কক্সবাংলা ডটকম(২ আগস্ট) :: দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে সর্বোচ্চ আদালতে অযোগ্য ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়েছেন নওয়াজ শরিফ। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসিকে নির্বাচিত করেছে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফকেই শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হবে। আব্বাসির মনোনয়ন শাহবাজের প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়ার পথ মসৃণ করার কৌশলমাত্র।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে স্বজনপ্রীতি ও পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। জাতীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ের অর্ধেকের বেশি আসন বরাবরই বাবা থেকে সন্তান, ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পরিবারের হাতেই রাখতে এ কৌশল নেয়া হয়। নওয়াজ শরিফের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সরকারের নেতৃত্বদানে অযোগ্য ঘোষণা করেন। পানামা পেপারস নামের নথি ফাঁসের জের ধরে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় কয়েক মাসের শুনানি শেষে গত শুক্রবার আদালত এ রায় দেন। আদালত নওয়াজ শরিফ ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে ছয় সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানের জাতীয় জবাবদিহিতা আদালতে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ রায়ের পর নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তবে পিএমএল-এনের প্রধান হিসেবে ক্ষমতাসীন দলে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে। আর ক্ষমতায় পরিবারের প্রভাব অটুট রাখতে উত্তরসূরি হিসেবে ভাই শাহবাজ শরিফের নাম ঘোষণা করেছেন তিনি। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, পিএমএল-এনের মনোনীত খাকান আব্বাসির দৌড় অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্তই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক উমাইর জাভেদ বলেন, পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লাটাই নওয়াজ শরিফের হাতেই থাকবে। সম্ভবত নির্বাচনের পরও তার প্রভাব অনুভূত হবে। দলের তুলনায় নেতার প্রভাবই বেশি। অন্যদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে তাকে ওই পদ ছাড়তে হবে। এছাড়া কোনো একটি উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে তাকে পার্লামেন্টের সদস্য হতে হবে। এজন্য অন্তত ৪৫ দিন সময় লাগবে। পাঞ্জাবের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর সেখানে পারিবারিক কর্তৃত্ব অব্যাহত রাখতে চাইবেন শাহবাজও।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের ছেলে হামজাকে উত্তরসূরি ভেবে রেখেছেন শাহবাজ। অবশ্য এ পদে আসতে হলে হামজাকেও প্রাদেশিক নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে হবে।
তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নওয়াজ শরিফ। এটা নিশ্চিত, আগামী বছর অনুষ্ঠেয় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে নওয়াজ চাচ্ছেন না কোনোভাবেই পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হোক। হেরাল্ডের সম্পাদক বদর আলম এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, একে বংশপরম্পরার রাজনীতি বলা যায়। এদের প্রভাব এতটাই প্রবল যে, সেখানে কারও চ্যালেঞ্জ টিকবে না।
অবশ্য অনেকেই সতর্ক করে বলছেন, পিএমএল-এনের শাহবাজের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত হবে না। বড় ভাইয়ের মতো ক্যারিশমেটিক নন শাহবাজ। তার উপস্থিতিতে দলে ভাঙন দেখা দিতে পারে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে এই ‘গেম অব থ্রোনস’ অন্য দলেও বিদ্যমান। পরিবারতন্ত্রের আরেকটি উদাহরণ ভুট্টো পরিবার এবং তাদের পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। ২০০৭ সালে দলটির প্রধান ও দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো মারা যাওয়ার পর দলটির পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তার বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রতিষ্ঠিত দলটি চার দশক পাকিস্তানের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বেনজির ভুট্টোকে হত্যার পর গত সংসদ নির্বাচনে দলটি তাদের ৭৬টি আসন ধরে রাখতে পারেনি। দলটির বর্তমান প্রধান বেনজিরের পুত্র বিলওয়াল।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওমর ওয়ারেচ বলেন, ‘দলের চেয়ে নেতারা নিজেরাই একেকটি বড় ব্র্যান্ড। বেনজির সবসময়ই ছিলেন পিপিপির চেয়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ড। নওয়াজ শরিফও পিএমএল-এনের চেয়ে যথেষ্ট শক্তিধর ব্র্যান্ড। একইভাবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খানই দলে মূল চালিকাশক্তি। তবে ওয়ারেচ বলেন, ইমরান খানের বিশেষত্ব হল তিনি পরিবারতন্ত্রের ফসল নন।
Posted ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০২ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta