কক্সবাংলা ডটকম(১৪ জানুয়ারি) :: আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে দেশকে আরেক দফা সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে- আশঙ্কা করে ফের সংলাপ ডাকার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
অবশ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, পৃথিবীর সব দেশেই নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা। তবে প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার পক্ষেও মত দিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানান, সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে তার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব দলকে সেই নির্বাচনে পেতে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভোট বর্জন ও সহিংসতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ‘কোনো কোনো মহলের’ অরাজকতা সৃষ্টির ‘অপচেষ্টার’ বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করেন।
সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ওই ভাষণকে খুবই অস্পষ্ট, ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিদ্যমান সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তুলেছে বলেও মন্তব্য করেছে দলটি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে জাতি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা, জাতীয় সংকট নিরসনের স্পষ্ট রূপরেখা এবং জনগণের উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য বিভ্রান্তির বেড়াজালমুক্ত কর্ম পদক্ষেপ আশা করেছিল। কিন্তু তার ভাষণে এসবের কিছুই নেই। তিনি জাতিকে হতাশ, বিস্ময়-বিমূঢ় এবং উদ্বিগ্ন করে তুলেছেন।
বিএনপির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন নয়, আগামী প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে জনগণ খুশি হয়েছে। কিন্তু অখুশি হয়েছে বিএনপি। একাদশ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। আগামী দিনে পরিস্থিতির প্রয়োজনে হলে সংলাপ হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। কোনো হস্তক্ষেপ নয়, সরকার নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে দলের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংবিধান মেনে নির্বাচনীকালীন সরকারের অধীনে নির্ধারিত সময়েই দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সব দল শান্তিপূর্ণভাবে এ নির্বাচনে অংশ নেবে। এতে বিএনপিও অংশ নেবে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে সহযোগিতা করা। নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক বেশি সতর্ক রয়েছে। এবার আর আগেরবারের মতো জ্বালাও-পোড়াও করে কেউ সফল হতে পারবে না।
সংলাপ ডাকার আহ্বান বিএনপির :
জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে যে অস্পষ্টতা, ধোঁয়াশা এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার জন্য সরকারকে ফের সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মতে, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই। নির্বাচনকালীন সরকার কেবল রুটিন ওয়ার্ক করবে- এমন কিছু উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিকভাবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে নতুন কিছু ভেবে থাকেন, তাহলে তার উচিত হবে এ নিয়ে সব স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেয়া। একটি আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে অর্থবহ সমাধানে আসা সম্ভব। সব দল ও সুশীল সমাজের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন :
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অস্পষ্ট বা ধোঁয়াশার কিছু নেই বরং বিশ্বের প্রতিটি দেশে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই বিষয়টিই স্পষ্ট হয়েছে বলে মতপ্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার সিস্টেম ফলো করি। সেখানেও একই ব্যবস্থায় নির্বাচন হয়।
সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং পরবর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত বর্তমান সরকার দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করবে। আর নির্বাচন পরিচালনার কাজ করবে নির্বাচন কমিশন। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের উচিত ইসিকে সহযোগিতা করা।
অবশ্য এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ বক্তব্য আমরা অতীতেও শুনেছি। ২০০৬ সালে খালেদা জিয়াও বলেছেন। এখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলছেন। কিন্তু আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর ওয়ান ইলেভেন এসেছিল। আবারো আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। সব রাজনৈতিক দলের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
Posted ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta