনা করে অভিবাসন সহায়ক আইনজীবী সংস্থার পরিচালক গ্রেগরি চেন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন প্রেসিডেন্টের গণপ্রত্যাহার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তারা এমন সব লোকদের গ্রেফতার করছে, যারা অনেক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপর ২৫ জানুয়ারি তিনি অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তাবিষয়ক একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। সেই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী জন কেলির নতুন নির্দেশনা আসে। সেই আদেশের ফলে অভিবাসী গ্রেফতার বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বার বারই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করবেন।
Posted ৩:২০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta