কক্সবাংলা ডটকম(৮ জানুয়ারী) :: সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা যখন ঘনীভূত হচ্ছে, সেই সময়ে একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে আইএস-এর কর্মকাণ্ড নিয়ে শঙ্কার কথা উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিস তাদের প্রতিবেদনে ওই জঙ্গি সংগঠনের নামে সংঘটিত ৬টি হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বেলুচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশে তাদের ব্যাপক উত্থানের বিষয়ে নজর দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, আইএস-এর উত্থানে পাকিস্তানে বিদেশি শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে এবং অঞ্চলটিতে মধ্যপ্রাচ্যের মতো অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
গত বছরের তুলনায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ১৬ শতাংশ কমে আসার কথা জানানো হলেও তেহরিক-ই তালেবানকে এখনও পাকিস্তানের জন্য সবথেকে বড় হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ক’দিন আগে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকেও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিবরণ হাজির করা হয়েছিল|
সম্প্রতি এক টুইটার বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও সন্ত্রাসবাদে মদদের অভিযোগ তোলার পর বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে সেই সাহায্য বন্ধের ঘোষণা আসে।
এরপর পাকিস্তান সরকারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, গত আট বছরে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ ৫৮ শতাংশ কমে গেছে। এবার ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিস-এর সিকিউরিটি রিপোর্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড খানিকটা কমে আসার কথা জানানো হলেও জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের প্রভাব বিস্তৃতির কথা জানানো হয়েছে।
বেশ কয়েকটি সূত্র, সাক্ষাতকার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি। এতে বলা হয়েছে, গত বছর আইএস কর্তৃক দায় স্বীকার করা ছয়টি হামলাই সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। ওই হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন মানুষ।
২০১৭ সালে পাকিস্তানে সিনেটের ডেপুটি চেয়ারম্যান আবদুল গাফুর হায়দারীর বহরে হামলা, সেহওয়ান মাজার, শাহনুরানি মাজার, বেথেল মেমরিয়াল মেথডিস্ট গির্জা এবং পীর রাখায় শাহ এর দরগায় হামলা হয় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর নামে। দুইজন চীনা নাগরিক অপহরণ ও হত্যার শিকার হন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনায় এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিস।
সংস্থাটির সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার মুহাম্মদ ইসমাইল খান মনে করেন, ‘বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।’ মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি এখানেও বিদেশি শক্তির আবির্ভাবের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নাসের খান জানজুয়া বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে আলোচনা হয়েছে। চলতি বছরেই এটা প্রকাশ করা হবে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গতবছর ১৬ শতাংশ হামলা কমলেও তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল। তাদের পরই ছিল সবচেয়ে বড় বিদ্রোহীগোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট। এর সঙ্গে বেলুচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশে আইএসের উত্থানই এখন সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়। এতে দাবি করা হয়, বিদ্রোহী ও জঙ্গিরা ৬৪ জেলায় মোট ৩৭০টি হামলা চালিয়েছে।
এর মধ্যে ২৪টি আত্মঘাতী হামলা ছিল। নিহত হয়েছেন ৮১৫জন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭৩৬ জন। এই সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম। মানুষ হত্যার হার কমেছে ১০ শতাংশ। টিটিপির হামলায় নিহত হয়েছেন ২১৩জন। এর মধ্যে জামাতুল আহরারের হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৬জন। অন্যদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলায় বিশেষ করে বেলুচিস্তানে ১৩৮টি হামলা চালানো হয়েছে। নিহত হয়েছেন ১৪০জন।
প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের হামলার সঙ্গে গত বছরের হামলার তুলনা করা হয়। আফগানিস্তান, ভারত ও ইরান সীমান্ত থেকেও হামলা চালানো হয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে হামলা হয়েছে মোট ১৭১টি। নিহত হয়েছেন ১৮৮ জন, আর আহত হয়েছেন ৩৪৮ জন। এছাড়া নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হত্যা করেছে মোট ৫২৪জন জঙ্গিকে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৮০৯ জন। এ বছর তারা অভিযান চালিয়েছে ৭৫টি।
এর আগে সরকার-প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও পাকিস্তান দণ্ডবিধির আওতায় ৪৮৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে ৩৪২টি মামলা সামরিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। দেশজুড়ে ২ লাখ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৯৮ জনকে। অভিযানে প্রায় আড়াই হাজার ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে সারাদেশে ১৯ হাজার ৫৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Posted ৩:৩১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta