কক্সবাংলা ডটকম(১৭ ডিসেম্বর) :: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ধারণা দেওয়ার পরও রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি নেতাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যকে সাধুবাদ জানানো হলেও দলটি ধারণায় সন্তুষ্ট নয়।
বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করছে না? সম্ভাব্য দিন-তারিখ ঘোষণা করতে তাদের বাধা কোথায়?
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে দলটি নরমে গরমে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের যে কৌশল নিয়ে রেখেছে, সেটি অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে এ তথ্য জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) তাহমিদা আহমদ বলেন, কমিশন ২০২৫ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপির নেতারা প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন।
আবার নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকারের উপদেষ্টারাও একেকজন একেক রকম আভাস-ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। তবে এখানেও প্রধান উপদেষ্টা ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ রেখেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে।
আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার করতে হয় তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় বিএনপি খুশি হতে পারেনি। নির্বাচন ইস্যুতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাস্তব রোডম্যাপ জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।
সরকার কী অর্জন করতে চায় এবং প্রয়োজনীয় সময়সীমা কী। স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন থেকে রাষ্ট্র ও সরকারকে রক্ষা করতে হলে দৈনন্দিন চর্চায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন করা নিয়ম ও বিধান মেনে চলার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।’
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সোমবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি আছি। সংস্কার হবে, তবে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করতে রাজি নই।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, এসব কিছুর সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সরকার দরকার, নির্বাচনের রোডম্যাপ দরকার। আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা দেবে।’
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তি যাতে বাংলাদেশকে দখল করতে না পারে, সেজন্য জনগণের সরকার হতে হবে। নির্বাচিত সরকার হতে হবে। এর জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।’
একই ধরনের মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সেজন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়।’
এর আগে গত রবিবার বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আর কত মাস প্রয়োজন, তা জনগণের জানার অধিকার আছে।
আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, সেটি অবশ্যই গণ-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী হবে।’
সম্প্রতি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং ভোটার তালিকা সংস্কার করে নির্বাচন করতে তিন-চার মাসের বেশি লাগে না। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশলের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, সরকারের দায়িত্বশীলদের একেক জনের একক রকম বক্তব্য। ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার বিভিন্ন মত সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে।
গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরে ড. ইউনূস জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তার সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি জানান, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ নির্বাচন হতে পারে।
এর আগে অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকারের আরেক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব।
তারও আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, নির্বাচন আগামী আঠারো মাসের মধ্যে হতে পারে। তার এ বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছিল, এটি সেনাপ্রধানের নিজস্ব বক্তব্য। নির্বাচন কবে হবে সেটি নির্ধারণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
সরকারের দায়িত্বশীলদের এমন বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। ফলে দিন দিন ধোঁয়াশা ক্রমেই বাড়ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ জানাতে চাপ প্রয়োগের কৌশল নেয়।
দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয় গত সোম ও মঙ্গলবার। ওই দুই সভায়ও আলোচ্যসূচির অন্যতম বিষয় ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য ‘চাপ’ অব্যাহত রাখতে দলটির করণীয় কী। আগেই সিদ্ধান্ত ছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ না হলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হবে বিএনপি।
চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। আগামী মাস থেকে এসব সমাবেশ শুরু হতে পারে। একই ইস্যুতে সমমনা দলগুলোকেও মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের।
তবে কোনোভাবেই সেই আন্দোলনকে চরম পর্যায়ে নেওয়ার চিন্তা নেই তাদের। আপাতত নিয়মতান্ত্রিকভাবে নরম-গরমে আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল সামনে রেখে এগোবে বিএনপির শীর্ষ মহল।
দলটির নেতারা মনে করছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা- এ দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। এই অনুধাবন থেকেই দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হচ্ছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সর্বশেষ ২৭ নভেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ওই বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা না আসলে বিএনপির কর্মসূচির কথা জানানো হয়। সম্ভবত এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা ত্রয়োদশ নির্বাচনের বিষয়ে একটা ধারণা জাতির সামনে রেখেছেন। কিন্তু বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার আভাস বা ইঙ্গিত চায়নি, চেয়েছে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ।’
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা মতে, নির্বাচন হতে দেড় বছর লাগবে। এই দীর্ঘ সময়ে তারা কী কী কাজ করবে সেটিও পরিষ্কার করেনি। তাই দিনক্ষণ না পাওয়া পর্যন্ত বিএনপি তাদের চাপ প্রয়োগের কৌশল থেকে সরবে না।’
এদিকে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের পোস্টে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বৈষম্য ও বিভাজনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই ঐক্যকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ক্ষমতায়ন ছাড়া জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী বা টেকসই হতে পারে না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংসদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা রাষ্ট্র ও সমাজ উভয় ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক শক্তি সত্যিকার অর্থে তখনই সুরক্ষিত হয়, যখন জবাবদিহিমূলক সরকার ও কার্যকর সংসদ মিলেমিশে কাজ করে।’ তারেক রহমান স্বীকার করেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে সংস্কার অনিবার্য।
বিজয় দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে উদযাপিত এই বিজয় দিবস নিঃসন্দেহে আরও আনন্দের, গৌরবময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস জনগণের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারের প্রতীক হয়ে থাকবে।’এগিয়ে যাচ্ছে সব প্রস্তুতি
এগিয়ে যাচ্ছে সব প্রস্তুতি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে চলেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্ব নিয়েই নীরবে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করে যাচ্ছে। জানুয়ারির মধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেখে নির্বাচনি সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নির্বাচনি আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে ইতোমধ্যে চিঠি ইস্যু করেছে নির্বাচন কমিশন। গত রবিবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহের বিষয়েও কাজ চলছে।
জানা গেছে, এসবের পাশাপাশি আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ; সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তদারকি কমিটির প্রধান আনোয়ারুল ইসলাম সরকার; প্রশাসনিক সংস্কার এবং পুনর্বিন্যাস ও দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান তহমিদা আহমদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটির প্রধান আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রস্তুতি তো থাকতেই হবে। সবাই আমরা একটা ভালো কিছু চাই; সেটাই হবে। একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলো এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আগামী ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এরপর নতুন ভোটারদের ভুলভ্রান্তি সংশোধনে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিন আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে। ভোটার তালিকার বিষয়ে অন্যদের কোনো দাবি-আপত্তি থাকলে, সেই বিষয়ে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করা যাবে। এরপর ইসি দাবি আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি করবে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ মার্চ।
ইসি জানিয়েছে, মাঠ কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখা-২ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, হালনাগাদ করা ভোটার তালিকার খসড়া আগামী ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে। এরপর ভুলভ্রান্তি বা কারও কোনো দাবি আপত্তি থাকলে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন জানাতে পারবেন। এরপর দাবি আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি করতে হবে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ মার্চ।
অন্যদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে তৈরি হচ্ছে নির্বাচনি রোডম্যাপ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা থাকছে এই কর্মপরিকল্পনায় (রোডম্যাপ)। এক্ষেত্রে নির্বাচনি মালামাল কেনাকাটা থেকে শুরু করে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সব কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকবে। সেই অনুযায়ী নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে ইসি সচিবালয় ‘তফসিল ঘোষণার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যক্রম’ শীর্ষক একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। তবে এ খসড়ায় কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ খসড়া উপস্থাপন করা হবে।
কমিশন প্রতিটি কাজের সময় সীমানা নির্ধারণ করবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা প্রেজেন্টেশন তৈরি করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। কেননা নির্বাচনি সংস্কারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-সহ অন্যান্য নির্বাচন আইনকানুন সংশোধন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আইন-বিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের বাজেট প্রস্তুত করার কাজ চলমান রয়েছে।
ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কাছে কাগজ প্রস্তুত রাখতে চিঠি দেওয়া হবে।
সংসদ নির্বাচন ছাড়া উপজেলা-সিটি নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। সাধারণত হলুদ, নীল ও গোলাপি রঙের কাগজ দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। অন্যদিকে নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজ কেনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার কার্যক্রমও শুরু হবে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হলে।