পিরামিড কেন বানানো হয়েছিল?
উপযুক্ত কোন কারণ জানা না থাকায় এখন পর্যন্ত মনে করা হয় যে, ওই সময়কার রাজা এবং রাণীর মৃতদেহকে কবর দেয়ার জন্যেই এই পিরামিড বানানো হয়েছি। তখনকার সময় মৃতদেহ সংরক্ষনের জন্যে মৃতদেহকে লাইনেনের সুতা দিয়ে প্যাঁচিয়ে মমি তৈরী করা হতো। তবে আশ্চার্যের বিষয় এই যে এখন পর্যন্ত পিরামিডের ভিতর থেকে একটা মৃতদেহও পাওয়া যায় নি।
পিরামিডকে এখনো পুরোপুরি আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু আবিস্কৃত হয়েছে তাতে সবগুলো সবগুলো সমাধিই খালি পাওয়া গেছে এবং তার উপড়ে কোন কিছু লেখাও পাওয়া যায় নি। কিংস চেম্বারে যেমন কিং এর কোন মমি পাওয়া যায় নি তেমনি কুইনস চেম্বারে কুইনের কোন মমিও পাওয়া যায় নি।
এসব বিষয় পর্যালোচনা করে থিউরিস্টরা এই ধারণা করেন যে, সম্ভবত পিরামিড মৃতদেহ রাখার জন্যে বানানো হয় নি, বরং অন্য কোন কারণে বানানো হয়েছে। অনেক এলিয়েন বিশ্বাসী বিজ্ঞানিরা মনে করেন যে, এলিয়েনরা হয়ত তাদের কোন প্রয়োজনে এটি বানিয়েছিল। এটি তাদের কোন পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে পারে।
পিরামিড এতো পারফেক্ট কিভাবে হলো?
এটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে, পুরো পৃথিবীর জিওগ্রাফিক্যাল মধ্যভাগে পিরামিডের অবস্থান। আজ থেকে চার হাজার বছর আগে পৃথিবীর মানুষ তো এটাই জানত না যে পৃথিবী গোলাকার। বরং তারা পৃথিবীকে সমতল মনে করত। তাহলে তারা কিভাবে খুজে বের করতে পারল পৃথিবীর জিওগ্রাফিক্যাল মধ্যভাগ। এটা তখনকার হিসেবে মানুষের দ্বারা আদৌ সম্ভব নয়।
আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, পিরামিডের একটা অংশ ঠিকভাবে উত্তরমেরুর দিক নির্দেশ করে আছে। এই অংশ থেকে একটি লাইন টানা হলে তা ঠিক উত্তর মেরুর কাছে গিয়ে মিলে গেছে। আর এটা তো জানা আছে যে, গত চার হাজার বছরে টেকটনিক প্লেটের কিছু পরিবর্তন হয়েছে এবং ভৌগোলিক বিভিন্ন কারনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ভাবনার বিষয় হচ্ছে কিভাবে এই এলাইনমেন্ট তখনকার সময় ঠিক উত্তরমেরুর দিকে হলো?
আরেকটি আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে পিরামিডের পাথর। যে পাথর দিয়ে এই পিরামিড বানানো হয়েছিল তা সাধারণ পাথরের চেয়ে লক্ষগুণ বেশি শক্তিশালী। এই পাথর নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং বিজ্ঞানিরা আজ পর্যন্ত বের করতে পারেন নি যে এটা আসলে কি। এটা লাইমস্টোনের মতো দেখতে হলেও এটি আসলে লাইমস্টোন নয় এবং এই পাথর পৃথিবীর আর কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি।
পিরামিড তৈরীর সময় বল এন্ড সকেট মেথড ব্যাবহার করা হয়েছিল। এটিএমন একটি মেথড যা গরমের সময় ব্লকগুলোর আকার বৃদ্ধি পেয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। এই মেথড ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে ব্যাবহার করা হয়। এ ধরণের পরিক্ষিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার চার হাজার বছর আগে, সত্যিই অবিশ্বাস্য।
মিসরের পিরামিড যেখানে অবস্থিত সেখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত গরম এবং সবসময় গরম বাতাস চলতে থাকে। এতো কিছুর পরও পিরামিডকে এমন এক আশ্চার্য উপায়ে বানানো হয়েছে যে এর ভিতরে সবসময় ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় থাকে। যা পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক তাপমাত্র, যাকে চার হাজার বছর আগের ন্যাচারাল এসি বলা যেতে পারে।
তাহলে এই সব বিষয়গুলো যেমন ন্যাচারাল এসি, ভূমিকম্প প্রতিরোধক স্থাপনা, আকাশের তারার সাথে শ্রেণি বিন্যাস, কম্পাস ছাড়াই উত্তর মেরু নির্দেশক এগুলো কি প্রাচীন ইজিপশিয়ানদের কাছে ছিল? নাকি মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান কোন প্রানী যাদের কাছে পৃথিবী সম্পর্কে এমন জ্ঞান ছিল যা বর্তমান পৃথিবীতে আমাদের কাছেও নেই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন যে প্রাচীন ইজিপিশিয়ানদেরকে এসব জ্ঞান এলিয়েনরাই দিয়েছিল।
https://youtu.be/hTsl_2oURkk?t=234
প্রাচীন মিশরে এলিয়েনদের চিত্রকর্ম
মিশরের প্রাচীন দর্শনীয় স্থানগুলোতে কিছু চিত্রকর্ম দেখা যায়, যেমন এরোপ্লেন, বড় বড় চোখ আর চোখা মুখ ওয়ালা এলিয়েনের ছবি, মর্ডার্ণ এলিয়েন স্পেসশিপ ইত্যাদি। এই জন্যেই কিছু লোক মনে করে যে এই পিরামিড কি শুধু মানুষই বানিয়েছে নাকি এলিয়েনদেরও হাত আছে। এই থিউরী কতটুকু সত্য তা সময়ই বলে দিবে।
পিরামিডের শ্রেনীবদ্ধ স্ট্রাকচার যা আকাশের তিনিটি তারার সাথে সামঞ্জস্য রাখে, এমন স্ট্রাকচার নিখুতভাবে করতে হলে অনেক উপড় থেকে তা পর্যবেক্ষণ করে তৈরী করতে হবে। কিন্তু প্রাচীন মিশরীয়য়দের কাছে কোন ড্রোন বা আকাশে উড়ার মতো কোন প্রযুক্তি থাকার কথা না। তার পরও তারা এই স্ট্রাকচার কিভাবে এতো নিখুতভাবে তৈরী করেছিল তা অজানাই রয়ে গেছে।
পিরামিডের আরেকটি আশ্চার্য ঘটনা ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বড় দিন এবং সবচেয়ে ছোট রাত অর্থাৎ ২১শে জুন। এই দিন বিকালে সূর্যাস্তের সময় সূর্য ঠিক পিরামিডের মধ্যখানে অবস্থান করে। এতো ক্যালকুলেশন আর হিসাব নিকাশ চার হাজার বছর আগের মানুষ কিভাবে করেছিল?
একটা দুটো কাকতালীয় ঘটনা ঘটতে পারে, কন্তু এতগুলো জটিল হিসাব নিকাশ কিভাবে মিলে যায়। এটা নিশ্চই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন কোন প্রাণীর কাজ। কিছু কিছু থিউরিস্ট মনে করেন এসব কিছু অন্য গ্রহের প্রাণীরা করিয়েছিল যাদের কাছে এতো কমপ্লেক্স ক্যালকুলেশন ছিল। তাদের কাছে এমন কিছু বুদ্ধি এবং এমন কিছু যন্ত্র ছিল যা বর্তমানে আমাদের কাছেও নেই।
মিশরে ডেন্ডেরা নামে একটি জায়গা আছে। যেখানে একটি ট্যাম্পল আছে যার নাম ডেন্ডেরা লাইট কমপ্লেক্স। প্রাচীন মিশরের মানুষেরা তাদের প্রভূর উপাসনা করার জন্যে এই ট্যাম্পল বানিয়েছিল, যার নাম ছিল হ্যাথর। এই ট্যাম্পলটিই মিশরের সবচেয়ে রহস্যময় একটি ট্যাম্পল।
এই ট্যাম্পলটি আগে অর্ধেক ঢাকা পড়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৫০ সালে এটি পরিস্কার করা হয় এবং এর পর বেরিয়ে আসে অনেক গোপনীয় তথ্য। এই ট্যাম্পলের মধ্যে অনেক কারুকার্য দেখতে পাওয়া যায়, যা মিশরে পাওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিখুত কারুকার্য।
এখানে ডেন্ডেরা লাইট নামে একটি কারুকার্য পাওয়া যায় যেখানে ফিলামেন্টযুক্ত একটি বড় লাইট ক্যাবল দ্বারা একটি বক্সের সাথে যুক্ত। যার নিচে কিছু মানুষের ছবি দেখা যায়, যা নির্দেশ করে যে এটি মানুষের জীবনের জন্যে বিপদজনক। তাহলে কি প্রাচীন মিশরের আজ থেকে চার হাজার বছর আগে বিদ্যুতের উপস্থিতি ছিল? থিউরিস্টরা মনে করেন যে, সম্ভবত এই লাইট পিরামিড এবং অন্যান্য স্ট্রাকচার তৈরীর কাজে ব্যাবহার করা হয়েছিল।
পিরামিডের আরেকটি বিশ্বয়কর স্ট্রাকচার হচ্ছে দ্যা গ্র্যাট স্ফিন। বিভিন্ন মডেল রিসার্চ করেও জানা সম্ভব হয় নি যে এটি কেন বানানো হয়েছিল। এটা এমন একটি স্ট্রাকচার যার মুখমন্ডল মানুষের মতো হলেও শরীর মানুষের মতো না। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু গুলোর মধ্যে একটি। এর উচ্চতা প্রায় ৭৩.৫ মিটার এবং মুখমন্ডলটি ২০ মিটার লম্বা।
এই স্ট্রাকচারটি কোন আলাদা আলাদা ব্লক ব্যাবহার করে বানানো হয় নি। বরং একটি বড় লাইমস্টোনকে কেটে এই স্ট্রাকচার তৈরী করা হয়েছে। আর এ জন্যেই একে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল স্টোন স্ট্যাচু বলা হয়।
হাজার বছর ধরে এটি মাটির নিচে ঢাকা পড়েছিল। ১৯০০ সালের পর একে মাটির নিচ থেকে বের করা হয়। আর তখন একে প্রথমবারের মতো আমরা দেখতে পাই। এটার উপর থেকে যতটা রহস্যময়, এর ভিতর থেকে ঠিক ততটাই রহস্যে ঘেরা।
প্রথমে গ্রাউন্ড ম্যাপ থেকে জানা যায় যে এর ভিতরে দুটি খালি জায়গা অর্থাৎ চেম্বার রয়েছে। এটা ঠিক মর্ডার্ন শহরের আন্ডারগ্রাউন্ডের মতো দেখতে। এরপর ১৯৯৫ সালে একে নতুন করে সংস্কার করা হয়। তখন কাকতালীয়ভাবে এর ভিতরে প্রচুর সুড়ঙ্গ খুজে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে দুটি সুড়ঙ্গ এই স্ট্যাচুর নিচ বরাবর চলে গেছে।
এসব বিষয় আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে যে, এর ভিতরে হয়ত আরেকটি দুনিয়া লুকিয়া আছে, যা আমাদের অদেখাই রয়ে গেছে। আজও পিরামিডকে পুরোপুরি আবিস্কার করা বাকি আছে। এখনো চলছে পিরামিডকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা। হয়ত কোন একদিন উন্মোচিত হবে পিরামিডের সকল অজানা রহস্য।