কক্সবাংলা ডটকম(২৯ জানুয়ারি) :: জাতীয় নির্বাচনের জন্য হার্ডলাইনে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নতুন কর্মসূচি নিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আবারও মাঠে নামছে দলটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের ছয় মাসের মাথায় এই প্রথম কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে যাচ্ছে বিএনপি।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগসহ মোট ১০টি দাবিতে আগামী ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হরতাল অবরোধ নিয়ে মোট ৫ ধরনের কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।।
পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ এবং দেশে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করবে বলে গত সোমবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনিধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ন্যূনতম সংস্কার শেষে অনতিবিলম্বে নির্বাচন চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলের অবস্থান জানানো হবে।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগে আপত্তি নেই বিএনপির, তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কেন নতুন দল গঠন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ে।
হাসিনা সরকার পতন আন্দোলনের অংশীদার সব সমমনা দল ও জোট বিএনপির সঙ্গে একমত। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নিজেদের পক্ষে শক্ত জনমত গড়ে তুলতে চায় বিএনপি।
দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জনমত গঠনে নতুন করে তৃণমূলে যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির নীতিনির্ধারক ও কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির ‘প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ’ সম্পর্কে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণের প্রত্যাশা- চলতি বছর দেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, গণতন্ত্র জনগণের কাছে ফিরে যাবে। জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকার ফিরে পাবে।
দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিগত ১৫ বছর ধরে যে অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন, দুর্নীতি হয়েছে, তার থেকে দেশ মুক্তি পাবে।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমরা চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চাই, এটা যৌক্তিক সময়। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) আন্তরিক হলে এটা অবশ্যই সম্ভব।’
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। শীতবস্ত্র বিতরণ, আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসন এবং মহানগর থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা কর্মশালা কর্মসূচি আমরা পালন করছি।
গত ১৬ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতন হয়েছে।
কিন্তু গণতন্ত্র এখনো ফিরে পায়নি জনগণ। আমরা মনে করি, অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে পারলে এই সরকার কেন আগামী ছয় মাসের মধ্যে পারবে না? সরকারের ইচ্ছা থাকলে জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।’
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, দেশে ‘পতিত ফ্যাসিবাদের’ নানা ষড়যন্ত্র চলছে। যা অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। দ্রব্যমূল্য, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা এবং প্রশাসনে স্থিতিশীলতা না আসায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের মতে, দেশকে স্থিতিশীল করতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই।
সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপেই নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকটের সমাধান সম্ভব। নির্বাচন প্রলম্বিত হলে সংকট আরও গভীর হবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ছাত্ররা বিএনপির কাছে ওই ঘোষণাপত্রের যে খসড়া পাঠিয়েছে, সেটা নিয়ে বিএনপি নেতারা আলোচনা করেছেন। সেখানে কী কী ধরনের পরিমার্জন, পরিবর্ধন আনা যায়, সেগুলো নিয়ে দলের ভেতরে কাজ চলছে।
এই ঘোষণাপত্রের প্রণয়ন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন থাকলেও ছাত্রদের এই উদ্যোগকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করতে চায় না। খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের ব্যাপারে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি যুক্তিসংগত নয় বলে মনে করছে দলটি।
বৈঠকে অংশ নিয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধই হবে বাংলাদেশের ভিত্তি। এরপর বাংলাদেশের আরও অনেক অর্জন রয়েছে। এগুলো রেখেই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে হবে। ছাত্ররা এটাকে যে ব্যাকডেটেড প্রক্লেমেশন আকারে দেওয়ার যে কথা বলছে, সেভাবে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করেন তাঁরা।
জানা গেছে, ‘অপ্রয়োজনীয়’ সংস্কার প্রস্তাব, গণ অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ও নতুন দল গঠন- এই তিনটি ইস্যুতে সন্দেহ বাড়ছে বিএনপিতে। নির্বাচনের বাইরে যারা এসব অপ্রয়োজনীয় ইস্যুকে সামনে এনে নির্বাচনে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করতে চায়, তাদের ঘিরেই সন্দেহ বিএনপির নীতিনির্ধারক মহলে। এ জন্যই দ্রুত নির্বাচন ও তার আগে রোডম্যাপ দাবি করেছেন তাঁরা।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে জাতীয় নির্বাচন দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সরকারের ‘আনুকূল্যে’ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনেরও আভাস-ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া কতিপয় উপদেষ্টার কথাবার্তায়ও নির্বাচনবিরোধী গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
তাদের এসব এলোমেলো কথাবার্তায় বিএনপির মনে হচ্ছে যেন নির্বাচন প্রলম্বিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারসহ কারও কারও একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ রয়েছে। সে অনুযায়ী তারা নির্বাচন ও বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছে।
এমনকি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিকেও জনগণের প্রতিদ্বন্দ্বী বানানোর চেষ্টা চলছে। নির্বাচন ও বিএনপিবিরোধী এসব ষড়যন্ত্র যাতে কোনোক্রমেই সফল হতে না পারে, সে জন্য বিএনপি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের দাবিতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে।
এসব বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি কখনোই বলেনি সংস্কার চায় না।
বিএনপি বলেছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন, যা এখন সব রাজনৈতিক দলও চাইছে। দেশে রাজনৈতিক বিভেদ এবং নানামুখী সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আগেই প্রয়োজন, আর কালক্ষেপণ না করে ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা।
সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ৮টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে সোয়া ১০টার দিকে শেষ হয় এই সভা। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (ভার্চুয়ালি), বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (ভার্চুয়ালি)।
অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের হরতাল ডেকেছে আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মোট ১০টি দাবিতে আগামী ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হরতাল অবরোধসহ মোট ৫ ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তাদের কর্মসূচিগুলো হলো—১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল।
দলটি বলছে, দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এ সকল কর্মসূচিতে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা প্রত্যাহার এবং ‘প্রহসনমূলক বিচার’ বন্ধেরও দাবি জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে যে কোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো বা অংশীজনরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আরও বেশি সংস্কার চায় তাহলে এটা আরও ছয় মাস লাগতে পারে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অভিমত- আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য ‘খুবই অতিরিক্ত সময়’। ন্যূনতম সংস্কার করে জুলাই-আগস্টেই একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। যদি সেটি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করা যেতে পারে।
Posted ১:২২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta