মাঈনুদ্দিন খালেদ ,নাইক্ষ্যংছড়ি(১২ জুন) :: রামু উপজেলার ঐতিহাসিক শাহসূজা সড়কের কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া সংযোগ অংশে বাকঁখালী নদীর উপর নির্মিত ৩ কোটি ব্রীজ টি একপাশের অংশ নদীতে বিলীন হতে শুরু করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার লাখো মানুষ । বছরের প্রথম পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতের তোড়ে ব্রীজটি ভেঙ্গে গিয়ে নদীতে বিলীন হলে ওপারের অন্তত ২ শত গ্রামের দেড় লাখ মানুষের কপালে চরম দূর্দশা নেমে আসবে এ কারণে তাদের এ অবস্থা।
লোকজন জানান,বিগত দিনে এ ব্রীজের অভাবে এখানকার মানুষের জীবনমান ছিল অতি নিম্নমানের। আর এ ব্রীজ নির্মানের পর এখন ককসবাজার জেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযেগের কারনে সর্বাধুনিক জীবন কাটাচ্ছে এ সব মানুষজন।
আর এ সব বিষয় মাথায় নিয়ে ব্রীজ ভাংগন এলাকা দেখতে ছুটে আসেন রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম, গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মো: ইসমাঈল নোমান সহ অনেক দায়িত্বশীল নেতা। আর এ ভাংগন রহস্য দেখতে এখন এখানে শতশত মানুষ ভিড় করছে নিয়মিত।
সরেজমিন গিয়ে আরো জানা যায়,ককসবাজার জেলা থেকে পূর্বদিকে ২৬ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলার ৪ ইউনিয়ন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ২ ইউনিয়ন সহ ৬ ইউনিয়নের মানুষের জেলা শহরে যোগাযোগ ও রাবার সহ উৎপাদিত পণ্যের বেচা-কেনার বাধা ছিল গর্জনিয়া অংশের বাকঁখালী নদীর এই ঘাটটি। ২০০৩ সালে এখানে ব্রীজ টি নির্মান করে নজরুল চেয়ারম্যানের চেষ্টায় এলজিইডি।
প্রায় ২শ’ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মানের পর ককসবাজার জেলা ও বান্দরবার জেলার পাহাড়ি ৬ ইউনিয়নের দেড় লাখ মানূষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। রাবার বাগানের ব্যবসা,কৃষি পন্য বেচা-কেনা,গাছ,বাশ,বেত ও অন্যান্য সকল প্রকার পণ্যের উচিত মূল্য পাওয়াতে জৌলুস ফিরে আসে এখানে। গ্রামে গ্রামে কাচাঁ ঘর-বাড়ি পাকা হয়ে যায়, গাড়িতে বাড়িতে ডিজিটাল জীবন যাপন শুরু করে সকলে।
গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, কিন্তু হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে বিগত ২০১২ সালে প্রথমবার আবার ১৪ সালে দ্বিতীয় বার জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রীজের দক্ষিনপাশের অংশের পাকা সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। আর ব্রীজটি অলস পড়ে থাকে বহু দিন। এ অবস্থায় প্রথমবার প্রায় কোটি টাকা খরচ করে পূন:নির্মান করা হয়।
দ্বিতীয়বার এটি বন্যার ও পাহাড়ি ঢলে আবোরো তলিয়ে যায় ২০১৪ সালে। এর পর থেকে এটি আর পূর্ণনির্মান করা হয় নি। মানুষ চরম লাঞ্চনার শিকারে পড়ে দু’কূলভরা নদীর পানি পারাপারে। কাদাঁমাটি ভরা নৌকার মাঝির অত্যচারে অতিষ্ট হয়ে মানুষ এদিকে আসা বন্ধ করে দেন দিনের পর দিন। এর পর থেকে কমে যায় শিক্ষার হারও। বৈষম্যের শিকারে পড়ে খোদ বিয়ে শাদিতে পর্যন্ত। আর ব্যবসা বানিজ্য তো সম্পুর্ণ বন্ধ ছিল।
কামাল মেম্বার ও গর্জনিয়া ইউনিয়র পূজা কমিটির সাধালন সম্পাদক অনুপম শর্মা দুলাল জানান, আর ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার এ ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ার সময় গর্জনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী ।
তিনি দীর্ঘ ৪ বছর এ ব্রীজটির নির্মানের কোন উদ্যোগ না নিলেও সম্প্রতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পূন:রায় চেয়াম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ব্রীজটি নির্মানের উদ্যোগ নেন নজরুল চেয়ারম্যান।
তিনি ককসবাজার সদর আসনের এমপি সাইমুম রওয়ার কমল সহায়তায় এবং উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলমের নিবিড় তদারকিতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচে ব্রীজটি নির্মানে সচেষ্ট হন।
এছাড়া এস্কাবেটর দিয়ে মাটি কেটে বিকল্প নদী খননও করেন এ সময়। এ সময় কিন্ত পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় ব্রীজ সংলগ্ন সড়কের নির্মানের বাকি অংশ বন্ধ থাকে গত কয়েক মাস।
এরই মধ্যে সোমবার বছরের প্রথম ঢলে ব্রীজের সংস্তাকৃত অংশ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলে গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান নজরুল সাহেব নিজে কুদাল হাতে নেন। তার সাথে অর্ধশতাধিক লেবার মাটি কেটে ব্রীজ রক্ষায় ঝাপিয়েঁ পড়েন।
তিনি আরো জানায়,এ অবস্থায় একদিকে ব্রীজের গোড়ায় ফাইলিং অংশে পানির ¯্রােতে সংস্কারকৃত অংশের ভাংগন আর দ্বিতীয়ত ব্রীজের উত্তরপাশের ব্রীজের নিচের ও সাইডের অংশের মাটি কেটে পানি যাওয়ার সুব্যবস্থা করণ। নচেৎ কোটি টাকার ব্রীজের সাথে কোটি টাকার সংস্কার কাজ জলে ভেসে যাবে।
আর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে গর্জনিয়া, বাইশারী,ইদগড় ও দৌছড়ি ইউনিয়ন। এ ছাড়া ব্যবসা বন্ধ হবে কাইয়ারখোপ,কচ্ছপিয়া,নাইক্ষ্যছড়ি সহ অপর সকল এলাকার সাথে। তখন বছরে ক্ষতি হবে হাজার কোটি টাকার অধিক।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী বলেই এ ব্রীজের বিষয়ে সুনজর দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এখানে।
তিনি আরো বলেন,আমাদের এমপি কমল সাহেব গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ইদগড় সহ পাহাড়ি জনপদের সব ধরনের সমস্যার বিষয়ে সজাগ রয়েছেন। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ ব্রীজের কাজ সহ সবকিছু সমাধান করা হবে খুব কম সময়ের মধ্যেই।
Posted ১১:২১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta