মো: ফারুক,পেকুয়া(১৭ মে) :: পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সবজীবন পাড়ার জালাল আহমদের পুত্র নুরুল হোসাইন। জড়িত রয়েছেন পাসপোর্ট ও পুলিশ ছাড়পত্রের দালালীতে। আর এ দালালী পেশাতেই তার রয়েছে একটি সিন্ডিকেট।
হয়রানি করেন নিরহ জনগন থেকে শুরু করে আপমর জনতা। তার হয়রানির শিকার হয়ে কেউ হচ্ছেন নিঃস্ব আর কেউবা হারাচ্ছেন অর্থ আর কেউবা হচ্ছেন পথের ফকির। এছাড়াও তার প্রতারণার শিকার হয়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মোখিন হন বিদেশ যাত্রী ও প্রবাসীরা।
ডিএসবি কর্মকর্তা, ওসি, এসপিকে বিক্রি করে দেন কথায় কথায়। রয়েছে নামে বেনামে আইনজীবিসহ পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সীল। ঘরে বসে পাসপোর্ট ফাইলের সব ডকোমেন্টে সত্যায়িত করে দেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে ভয় দেখান মামলা আর পুলিশের। যার কারণে ভয়ে মুখ খুলেননা অনেক ভুক্তভোগি। সর্বশেষ হয়রানির শিকার এক ভুক্তভোগির তথ্য প্রমাণ নিয়ে এলাকাবাসীরা তাকে পাকড়াও করে রাখলে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর তথ্য।
কেন তিনি এতো বেপরোয়া? অনুসন্ধাণে পাওয়া গেছে ভয়ংকর তথ্য।
———————————
জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের চৈরভাংগা এলাকার আহমদ হোসেনের পুত্র নুরুল ইসলাম প্রকাশ বাবুল। সংসারে ভাগ্যের চাকা ফিরিয়ে আনার উদ্দ্যেশে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করান। এরপর ভিসার জন্য লাগবে পুলিশি ছাড়পত্র। তা করতে গেলেন কক্সবাজার। সরকারের নির্ধারিত ফি দিয়ে ব্যাংক থেকে পে-অর্ডার করালেন। ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পথে তার সাথে সাক্ষাত করেন পাসপোর্ট দালাল নুরুল হোসাইন। জিজ্ঞেস করেন কি জন্য পে-অর্ডার করালেন।
তিনি বললেন একটি পুলিশি ছাড়পত্রের জন্য। এ সময় নুরুল হোসাইন বলেন, শুধু পে-অর্ডার করালে হবেনা। কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে টাকা দিতে হবে। না হলে এখান থেকে পেকুয়ায় তদন্তের জন্য যাবেনা। এক সময় পাসপোর্ট অফিসের তানবির নামের এক কর্মকর্তার কথা বলে নিলেন ৩৫শত টাকা। ফিরত দিলেন ২শ টাকা। বললেন আর কোন টাকা দেওয়া লাগবেনা। সে নিশ্চিত হয়ে চলে আসলেন পেকুয়ায়। তিন চার দিন পর দালাল নুরুল হোসাইন তাকে ফোন করে বলেন থানায় তার নামে মামলা আছে তাই ওই টাকা দিয়ে তদন্ত হবেনা।
সে মামলা নাই বললেও এক পর্যায়ে থানার কম্পিউটার অপারেটর মিজানের বরাত দিয়ে তার কাছ থেকে ১০হাজার টাকা দাবী করেন। পরবর্তিতে মিজানসহ পেকুয়া চৌমহুনীতে এসে আবারো ১০হাজার টাকা চাইলে তিনি ৪হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু ওই ৪হাজার টাকা না নিয়ে তারা দু’জন বলেন আদালত থেকে মামলা নাই এরকম ডকুমেন্ট এনে দিতে পারলে কোন টাকা লাগবেনা।
পরে বাধ্য হয়ে সে মাননীয় আদালতের দারস্ত হয়। আদালত থেকে মামলা নাই ডকুমেন্ট আনার পর দালাল নুরুল হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করে সে। পরে ওই দালাল থানার কম্পিউটার মিজানের সাথে দেখা করার জন্য বলেন। এ ডকুমেন্ট দেওয়ার পরও মিজান তার কাছ থেকে কৌশলে নিয়ে নেই ৪হাজার টাকা। এরপর ওই তদন্ত রিপোর্ট পেকুয়া থেকে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার পর তিনি আনতে কক্সবাজার যান। তানবির নামের ওই কর্মকর্তা আবারো টাকার জন্য আটকিয়ে দিলেন তাকে।
সর্বশেষ ১হাজার টাকার বিনিময়ে ওই রিপোর্ট নিয়ে তিনি পেকুয়ায় চলে আসেন। এরপর নুরুল হোসাইনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে অনেক খোঁজাখুজি করেও নাঘাল না পাওয়ায় মোঠোফোনে কল দেন। মোঠোফোনও রিসিভ না করায় কৌশল অবলম্বন করেন তারা। রমিজ নামের আরেকজন তাকে পাসপোর্ট বানানোর কথা বলে পেকুয়া বাজারে নিয়ে আসেন।
এ সময় আগে থেকে স্থানীয়রা তাকে পাকড়াও করার জন্য তৈরি ছিলেন। ওই জায়গায় আসলে ৫/৬ জন ভুক্তভোগি তাকে ঘিরে ধরে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে পেলে। সে সময় ভুক্তভোগিদের টাকা ফেরত দিবে মর্মে অঙ্গিকার করেন এবং নুরুল ইসলামকে ৮শ টাকা ফেরত দেন। এ সময় স্থানীয়রা তার কাছ থেকে জসিম উদ্দিন নামের এক আইনজীবির সীল উদ্ধার করলেও পরে একজনের কাজ থেকে তা কেড়ে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এর আগে স্থানীয়রা বিষয়টি কয়েকজন সাংবাদিককে জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দালাল নুরুল হোসাইনের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাই। তিনি বলেন, পাসপোর্ট ও পুলিশি ছাড়পত্রের জন্য টাকা দিতে হয়। তিনি অকপটে বলেন পুলিশি ছাড়পত্রের জন্য পেকুয়া থানার ওসিকে ৩হাজার, থানার মুন্সি (কম্পিউটার অপারেটর) মিজানকে ১হাজার, কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে ৩৩শ টাকা দিতে হয়। এছাড়াও মামলা থাকলে আরো বেশি দিতে হয়। কেন ভুক্তভোগিকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে গেলেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন থানার মুন্সি তাকে বলতে বলেছে সেজন্য বলেছেন।
পেকুয়া থানার ওসিকে কেন টাকা দিতে হয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ওসি জহিরুল ইসলাম খান ৩হাজার টাকা ছাড়া পুলিশি ছাড়পত্রে সাক্ষর করেন না। তার সব বক্তব্য এ প্রতিনিধির কাছে রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মো: রিদুয়ানুল হক দুলাল ও সাদ্দাম হোছেন নামের দু’জন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার কম্পিউটার অপারেটর মিজানুর রহমান এর মোঠোফোনে যোগাযোগ করি। তাকে পুরো বিষয়টা জানায়। তিনি কোন ধরণের উত্তর না দিয়ে কক্সবাজারে আছেন এবং ব্যস্ত আছেন বলেন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে অফিসার ইনচার্জ (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম খান এর সরকারী মোঠোফোনে যোযোগাযোগ করলে অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার রিসিভ করে বলেন, ওসি প্রশাসন ছুটিতে রয়েছে। যার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Posted ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta