মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(২০ জানুয়ারি) :: আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া কার্যক্রম। কিন্তু এই প্রক্রিয়া যাতে ব্যর্থ হয় সেজন্য বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চক্রটি রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফেরত না যায় সেজন্য ক্যাম্পে বিভিন্ন অপকর্ম, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে।
এই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে রোহিঙ্গা নেতা মো. ইউসুফকে (৪৬)। এ সময় বালুখালী ক্যাম্পের হেড মাঝি আরিফুল্লাহকে লক্ষ্য করে গুলি করলে ওই গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে তার বড় ভাই মৌলভী আজিমুল্লাহর শরীরে বিদ্ধ হয়। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ আলম নামের এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল শনিবার সকালে কক্সবাজার মর্গে প্রেরণ করেছে।
ঘটনাস্থল থাইংখালী তাজনিমারখোলা ডি-ব্লক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বললেও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তারা কোন তথ্য দেয়নি।
এ ব্যাপারে ক্যাম্পের হেড মাঝি রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ ক্যাম্পে ৮০ জন মাঝির মাধ্যমে ৬৭ হাজার রোহিঙ্গার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ইউসুফ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। কিছু বলতে চাননি।
অনেকক্ষণ পর তিনি জানান, নিহত ইউসুফ মিয়ানমারের মংডু বলি বাজার ধুনহাই গ্রামের হুক্কাট্টা (চেয়ারম্যান) ছিলেন। তিনি মিয়ানমারে ফিরে যেতে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলী আরো জানান, প্রতিপক্ষরা শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্রই ইউসুফকে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে এমন শত শত দালালচক্র (বর্মী এজেন্ট) ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। ওই দালালচক্র মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছে ক্যাম্পে কর্মরত কিছু এনজিও।
তিনি আরো জানান, মিয়ানমার প্রশাসনের অনুগত ওই চক্রটি বিভিন্ন অনৈতিক কাজের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি ওইসব দালালদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবি জানান।
১৯৯১ সাল থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন জাফর আলম (৫৫)। ওই রোহিঙ্গা নেতা সাংবাদিকদের জানান, আরসা’র ধোঁয়া তুলে মিয়ানমার সরকারের দালালচক্র বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।
নিরীহ রোহিঙ্গাদের মতো তারাও বানিয়ে বানিয়ে নির্যাতনের ঘটনা প্রচার করছে এবং প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পের পরিবেশ যাতে বিনষ্ট হয় এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে থমকে যায় সেজন্য মিয়ানমারের ওই দালাল চক্রটি এখন ক্যাম্পে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি এও বলেন, ওই চক্রের সদস্যদের নাম প্রকাশ করলে তাকে হত্যা করা হবে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে রোহিঙ্গারা ওই চক্রের নাম পরিচয় প্রকাশ করছে না।
কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, প্রত্যাবাসন বিরোধী কিছু রোহিঙ্গা তাত্ক্ষণিকভাবে জড়ো হয়ে নিমিশেই উধাও হয়ে যায়। তবে তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি কুতুপালং মধুরছড়া লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ও মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আবুল কাশেমের ছেলে মমতাজ মিয়া (৩৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা মৌলভী আরিফুল্লাহকে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বালুখালী ময়নার ঘোনা এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তলসহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আলমকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ড ও অস্ত্র আইনে ২টি মামলার প্রস্তুতি চলছে।