মো:ফারুক,পেকুয়া(২৪ মে) :: সারা বাংলাদেশে বেশিরভাগ জেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। তবে আইনী জঠিলতায় কিছু ওয়ার্ডে ভোট গ্রহন বন্ধ ছিল। তার মধ্যে কক্সবাজার জেলা পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের (পেকুয়া সদর, মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী, বারবাকিয়া, টইটং) পুরুষ সদস্য নির্বাচনে এক প্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মাননীয় আদালতের নির্দেশে স্থগিত ছিল।
সর্বশেষ গত ২৩ মে এ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। ভোটার সংখ্যা ছিল ৮১ জন। তার মধ্যে বিভিন্ন কারণে ৩ জন ভোট দিতে না পারায় ভোট গ্রহন হয় ৭৮। তার মধ্যে জেলা আ’লীগ সদস্য আবু হেনা মুস্তফা কামাল চৌধুরীকে ৪৫ ভোটের বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে জয়লাভ করেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।
জেলা আ’লীগ মনোনীত সদস্য প্রার্থী আবু হেনা মুস্তফা কামাল চৌধুরীর কেন ধরাশয়ী হলেন তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
জানা গেছে, ১ম নির্বাচনী তফশীলে জেলা আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিল জেলা আ’লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বর্তমান কমিটির সদস্য আবু হেনা মুস্তফা কামাল চৌধুরী। ওই সময় প্রার্থীতা ঘোষনা করেন জেলা আ’লীগের সদস্য জিএম আবুল কাশেম, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জাতীয় পার্টি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (অব: বিজিবি), পেকুয়া কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: এর সম্পাদক তারেক ছিদ্দিকী, উপজেলা আ’লীগের প্রয়াত সভাপতি আকম শাহাব উদ্দিন ফরায়েজীর ছেলে মেহেদী হাসান ফরায়েজী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জায়েদ মোর্শেদ, রাজাখালী যুবলীগ নেতা রিয়াজ খান। এ নিয়ে জেলা আ’লীগ আওয়ামী সমর্থক প্রার্থীদের নিয়ে একক প্রার্থী করার বৈঠক করলেও জিএম কাশেম ছাড়া বাকি প্রার্থীরা নির্বাচনের ময়দানে থাকে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছু জনপ্রতি দাবী করছে তিনি এলাকায় না থাকার কারণে জনবিচ্ছিন্ন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখে নাই। আবার অনেক জনপ্রতিনিধি মনে করেন তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ভোট প্রার্থনায় অনেক পিছিয়ে ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন তিনি যদি নির্বাচিত হতেন তাহলে এলাকায় তাকে পাওয়া যেত না।
বড় ট্রামকার্ড ছিল বিএনপি সমর্থক জনপ্রতিনিধিদের ভোট। বিএনপি’র সহযোগি সংগঠনের একটি অংশ আবু হেনার পক্ষে অবস্থান নিলেও তারা ভোটের ময়দানে ছিল নিরব। এছাড়াও মগনামা ও উজানটিয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান তার পক্ষে জোরালো ভুমিকা পালন করলেও তাদের ইউনিয়নের ভোটগুলোও আদায় করতে পারেনি। যার কারণে মাত্র ১৩টি ভোট পেয়ে ধরাশয়ী হন তিনি।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়া উপজেলার তৃণমূলের রাজনীতি করে আসছেন। প্রথমে ছাত্রলীগ, পরে আ’লীগ আবার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। যার কারণে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য/সদস্যাদের সাথে ছিল তার ভাল সম্পর্ক। দু’একজন চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে জোরালো ভুমিকা পালন করলেও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ তার পক্ষে অবস্থান নেয়।
যার কারণে বিএনপি পন্থি ২৫জনের মতো জনপ্রতিনিধিরা জাহাঙ্গীর আলমকে ভোট প্রদান করেন। যার কারণে বিপুল ভোটে জয়লাভ করা তার জন্য সহজ হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি বিএনপি’র পক্ষে থেকে কয়েকজন জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলম সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা। সব সময় পেকুয়ায় অবস্থান করার কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অতীতে সুঃখে দুঃখে তাকেই পাশে পেয়েছেন তারা। সামনের দিনগুলোতে এলাকার উন্নয়নে তাকেই বেশি পাওয়ার আশা করছেন তারা। যার কারণে তাকে ভোট দিয়েছেন তারা।
এছাড়াও আ’লীগ পন্থি ৩০/৩৫ জনের মতো জনপ্রতিনিধির ভোট তিনি আদায় করতে সক্ষম হন। উপজেলা আ’লীগের একটি অংশ আবু হেনা মুস্তফা কামালের পক্ষে অবস্থান নিলেও তারা ভোট আদায় করতে সক্ষম হয়নি। এখানে জাহাঙ্গীর আলম যুবলীগ করার কারণে তার অনুসারী যুবলীগ সমর্থক জনপ্রতিনিধিরা তাকে ভোট দিয়েছেন। আর আ’লীগ পন্থি সব জনপ্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলমকে ভোট দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যার কারণে ৭৮ ভোটের মধ্যে তিনি ৫৮টি ভোট আদায় করতে সক্ষম হন। যা সারা বাংলাদেশে একটি ইতিহাস বলে মনে করেন অনেকে।
৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৪নং ওয়ার্ডের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশা সদ্য জয়ী জাহাঙ্গীর আলম এলাকার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবেন। এলাকার সমস্যার কথা জেলা পরিষদের বোর্ড সভায় তুলে ধরবেন। আর বরাদ্ধ যতাযত বান্তবায়ন করবেন।
Posted ৯:০৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৪ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta