কক্সবাংলা ডটকম(৩১ মে) :: পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের (আইএইএ) সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আইএইএর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আইএইএর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে চায়। খবর বাসস।
এসডিজি বাস্তবায়ন, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় আইএইএর প্রয়াস জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজি অর্জনে সক্ষমতা গড়ে তোলা ও প্রযুক্তি স্থানান্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে আইএইএ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
আইএইএর ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংস্থাটি ‘আইএইএ কারিগরি সহযোগিতা কর্মসূচির ৬০ বছর পেরিয়ে: উন্নয়নে অবদান’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন আয়োজন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইএইএর মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানো, মরিশাসের প্রেসিডেন্ট আমেনাহ গারিব-ফাকিম ও উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট তাবেরে ভাসকেজ বক্তৃতা করেন। শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় শান্তি ও উন্নয়নে পরমাণুশক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে ৬০ বছরের অব্যাহত প্রয়াসের জন্য আইএইএর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
৪৫ বছর ধরে সমর্থন দেয়ার জন্য সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে আইএইএ। স্বাধীনতার পর পরই যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে সদস্যপদ দিয়েছে, আইএইএ তাদের অন্যতম। স্বাধীনতার অব্যবহিতপর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে সদস্যপদ প্রদান করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন।
শেখ হাসিনা বলেন, আইএইএতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন তার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে তার পারিবারিক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। তার (ওয়াজেদ মিয়া) দৃঢ় ও দূরদর্শী পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারে জাতির পিতার স্বপ্ন রূপায়ণে সহায়ক হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্র (এইআরসি) ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে কাজ করছে।
বাংলাদেশ আইএইএর সঙ্গে চমত্কার সহযোগিতা উপভোগ করছে এবং কারিগরি সহযোগিতায় প্রায় ১৩৮টি জাতীয় প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রিজিওনাল কো-অপারেটিভ এগ্রিমেন্টের (আরসিএ) অধীনে ১১১টি আঞ্চলিক প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে। আইএইএর কারিগরি সহযোগিতা কাঠামোর আওতায় পরমাণু শিক্ষা ও গবেষণা, খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, নন ডেস্ট্রাক্টিভ টেস্টিংয়ের মতো শিল্পসহায়তা, শস্য ও গবাদিপশুর উন্নয়ন এবং পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের মতো অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সহযোগিতা পেয়েছে।
তবে দুটি ক্ষেত্রে সাফল্যকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো— বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচারের (বিনা) উচ্চফলনশীল জাত ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু শস্য জাতের উন্নয়ন ও উদ্ভাবন এবং নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেবায় অগ্রগতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনা এরই মধ্যে ৯২টি শস্য প্রজাতির উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ১৩টির উন্নয়নে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি, বিকিরণ ও অন্যান্য অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এসব শস্য উচ্চফলনশীল, উচ্চপুষ্টিমান, স্বল্প সময়ে ফলন, লবণাক্ততা ও বন্যাসহিষ্ণু। খাদ্যনিরাপত্তায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং আইএইএ ২০১৪ সালে ‘বিনা’কে ‘আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে।
বাংলাদেশে পরমাণু চিকিত্সাসেবার অগ্রগতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, চিকিত্সা ক্ষেত্রে ১৫টি সরকারি ও ছয়টি বেসরকারি নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউট প্রতি বছর চার লাখের বেশি রোগীকে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মাধ্যেমে চিকিত্সাসেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি ক্যান্সারের চিকিত্সায় আধুনিক পরমাণু প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক শক্তিকে আমরা নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিকভাবে বিদ্যুতের সবচেয়ে টেকসই উত্স হিসেবে বিবেচনা করি। রাশিয়ার সহায়তায় নির্মীয়মান রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সাল নাগাদ পারমাণবিক উত্স থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন।
Posted ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩১ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta