কক্সবাংলা ডটকম(১৩ জুন) :: গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৯ জন, বান্দরবানে ৭ জন এবং চট্টগ্রামে ২৩ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিন জেলাতেই এখনও মাটির নিচে অনেকে চাপা পড়ে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাহাড় ধসে নিহতের ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন পার্বত্য জনপদের মানুষেরা। নিহতের সংখ্যা যেন আর থামছেই না। সোমবার রাত থেকে পার্বত্য জেলাগুলোয় যে পরিমাণ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে, তার ফলে নিহতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা আন্দাজ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। এখনও অনেক লোক নিখোঁজ থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
আরও পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ পার্বত্য এলাকায় মাইকিং চলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, গত দুদিন ধরেই লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে চার হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। সতর্কতামূলক তৎপরতা জারি আছে।
রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৯৮জন নিহত হয়েছেন। জেলার ডিসি মানজুরুল মান্নান জানান, রাঙামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ৫৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন ও কাউখালীতে ২৩ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন ও জুড়াইছড়িতে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাঙামাটি সদর হাসপাতালে আহত ৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে ক্যাম্পের পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও সৈনিক মো. শাহিন আলম। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ সেনাসদস্য। নিখোঁজ রয়েছেন এক সেনাসদস্য। গুরুতর আহত ৫ সেনা সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তারা হচ্ছেন সৈনিক আজমল, মামুন, ফিরোজ, মোজাম্মেল ও সেলিম।
এদিকে, টানা বর্ষণে বান্দরবানের কালাঘাটা এলাকায় তিনটি স্থানে পাহাড় ধসে শিশুসহ ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২ জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। কালাঘাটা এলাকার কবরস্থানের পাশে, জেলেপাড়া ও লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে শিশুসহ অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কমপক্ষে ১৯ জন ও চন্দনাইশে চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাঙ্গুনিয়ায় আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে পাহাড় ধসের ঘটনায় উদ্ধার কাজ চলছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মঙ্গলবার বলেন, ‘পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আহতরা পাবেন ১০ হাজার টাকা করে। প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।’
বুধবার (১৪ জুন) সকালে দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাবেন।
Posted ৫:৫০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta